ভোলার শান্তির হাটে কথিত ইপিজেড নামে বেসরকারী ও সরকারী জমি দখল
এলাকা বাসিকে ভুল বুঝিয়ে মেঘনা থেকে বালু লুট করে ভরাট
প্রথম নিউজ, ভোলা প্রতিনিধিঃ ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর এলাকার শান্তির হাটের নিকট চায়না কোম্পানীর কথিত ইপিজেড তৈরী করা হবে বলে এলাকা বাসিকে ভুল বুঝিয়ে মেঘনা পাড়ের মালিকানা ও সরকারী কৃষি জমি দখল করে মেঘনার ডুবো চর থেকে রাতের আধারে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে নদীর তীরসহ কৃষি জমি ভরাট ও জিও টিউবে বালু ভরে তীর ঘেড়াওয়ের কাজ করছেন আলাউদ্দিন নামের একজন বালু এবং ভুমি দস্যু বাহিনী। ভোলা সদরের শিবপুর ও দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া ইউনিয়নের বর্ডারে প্রায় ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১.৫০ (দেড়) কিলোমিটার প্রস্ত জমির মধ্যে কয়েক হাজার কোটি ঘনফুট বালি ফেলে ভরাট করেছে।
শুক্রবার (৬ জুলাই) মেঘনার তীর ঘেড়াওয়ের জিও টিউবে ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাটের সময় মেঘনার পানির প্রবল স্রোতে জিও টিউবসহ ইপিজেড নামের নদীর তীর কয়েকশত ফুট ভেঙ্গে ড্রেজাসহ ২৫ শ্রমিক মেঘনা নদীর গর্ভে তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে গেলে বেড়িয়ে আসে বিভিন্ন তথ্য। পর্যটকেরা ২৫ জনকে উদ্ধার করে, এদের মধ্যে ৫ জন ভুমি ও বালুদস্যুদের স্টাফ। মারাত্মক আহত ৮ জনকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৪ জনকে আশংকাজন অবস্থায় বরিশাল সেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গুরুতর আহতরা হলোন-সুমন (৩৫), জাফর (৩০), ইমন (২৬), ইউনুস (৪০), হারুন (৪৫) দুলাল (৩০), জামাল (৩০), নুর হোসেন (৩৫), ঝান্টু (৩০) ও ইউনুছ (২৮)। ১২ জন আহত হওয়ার তথ্য নিশ্চত করেছেন সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্বে থাকা সালাউদ্দীন। এদের বাড়ি কাচিয়া ও রাজাপুরে। চায়না কোম্পানীর নামে নদীর তীর, চলাচলের রাস্তা, ব্যাক্তি মালিকানা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে ভোলা জেলা প্রশাসন থেকে ৭ কোটি ফুট বালু ইজারার মাধ্যমে ক্রয় করেন কয়েজন ইজারাদার। ইজারায় মৌজা, দাগ ও পরিমান উল্ল্যেখ থাকলেও তার ছিলনা কোন তদারকী।
২০২২ সালে ইজারার পরিমান বালু উত্তোলনে সময় শেষ হয়ে গেলেও এখনও দিন রাত বালু উত্তোলন, জমি ভরাট ও বিক্রি চলছে। নদীর তীর মেঘনার বালু দিয়ে ভরাট করলেও এখানে কি হবে বা ইপিজেড কোম্পানীর নাম কি তা কেউ জানেনা। ওই মেঘনার তীরে প্রভাব শালীরা জমি দখল করে বালু দিয়ে ভরাটের কাজ করছেন, তাই অনেকে মুখ খুলতে রাজি নন। তাছাড়া দখল ও উচ্ছেদ আতঙ্কে আছেন শত শত ভুমি হীন ও জমির দরিদ্র মালিকেরা।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে নিত্যদিনের মত চায়না কোম্পানির নামে ইপিজেড তৈরির কাজে বালুর মাঠ ভরাটের কাজ চলছিলো। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ভোলা-দৌলতখানের সেই পুরানো জনসাধারনে চলাচলের রাস্তা। পুল বন্ধ করে টিন দিয়ে প্রাচির তৈরী করা হয়েছে রাস্তার উপর।
শ্রমিকরা জানায়, বলগেট থেকে ড্রেজারে ও ড্রেজার থেকে জিও টিউব ব্যাগে বালু ভর্তি করার সময় হঠাৎ মেঘনার ঘুর্নায়মান পানির তোরে প্রায় সাড়ে ৩শ ফুট এলাকার ড্রেজার ও শ্রমিকসহ নদী গর্ভে তলিয়ে যায়, তলিয়ে যাওয়া শ্রমিকরা ভেসে উঠলে স্রোতের প্রচন্ড চাপে তারা আবারও তলিয়ে যায়। এ সময় পর্যটকেরা অচেতন অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে। তড়ি গড়ি করে বলগেট পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে দায়িত্ব প্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মেঘনার তীর বালু দিয়ে ভরাটের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার আলাউদ্দিন বলগেট থেকে পরে পা ভেঙ্গে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শিরা জানায়। সার্ভেয়ার আলাউদ্দিনকে ফোনে এবিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক নাম শুনে তিনি আলাউদ্দিন নয় বলে ফোন কেটে বন্ধ করে রাখেন।
ড্রেজারের সাব কন্ট্রকটার কাচিয়ার শিপন মেন্বার জানান, আমি বালু ভর্তির জন্য পরানগঞ্জের ঠিকাদার নাজিম উদ্দিনের কাছ থেকে কাজ নিয়েছি। বালুর বলগেট কথিত ইপিজেডের কাছে ভিড়লে তারা তা ড্রেজার দিয়ে জিও ব্যাগের টিউবে ভর্তি করেন। তবে বালু কোথায় থেকে আনা হয় তা তিনি বলতে রাজি হননি। তার কাছে ঠিকাদার নাজিমের ফোন নান্বার চাইলে তিনি তার ফোনটি বন্ধ করে রাখেন। ঠিকাদার নাজিম উদ্দিনকে খুজে পাওয়া যায়নি। মেঘনায় অতিরিক্ত জোয়ার থাকায় ইপিজেড নামের নদীর তীর ভাঙ্গন অব্যহত আছে। এবিষয়ে জানতে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুজাউদ্দিনকে-০১৩১৮২৫৯১২৩ নং ফোনে কলকরা হলে তা তিনি রিসিভ করেননি।