মু* কবিরের উপন্যাসে আব্বা হুজুরের শাসনকাল

মু* কবিরের উপন্যাসে আব্বা হুজুরের শাসনকাল
প্রথম নিউজ, ডেস্ক: [ এই উপন্যাসে বর্ণিত ঘটনার সময়সীমা চুয়াত্তরের নভেম্বর থেকে পঁচাত্তরের জানুয়ারী পর্যন্ত বাড়াতে হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় মনে করে কিছু অংশ বাদও দিয়েছি। এতে উপন্যাসের আঙ্গিকের কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা সমালােচকরা বলবেন, আমি বিশ্বস্ত থাকার চেষ্টা করেছি ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতি। 'বিচিত্রা'য় এটি প্রকাশিত হবার পর বিভিন্ন মহলে প্রশংসা ও নিন্দার ঝড় বয়ে গিয়েছিলাে। অনেকে ব্যাখ্যাও চেয়েছিলেন। একটি বিষয়ে বলা দরকার, বিচিত্রায় তখন বিশেষ কারণে উল্লেখ করতে হয়েছিলাে 'উপন্যাসে বর্ণিত চরিত্রগুলাে কাল্পনিক' — আসলে তা নয়। তবে কারো প্রকৃত নাম উল্লেখ করিনি এ কারণে যে, তারা ছিলেন একটি গােপন বিপ্লবী দলের সদস্য। তাদের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করাটা হতো রাজনৈতিক অসততা। একই কারণে আসল জায়গার নামও গােপন রাখতে হয়েছে। যাদের প্রকৃত নাম ব্যবহার করা হয়েছে তারা কেউ তখন গােপন কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। উপন্যাসে পাদটিকা ব্যবহার অবাঞ্ছিত হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাঠককে সাহায্য করার জন্য তা করতে হয়েছে। যে রাজনীতি এ উপন্যাসের প্রধান বিষয় তার সব দিক আলােচনা সম্ভব হয়নি। কারণ সব সময় মনে রাখতে হয়েছে, আমি উপন্যাস লিখছি, প্রবন্ধ নয়। — শা. ক. / জানুয়ারি, ১৯৮৫ ] "... 'কি সাংঘাতিক ব্যাপার বলেন তো।' লােকটা খবরের কাগজ এক পাশে ভাঁজ করে রেখে সরাসরি রাজুর দিকে তাকাল। দীপু আড়চোখে একবার রাজুকে দেখে বই পড়ায় মন দিলাে। অল্প দূরে বসা একজন প্রৌঢ় যাত্রী মন্তব্য করলেন, 'দেশ একেবারে রসাতলে গেছে। রােজ খবরের কাগজে ছিনতাই, খুন, দুর্ঘটনা লেগেই আছে। আর করছে সব বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা।' রাজুদের পাশে দুজন বুড়ো বসেছিলেন। এতক্ষণ তাঁরা নিজেদের সুখের অতীত নিয়ে আলােচনা করছিলেন। কথা থেকে বােঝা যায় একজন কলেজের অধ্যাপক, অপরজন হোমিওপ্যাথ ডাক্তার। প্রৌঢ় ভদ্রলােকের কথা শুনে বুড়াে অধ্যাপক বললেন, 'বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা কেন এসব করছে, কারা ওদের এপথে ঠেলে দিয়েছে — খবরের কাগজে কিন্তু সেসব পাওয়া যাবে না। কই যুদ্ধের আগে তো এসব ছিল না!' ডাক্তার বললেন, 'দেশ স্বাধীন হলে কেউ আর গেরিলাদের চায় না। তখন ওদের বাড়তি উৎপাত মনে হয়। দেশ যারা চালায় তারাই এদের ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। এ আর নতুন কথা কি!'
অধ্যাপক মাথা নাড়লেন, 'না, সব দেশের কথা এভাবে বলতে পারাে না। রাশিয়া দেখাে, চীন দেখাে, ভিয়েতনমি, কিউবা দেখাে — সেসব দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কিভাবে দেশ গড়ার কাজে লাগিয়ে ছিল। তার জন্য বেশি ইতিহাস ঘাটতে হবে না। মুজিবকে আমি কমিউনিষ্ট হতে বলি না। মুজিব যদি সিহানুক বা ফিদেল কাস্ট্রোর মতােও হতেন। তাহলেও দেশ এতটা রসাতলে যেতো না। আমাদের গােটা একটা জেনারেশনও এভাবে শেষ হয়ে যেতো না।' দুজন বয়স্ক লোক সমানে কথা বলে যেতে লাগলেন। টিকটিকি দুটো একটু হতাশ হল। রােগা, শুকনাে চেহারা, চোখে পুরু লেন্সের চশমা পরা অধ্যাপক তখন বলছিলেন — আজকাল তাে মুজিব জোর গলায় বলতে শুরু করেছেন বিপ্লবের পর সব দেশেই লােক না খেয়ে মরেছে। সব দেশ মানে তাে রাশিয়া। রাশিয়ায় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল ঠিকই। ওদের তাে আমাদের মতাে ন' মাসে বিপ্লব হয়নি। বছরকে বছর সেখানকার মানুষ লড়াই করেছে। রাশিয়ার দুর্ভিক্ষের সময়ের একটা ঘটনা বলি। খাদ্যের দাবিতে একদিন একদল লোক খোদ লেনিনকেই ঘেরাও করেছিল। লেনিন তখন মাত্র খেতে বসেছেন। খাবার হাতেই উঠে এলেন। বিকুব্ধ জনতাকে বললেন, সারাদিনে আমার রেশন এক টুকরাে কালাে রুটি আর চা। তােমাদেরও আমি এতটুকু দিচ্ছি। এর বেশি যদি চাও, যাৱা গুদামে খাবার জমিয়ে পঁচাচ্ছে সেই কুলাকদের গুদাম থেকে কেড়ে নাও। ওগুলোও তোমাদের খাবার। এই হলো রাশিয়া আর তার নেতা লেনিন। আমাদের নেতাদের দেখাে, একেকটা শুয়ােরের মতাে মােটা হচ্ছে আর আপ্তবাক্য ছাড়ছে।'
খবরের কাগজের শ্রোতারা আগ্রহ নিয়ে অধ্যাপকের কথা শুনছিল। বুড়া ডাক্তার বললেন, ‘মুরুব্বিরা একটা কথা হামেশা বলতেন, আপনি আচরি পরকে শেখাও। তুমি অপরকে বলবে কৃচ্ছতাসাধন করাে, আর নিজে ভোগ বিলাসে দিন কাটাবে — কে তােমার কথা শুনতে যাবে বলাে?'
রাজু দীপুর দিকে তাকিয়ে দেখল ও কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। টিকটিকি দুটো বুড়োদের কথায় যথেষ্ট বিরক্ত হচ্ছিল। একজন অধ্যাপককে জিজ্ঞেস করল, 'আপনি কি স্কুলে পড়ান?'
‘স্কুলে নয় বাবা, কলেজে পড়াতাম। গত বছর ছাত্রদের পরীক্ষায় নকল করতে দেইনি বলে চাকরি গেছে। ওরা সরকারী দল করতাে কিনা তাই।' অধ্যাপক একটু থেমে আবার বললেন, 'দেশের যা অবস্থা ভাবছি কাজ পেলে কোথাও ঢুকে পড়বে। প্রাইমারী স্কুলেও আপত্তি নেই।
ডাক্তার বললেন, 'দেশের কথা আর বলাে না। আত্মহত্যা করলে আল্লাহ নারাজ হবেন, তাই মরার মতাে বেঁচে আছি। চোখের সামনে ছেলে-মেয়েরা খেতে না পেয়ে ধুকে ধুকে মরবে — আর সহা হয় না।'
যে টিকটিকিটা খবরের কাগজ পড়ছিলো সে সঙ্গীর মনোেযােগ আকর্ষণ করে জোরে জোরে খবরের কাগজ পড়া শুরু করে দিল। কোথায় যেন একটা গরুর দুই মাথাওয়ালা বাচ্চা হয়েছে — খবরটা কিছুদূর পড়তেই বুড়ো অধ্যাপক বিরক্ত হয়ে তাকে থামিয়ে দিলেন — 'এসব কাগজ আর পােড়ো না বাপু। মানুষ মরে গ্রামকে গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছে সেসব খবর লিখবে না, যতসব ছাইপাঁশ দিয়ে পাতা ভরাবে। সাংবাদিকরা পর্যন্ত করাপ্ট হয়ে গেছে।' জানালা দিয়ে পলা বাড়িয়ে থু থু ফেলে অধ্যাপক আবার বললেন, 'আজকাল মন্ত্রীদের ছবি ছেপে কাগজঅলারা কূল পায় না। জায়গা থাকলে ছাপে কার কটা মাথা এইসব হাবিজাবি।'
ডাক্তার অপরাধীর মতাে মুখ করে বললেন, 'আমার এক ছেলে পত্রিকায় কাজ করে।
ও বলে, একটা সত্য খবরের জন্য একশটা কৈফিয়ৎ দিতে হয়; ওরা নিজেরাই জানে না কোনটা খবর আর কোনটা খবর নয়। বলে, ছেলেপুলে নিয়ে ঘর করি, ঘাড়ে তাে মাথা একটাই।' লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডাক্তার ভুলে গেলেন, তিনি কোন প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন।
... ট্রেনের মতাে বাসেও একই আলোচনা — জিনিসপত্রের দাম, দুর্ভিক্ষ, চোরাচালান এইসব। কুমিল্লার দুর্ভিক্ষে মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম। সম্ভবত মৃত্যুর হার কম বলেই ভিক্ষুকের সংখ্যা বেশি। চলন্ত বাসেও কয়েকজন ভিক্ষে করছে। রাহেলা বাস থেকে নামার পর ওর সাজগােজ দেখে ভিখিরীরা হামলে পড়েছিল। দুঃখের ভেতরও পূরবীর হাসি পেল। কলেজে থাকতে পড়া মানিক বন্দোপাধ্যায়ের একটি গল্পের কথা মনে পড়ল — 'কেড়ে খায়নি কেন?' এই মানুষগুলাে যেদিন ভিক্ষে না চেয়ে গ্রাম থেকে লাখে লাখে শহরে ছুটে যাবে সব কিছু কেড়ে নেয়ার জন্য তখন কি হবে? বেশি দূর ভাবতে পারলাে না পূরবী।
বাসের একজন যাত্রী, সম্ভবত আওয়ামী লীগের কোন পাতিনেতা হবে, পরনে পায়জামা পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবির ওপর মুজিব কোট, তার ওপর উড়নির মতো গলায় চাদর ঝােলানাে। স্থূলবপু লোকটা দুজনের জায়গা দখল করে পান চিবােতে চিবােতে গল্প করছিল। আশে পাশে অনুগত কয়েকজন গােগ্রাসে সেই গল্প গিলছিল। মুখের ভেতর পানের পিকটুকু অদ্ভুত কৌশলে জমিয়ে রেখে লােকটা বলল, 'বুঝলা লাতুর বাপ, কাফনের কাপড় কিনতে কিনতেই আমি শ্যাষ হইলাম। ফকিরগুলা মরনের আর জায়গাও পায় না। সব আইসা মরে আমার এলাকায়। গত কাইলও চাইরটা মরছে ভেদবমি হইয়া।'
যাকে উদ্দেশ্য করে বলা, থুতনিতে ছাগুলে দাড়িওয়ালা টাউট ধরনের লােকটা তােষামােদের সুরে বলল, 'আপনের এলাকায় মরলে তাে কাফনের কাপড় পায়। আমগো এলাকায় মরলে কাকন আর কপালে জুটে না, হিয়াল কুত্তায় কামড়াইয়া খায়। আল্লার মর্জি, যাগাে কপালে কাফনের কাপড় লেখা আছে হেরা আপনের এলাকায় গিয়া মরে। আল্লার নেক বান্দারাই কাফন পায়।'
ঢক করে পানের পিক গিলে পাতিনেতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, 'হ, সবই আল্লার মর্জি। আমি আমার কাফনের কাপড় গতবছর মক্কা শরিফ থনে আনছি। আমার চোখের সামনে কেউ মরলে বিনা কাফনে আমি তাগোরে কবর দিই না। এম পি সাবরে কইছিলাম রিলিফে কিছু কাফনের কাপড় দিতে। তিনি পাঠাইলেন চাইরশ মন গম। অদ্দেক গম বেইচা আমি কাফনের কাপড় কিনছি। বাকিটা দিছি যাগাে একেবারে না দিলে চলে না তাগােরে । তোমরাই কও কামডা আমি ভালা করি নাই?'
লাতুর বাপ বিগলিত কণ্ঠে বলল, 'কি যে কন হুজুর! আপনের দয়াতেই আমরা চাইরটা গম পাইলাম। না ওইলে বৌ বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় নামন লাগতাে।'
বাসের মাঝখানে রাখা একটা বস্তুর উপর হতশ্রী এক বুড়ি বসেছিল। লাতুর বাপের কথা শেষ না হতেই — আমার শামসু গেদু কই গেলিরে'— বলে বুড়ি ডুকরে কেঁদে উঠল। বাসের লােকজন হঠাৎ এৱকম বুকফাটা কান্নায় চমকে উঠল। 'আমার শামসুরে, আমার গেদুরে' — বলে বুড়ি সমানে কাঁদতে লাগল।
পাতিনেতা ভুরু কুঁচকে বলল, 'এ কি জ্বালাতন বাসের মইদ্যে কওতাে? বাস আলাগাে কান্ডজ্ঞান কিছু নাই?'
সঙ্গে সঙ্গে লাতুর বাপ বুড়িকে ধমক দিল — 'এই বুড়ি থাম! এত চিল্লাস ক্যান!'
ধমক খেয়ে গলা নামিয়ে বিলাপের সুরে কাঁদতে কাঁদতে বুড়ি যা বলল, তার সারমর্ম হচ্ছে — বুড়ির নাতি দুটো মরেছে কদিন আগে। কবর দেয়ার সামর্থ ছিল না বলে ওদের নদীতে ভাসিয়ে দিতে হয়েছে।
রাজুদের পাশে বসা রুক্ষ চেহারার মাঝারি বয়সের একজন, চোখে পুরু লেন্সের চশমা — বুড়িকে বললেন, 'ঠিক আছে, তুমি হুজুরের ইউনিয়নে চলে যেও, তােমার নাতির কাফন জোটেনি তো কি হয়েছে, হুজুরের দয়ায় তােমার জন্য কাফনের কাপড়ের অভাব হবে না।'
পাতিনেতা কটমট করে মন্তব্যকারীর দিকে তাকিয়ে বলল, 'কোন জায়গার বেয়াদপ, কথা কওন শিখে নাই।'
ভদ্রলোকের পরনে আধময়লা পাজামা-পাঞ্জাবী, চুলগুলো রুক্ষ, দাড়ি কামানাে হয়নি চার পাঁচ দিন হবে; কোটরে বসা চোখ দুটো জ্বল জ্বল করছিল। পাতিনেতার দিকে সরাসরি তাকিয়ে বললেন, 'আমি ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াই। তোমার মত বদমাশদের হাতের কাছে পেলে শায়েস্তা করি। ফাজলামি করার জায়গা পাওনি?'
পাতিনেতা হুঙ্কার ছেড়ে বলল, 'কি এত বড় কথা! ড্রাইভার এই লােকটারে অক্ষণি বাস থেইকা নামাইয়া দাও।'
এতক্ষণ বাসের অন্যানা যাত্রীরা পাতিনেতার ব্যবহারে যথেষ্ট বিরক্তি বােধ করেছিল। ড্রাইভার বাসের গতি কমাতেই জাফর ধমক দিয়ে বলল, 'ড্রাইভার, বাস থামাবেন না।' তারপর পাতিনেতার দিকে তাকিয়ে বলল, 'আপনি অনেক বাড়াবাড়ি করছেন। আর একটা বাজে কথা বললে, আপনাকেই বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেবাে।'
বাসের যাত্রীদের ভেতর গুঞ্জন উঠল। একজন মন্তব্য করল, 'মুজিব কোট গায়ে দিলে সবাই ধরাকে সরা জ্ঞান করে।'
'তুইলা ফালাইয়া দিলেই হয়।'
'মক্কাশরীফের কাফন ওয়ালারে জিগান, দেশে এখন চাইলের সের কত?'
এমনি সব মন্তব্যে মুখর হল গােটা বাস। ড্রাইভার বাস থামাতে গিয়েও পারল না। যাত্রীরা হইচই করে উঠল। পাতিনেতা মুখ কালাে করে জানালা দিয়ে ঘন ঘন পানের পিক ফেলছিল। দীপু জাফরের পাশে বসেছিল। মৃদু হেসে জাফরের হাতের উপর মৃদু চাপ দিল। জাফর অপ্রস্তুত হয়ে তাকাতে দীপু চাপা গলায় বলল, 'সবাই বীরপুরুষকে তাকিয়ে দেখছে।'
জাফর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল, 'বাসের ভেতর না হলে লােকটাকে আমি নির্ঘাত খুন করতাম'॥"
— শাহরিয়ার কবির / ওদের জানিয়ে দাও ॥ [ অনন্যা - জুলাই, ১৯৯৩ (প্রথম প্রকাশ - জানুয়ারি, ১৯৮৫) । পৃ: ৫৫-৫৭ / ৭৩-৭৪ ]
লেখক : মুজতবা খন্দকার । সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক (ফেইসবুক ওয়াল থেকে)

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomn