মিথ্যাচারের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের অবদান মুছে ফেলা যাবে না: মির্জা ফখরুল

রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণীর এই অনুষ্ঠান হয়

মিথ্যাচারের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের অবদান মুছে ফেলা যাবে না: মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, ঢাকা: মিথ্যাচারের মাধ্যমে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের অবদানকে মুছে ফেলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শুক্রবার সকালে এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা এই কথাও ভুলতে পারি না যে, শেখ মুজিবুর রহমান যে লাশ তার বাড়ির সিঁড়িতে পড়ে ছিলো …. তারপরে আওয়ামী লীগের নেতারা সরকার তৈরি করে সেই সরকার গঠন করেছিলেন। যারা আজকে মিথ্যা প্রচার চালায় যে এখানে জিয়াউর রহমান সাহেব জড়িত ছিলেন তাদের একটাই উদ্দেশ্য জিয়াউর রহমানকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং তাকে একেবারে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা। সেটা সম্ভব নয়। 

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে কত বছর হয়ে গেলো জিয়াউর রহমানের নাম কি মুছে ফেলতে পেরেছে? পারে নাই, পারে না। যে সমস্ত মানুষ, ক্ষণজন্মা মানুষ যারা ইতিহাস তৈরি করে, যারা একটা রাষ্ট্রের জন্মের জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করে, যারা জনগণের কল্যাণের জন্য একটা রাষ্ট্র নির্মাণের সমস্ত ভিত্তি তৈরি করে তাদের এভাবে মুছে ফেলা যায় না, ভুলিয়ে দেয়া যায় না। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনার সাথে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন তাকে মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, এখন ওরা এমন সব অলিক গল্প ফাঁদে বলে যে, শহীদ জিয়াউর রহমান প্রয়াত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এটা হচ্ছে শুধু ইতিহাসকে বিকৃত করা, যে আন্দোলন শুরু হয়েছে জনগণের গণতন্ত্র ফেরাতে সেই আন্দোলনকে বিপথে পরিচালিত করা। তখন তো বিএনপির জন্মই হয়নি। শহীদ জিয়াউর রহমান তখন সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন না।তিনি ছিলেন ডেপুটি প্রধান। যে সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন অর্থাৎ সেনা বাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান বিমান বাহিনী প্রধান তারা ওই দুর্ঘটনার পরে যখন খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছিলো তখন তারা সবাই স্যালুট করে খন্দকার মোশতাকে প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করেছিলো।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণীর এই অনুষ্ঠান হয়। এতে তিন পর্বে মোট ৬৯জনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে জিহাদ ইবনে ইমরান, মোস্তাকিম হাসান, হুমায়রা জান্নাত প্রার্থনা, মাধ্যমিক স্তরে এফতেখার এনাম নাহিদ, তালাম মাহমুদ নিবাস, আবু হাসান নাহিয়ান এবং উচ্চতর ও উন্মুক্ত স্তরে কানিজ ফাতেমা কনিক, আজম ইকবাল শিপন ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল নোমান নিজ নিজ বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন।

রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সঞ্চালনায় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ইসরাফিল প্রামাণিক, শামসুজ্জামান মেহেদী প্রমুখ শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ দেশটাকে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পরে বলা যেতে পারে এককথায় দুঃশাসনের রাজ্য তৈরি করেছিলো। তারা তাদের মতো করে এদেশকে একটা লুটপাটের রাজত্ব তৈরি করেছিলো। একেবারে পর এক তাদের নিজেদের তৈরি সংবিধান ভেঙে-চুরে জরুরি অবস্থা, বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং সবশেষে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলো।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান সিপাহী-জনতার বিপ্লবে যখন তাকে দায়িত্ব দেয়া হলো তখন তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে আওয়ামী লীগ করেছিলো একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, সমস্ত পত্রিকার বন্ধ, মানুষের অধিকার হরণ। আর জিয়াউর রহমান করলেন বহুদলীয় গণতন্ত্র… সবাই রাজনীতি করবে, সংবাদপত্রের ওপর বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হবে, মানুষ গণতান্ত্রিকভাবে তাদের কথাগুলো বলতে পারবে, মুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।

সাড়ে তিন বছরে জিয়াউর রহমানের আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের নানা পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশ গভীর সংকটে আছে। এই সংকট থেকে মুক্তির পথ আমাদেরকে দেখান শহীদ প্রেসিডেন্ট নেতা জিয়াউর রহমান। কারণ ১৯৭১ সালে যখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে, এমনকি যারা তখন পাকিস্তান সরকার ইয়াহিয়া খানের সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছিলেন… কিভাবে একটা আপোষরফা করা যায়, ফেডারেশন করা যায় কিনা সেই কথাগুলো বলছিলো। সেই সময়ে জিয়াউর রহমান বুকে সাহস নিয়ে, বল নিয়ে ‍মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন-এটা একটা বিরল ব্যাপারে, কোনো মানুষের পক্ষে এটা সম্ভব না। 

মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যদিকে তিনি (জিয়াউর রহমান) তার মেধা, দক্ষতা, সততা দিয়ে সাড়ে তিন বছরেরর মধ্যে বাংলাদেশেকে হেনরি কিসিঞ্জার বলছিলো বোটমলেস বাসকেট… সেটাকে তিনি তুলে দিয়ে এসে সেটাকে একটা সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ তৈরি করেছিলেন। তার এই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার সময়ে বলা হয়েছে যে সেটা ইমার্জিং টাইগার… আর এখন এটাকে বলা হচ্ছে ফ্যাসিবাদী লুটেরা এবং জনগণের সম্পদ হরণকারী একটা সরকার। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।