ভিসিকে খাবার দিতে গিয়ে বাধার মুখে শাবিপ্রবির প্রক্টর
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনের সামনে মানবপ্রাচীর তৈরি করে রেখেছেন।
প্রথম নিউজ, সিলেট : সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনের সামনে মানবপ্রাচীর তৈরি করে রেখেছেন। ভিসির জন্য খাবার নিয়ে শিক্ষকরা তার বাসভবনে ঢুকতে চাইলেও তাদের বাধা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে ভিসি বাসভবনে খাবার নিয়ে যেতে চান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আলমগীর কবীরসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে ফিরে যান তারা। শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে প্রক্টর আলমগীর কবীর বলেন, বাসভবনে ভিসির সাথে আরো কয়েকজন শিক্ষক এবং কর্মকর্তা রয়েছেন। সেখানে গতকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই। পানি ও খাবার সঙ্কট রয়েছে। তারা কষ্ট করছেন। এছাড়াও ভিসি অসুস্থ। আমরা জানি না তার কী অবস্থা। তার জন্য আমরা ওষুধ নিয়ে যেতে চাই। সেখানে একজন শিক্ষকও অসুস্থ। আমরা তাকে দেখতে যেতে চাই, যেন প্রয়োজনে আমরা তার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারি।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, যদি কেউ এর ভেতর অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে আমরা গিয়ে তার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিব। যদি খাবার প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে দিব। পরে শিক্ষকরা ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে খাবার নিয়েই ফিরে যান। এর আগে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভিসি বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন বিকেল থেকেই ভিসি বাসভবনের সামনে মানবপ্রাচীর তৈরি করে রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, গত রোববার বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে ভিসিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ ভিসিকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
এ ঘটনায় দুইশ থেকে তিনশ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে- আন্দোলনরত দুইশ-তিনশ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ধরে টানাটাানি করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ে। এছাড়া পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় ১৪ জানুয়ারি দিবাগত রাতে। তখন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, হলে নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে তারা বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদকে কল করেন। প্রভোস্টকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘বের হয়ে গেলে যাও, কোথায় যাবে? আমার ঠেকা পড়েনি।’ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জরুরি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘কীসের জরুরি? কেউ তো আর মারা যায়নি।’
পরে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রীরা। এরই মধ্যে ১৬ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। তার আগে বিকেলে তিন দফা দাবি মেনে না নেয়ায় ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। ভিসিকে পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সাথে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। তবে ওই নির্দেশনা অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ভিসির পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়।
ভিসির পদত্যাগের দাবিতে গত ১৯ জানুয়ারি বিকেল ৩টা থেকে তার বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই অসুস্থ। এ অবস্থার মধ্যেও কর্মসূচি চালিয়ে যেতে অনড় তারা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা চলার মধ্যেই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: