ভোক্তা অধিকারে লাখো অভিযোগ
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষরণ অধিদপ্তর ভোক্তাদের নানা অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দেশজুড়ে সাড়া জাগালেও লোকবল সংকটে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনায় রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন : ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর মাধ্যমে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যাত্রা শুরু হয়। ভোক্তা অধিকার সারা দেশ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫শ ৩০টি ফোন রিসিভ করেছে। এরমধ্যে ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৫ হাজার ৬শ ৮৮টি লিখিত অভিযোগ আসে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষরণ অধিদপ্তর ভোক্তাদের নানা অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দেশজুড়ে সাড়া জাগালেও লোকবল সংকটে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনায় রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। পড়তে হচ্ছে নানা ধরনের বিপাকে। জনবল সংকটে ধুঁকছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারা দেশে ভোক্তা অধিকারের কার্যক্রম পরিচালনায় সাড়ে ৪ শতাধিকের মতো জনবল প্রয়োজনের বিপরীতে সংস্থাটি চলছে ১৮২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে। অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘাটতি নিয়ে চলছে সংস্থাটি। যা মোট জনবলের ৪০ শতাংশের মতো। সূত্র জানায়, ভোক্তা অধিকারের ল্যান্ডফোন, মুঠোফোন এবং হটলাইনসহ একাধিক নম্বরে প্রতিদিন কয়েক হাজার ফোন কল আসে। ১৬১২১ নম্বরটি ২০২১ সাল থেকে চালু করা হয়। ২০২১-২২ এবং ২০২৩ সাল এই তিন বছরে হটলাইনটিতে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫শ’ ৩০টি ফোন কল রিসিভ করে। এক্ষেত্রে সরাসরি ফোনে অভিযোগ নেয়ার সুযোগ নেই। রিটেন ফরমেটে অভিযোগগুলো আসে। অভিযোগকারী ই-মেইল, ডাকযোগে, নিজস্ব সফটওয়ার অথবা স্বশরীরে এসে অভিযোগ জমা দিতে পারেন। এভাবে অভিযোগগুলো নেয়া হয়।
কর্তব্যরত জনবলের বরাদ্দ রয়েছে ৩৬৬ জনের। কিন্তু কর্মরত জনবলের সংখ্যা ১৮২ জন। এটা সারা বাংলাদেশে। এরমধ্যে প্রতিষ্ঠানের ডাইরেক্টর জেনারেলসহ মোট অফিসার রয়েছেন ৯২ জন। সারা দেশে ৮টি বিভাগের ৬৪টি জেলা পর্যায়ে জেলা অফিসগুলোতে একজন সহকারী পরিচালক এবং কম্পিউটার অপারেটর নিয়ে জেলার সেটআপ রয়েছে। এতে করে একটি জেলায় দু’জনকে দিয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা এবং অভিযান পরিচালনা করা কোনোটিই সুষ্ঠুভাবে সম্ভব নয়। এদিকে ভোক্তা অধিকারে ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ২শ লিখিত অভিযোগ আসে। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালে ৩শ, ২০১৫-২০১৬ সালে ৬শ ৬২টি, ২০১৬-২০১৭ সালে ৬ হাজার ১শ ৪০টি, ২০১৭-১৮ তে ৯ হাজার ১৯টি, ২০১৮-১৯ এ ৭ হাজার, ২০১৯-২০ সালে ৯ হাজার, ২০২০-২১ সালে ১৪ হাজার ৯শ’ ১০টি, ২০২১-২২ সালে ২৫ হাজার ৩শ’ ৪৬টি এবং ২০২২-২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৫ হাজার ৬শ’ ৮৮টি লিখিত অভিযোগ আসে।
এ ছাড়া গত ১৮ই জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ভোক্তার অধিকার আদায়ে কনজ্যুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিসিএমএস) সফটওয়্যার এবং ওয়েব পোর্টাল চালু করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তাদের অভিযোগ সহজ উপায়ে অনলাইনে জানানোসহ দ্রুততার সঙ্গে সেই অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সিসিএমএস ওয়েব পোর্টাল চালু করা হয়। পোর্টালটি চালু করার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার অভিযোগ এসেছে। এর মাধ্যমে অভিযোগকারীরা আরও সহজে যাতে করে অভিযোগ করতে পারে সে বিষয়টি মাথায় রেখে করা হয়েছে। অভিযোগ করা মাত্রই অভিযোগকারী একটি নম্বর পেয়ে যাবেন। যখন শুনানি হবে তখন এটা কোন কর্মকর্তার কাছে আছে এ সংক্রান্ত বিষয়ে এসএমএসএ’র মাধ্যমে তথ্য সরবরাহ করা হবে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি সুলতান ডাইংস’র অভিযোগটি মূলত গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেখে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এটা সাধারণ অভিযানের অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর যাচাই বছাইয়ের মাধ্যমে এগুলো আমলে নেয়া হয়। মিথ্যা অভিযোগ নথিজাত হলেও শুনানি পর্যন্ত এগুলো যায় না। অভিযোগ প্রমাণিত না হলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউকে ফাঁসাতে মিথ্যা অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে প্রচলিত ধারায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি প্রতিষ্ঠানকে হেয় করতে মিথ্যা অভিযোগের কারণে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই ব্যক্তি উদ্দেশ্যমূলকভাবে অভিযোগটি করেন। অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে সূত্র জানায়, এখন ই-কমার্সের অভিযোগগুলো সবচেয়ে বেশি আসে। এরপর পণ্য ক্রয় সংক্রান্ত অভিযোগ। এ ছাড়া পরিবহন, ওষুধের বেশি দাম নেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, যদি কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা অভিযোগ করেন এবং কাউকে হয়রানি করতে এটা করা হয়েছে প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। জনবলের বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সারা দেশে আমাদের ২১৬ জন জনবল রয়েছে। আমাদের সদরদপ্তরসহ ৮টি বিভাগের পাশাপাশি ৬৪টি জেলায় জেলা অফিস রয়েছে। মূলত জেলা অফিসে একজন অভিযান পরিচালনা কর্মকর্তা এবং একজন কম্পিউটার অপারেটর রয়েছে। দু’জন করে জনবল রয়েছে একটি জেলায় এবং অন্য অনেক জেলায় খালি রাখা হয়েছে। সেখানে ১০ থেকে ১২টি উপজেলায় অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা করা কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। ৪৬৫ জন জনবল বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করছি এবং খুব তাড়াতাড়ি জনবল নিয়োগ দিতে পারলে আরও নিবিরভাবে ভোক্তা অধিকার তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।
সুলতান ডাইংস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভিকটিমকে বারবার অভিযোগ করতে বললেও তিনি লিখিত অভিযোগ করেননি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে সরাসরি অভিযোগ না পেলেও জনগুরুত্বপূর্ণ দেখে সরাসরি অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরবর্তীতে তাদের শুনানিতে ডাকা হলেও আসেননি। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী রেস্তেরাঁ কর্তৃপক্ষ তাদের সুনাম ক্ষণœ এবং হয়রানি উল্লেখ করে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে কঠিন আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন। তিনি বলেন, ই-কমার্স এবং সেবা খাত থেকে বেশি অভিযোগ আসে এখন। সদ্য চালু করা কনজ্যুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিসিএমএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে মানুষের অভিযোগ করাটা সহজতর করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৪ হাজার অভিযোগ এসেছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: