ভূমিহীন দম্পতিকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর জমি আ. লীগ নেতার দখলে!
প্রথম নিউজ, লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ভূমিহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ৬০ শতাংশ জমি আওয়ামী লীগ নেতা মনির হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে দখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। জমির কাগজপত্রও আওয়ামী লীগ নেতা তার কাছে আটকে রেখেছেন বলে জানা যায়।
জমির দখলসহ কাগজপত্র পেতে ভূমিহীন পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তিনি। এসব ঘটনায় মামলা দায়ের করলেও তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
তাই অভিযুক্ত এই নেতাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে সংবাদ সম্মেলনে আকুতি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী দিনমজুর রতন কবিরাজ ও তার স্ত্রী রিনা বেগম।
ভুক্তভোগী রতন কবিরাজ রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরকাছিয়া গ্রামের শামছুল হকের ছেলে। অভিযুক্ত মনির মোল্লা দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও একই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ মোল্লার ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী রতন কবিরাজ ও তার স্ত্রী লিখিত বক্তব্যে জানা যায়, ভূমিহীন হওয়ায় আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রতন ও তার স্ত্রী রিনা বেগমকে সরকার চরকাছিয়া মৌজায় ৬০ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত দেয়। কিন্তু ওই জমি তারা এখনও দখলে নিতে পারেনি। জমিটি আওয়ামী লীগ নেতা মনির জোরপূর্বক দখলে করে রেখেছেন। রতন জমি বুঝে পেতে একাধিকবার মনির মোল্লার কাছে গেছেন। কিন্তু মনির তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। আর জমি ভোগ দখলে বুঝে পেতে হলে ২ লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করে আ.লীগ নেতা। এর জের ধরেই গত ১৯ জুলাই দুপুরে রতনের ছেলে শরিফ হোসেন কবিরাজ রিকশায় যাত্রী নিয়ে স্থানীয় মোল্লারহাট বাজারে যায়। সেখানেই আওয়ামী লীগ নেতা মনির ও তার সহযোগী মহিন অটারিকশাটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে রিকশাটি ভাঙচুর ও ব্যাটারি নিয়ে গিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি করে। এসময় বাদীর ছেলেকেও মারধর করা হয়। ঘটনাটি জানতে পেরে বাদী ঘটনাস্থল আসলে তাকে আটক করে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। একপর্যায়ে নিরুপায় হয়ে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে বাদী তাদের হাত থেকে ছাড়া পায়।
এনিয়ে বাদী জেলা পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করে। এতে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বাদীকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। ১২ অক্টোবর দুপুরে অটোরিকশা চালক রতন কবিরাজের অভিযোগের ভিত্তিতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (রায়পুর) আদালতের বিচারক বেলায়েত হোসেন রায়পুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এফআইআর রুজু করার নির্দেশ দেয়। এরপর অভিযুক্তরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
রতনের স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, আমরা ভূমিহীন ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে ৬০ শতাংশ জমি দিয়েছে। কিন্তু জমিটি আমরা পাইনি। জমিটি আওয়ামী লীগ নেতা মনিরের দখলে। কাগজপত্রও তার কাছে। এখন কাগজপত্র পেতে হলে ২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। কাজকর্ম বন্ধ থাকায় এখন ঠিকমতো খাবার জোটে না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা না খেয়ে মারা যাব।
রতন কবির বলেন, মনির মোল্লার ভয়ে আমি কাজকর্ম বন্ধ করে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। কোথাও গেলে তিনি লোকজন দিয়ে আমাকে ভয়ভীতি দেখায়। জমির কাগজপত্র দিচ্ছে না উল্টো আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। মামলা করলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না। পুলিশ প্রশাসনের কাছে মনিরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মোল্লা বলেন, ঘটনাটি মিথ্যে। একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করে রতনকে দিয়ে এসব অভিযোগ করাচ্ছে। চরে হাজার হাজার একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে রতনের ৬০ শতাংশ জমি আমি কেন দখলে নিতে যাব। রাজনৈতিকভাবে বিপাকে ফেলার জন্য একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
মামলার তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাজিমারা পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
রায়পুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বলেন, ঘটনাটি আমারা জানা নেই। মামলাটি তদন্তে হাজিমারা পুলিশ ফাঁড়ি দায়িত্বে রয়েছে। সেখানের ইনচার্জ ভালো বলতে পারবেন।