বাড়ছে লোডশেডিং

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গ্রাম-গঞ্জে। গ্রামে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে।

বাড়ছে লোডশেডিং

প্রথম নিউজ, অনলািইন: দেশে চলছে তীব্র তাপদাহ। ঢাকায় গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে। গতকাল পাবনার ঈশ্বরদীতে চলতি   মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তবে একদিনের ব্যবধানে কমেছে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা। আর এই তীব্র তাপদাহের মধ্যে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। এমনিতেই প্রচণ্ড গরমের কারণে ঘরে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে, এর ওপর লোডশেডিংয়ের মাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ চরম আকারে পৌঁছেছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গ্রাম-গঞ্জে। গ্রামে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। এর মধ্যে রামপাল, আশুগঞ্জ নর্থ ও আশুগঞ্জ ইস্ট এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র কারিগরি ত্রুটির কারণে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। এ তিনটি কেন্দ্র থেকে এক হাজার ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো।

এগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন এক হাজার মেগাওয়াট কম রয়েছে। কিন্তু সারা দেশে লোডশেডিংয়ের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কোথায় কোথায় একটানা এক ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় দিনে-রাতে ছয়-সাতবার লোডশেডিং হচ্ছে। পিডিবির দাবি, গতকাল সন্ধ্যায় সারা দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এই সময়ে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ১৫ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। ফলে ৭৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোডশেডিং করতে হয়েছে। সর্বনিম্ন উৎপাদন হয় ১১ হাজার ৮১৮ মেগাওয়াট। 

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মতে, ঢাকায় মোট বিদ্যুতের চাহিদা ৪ হাজার ৮৬৯ মেগাওয়াট। গতকাল লোডশেডিং করা হয়নি ঢাকায়। কিন্তু ঢাকার কোথায় কোথায় লোডশেডিং হয়েছে। চট্টগ্রামে ১ হাজার ৩৬১ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে লোডশেডিং হয়েছে ১৪০ মেগাওয়াট। খুলনায় ১ হাজার ৭৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে লোডশেডিং করা হয়েছে ১৫০ মেগাওয়াট। রাজশাহীতে ১ হাজার ৫৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে লোডশেডিং হয়েছে ১৩১ মেগাওয়াট। কুমিল্লায় ১ হাজার ৩৩৯ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা বিপরীতে লোডশেডিং হয়েছে ১১০ মেগাওয়াট। ময়মনসিংহে ১ হাজার ১০১ মেগাওয়াটের বিপরীতে লোডশেডিং হয়েছে ১৪০ মেগাওয়াট। সিলেটে ৪৯৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। এখানে লোডশেডিং হয়েছে ৪৩ মেগাওয়াট। বরিশালে ৪০১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। রংপুরে ৮৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে লোডশেডিং হয়েছে ৮০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট। গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে ৪ কোটি ৪৮ লাখ। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এমনিতেই গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে, সেই সাথে ঈদ সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশের সব জায়গার বিপণিবিতানগুলোতে এসি চালানো হচ্ছে। এসব কারণে বিদ্যুতের চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। 

এদিকে পাবনার ঈশ্বরদীতে চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে একদিনের ব্যবধানে কমেছে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা। গতকাল আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনূর ইসলাম বলেন, পাবনার ঈশ্বরদীতে গতকাল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ। ঢাকায় সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি। রোববার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে একদিনের ব্যবধানে ঢাকায় তাপমাত্রা কমেছে ২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার ঢাকার তাপমাত্রার সামান্য বাড়তে পারে আর ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা একইরকম থাকতে পারে বলে জানান তিনি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই-এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে, গরমে শুরু হয়েছে জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব। মহাখালীর আইসিডিডিআরবিসহ সবগুলো হাসপাতালেই ডায়রিয়ার রোগীর জন্য বেড বাড়ানো হয়েছে। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে প্রকোপটা বেশি। কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলছেন, গরমের মধ্যে কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় থাকে। এসব ব্যাকটেরিয়া পাতলা পায়খানার জন্য দায়ী। এই জীবাণুগুলো খাবার হজম হতে দেয় না। গরমে অনেকের মধ্যে পানি শূন্যতা দেখা দিচ্ছে। এই পানি শূন্যতা থেকে হিটস্ট্রোক হচ্ছে অনেকের। রোজার মধ্যে দিনের বেলা পানাহার না করতে পারলেও ইফতারের পর পেটভরে পানি পান করতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। মনে রাখতে হবে গরম যতই থাকুক পেটে পানি থাকলেও হিটস্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

রাজধানীর আইসিডিডিআর,বিতে এখন গড়ে সাড়ে ৪০০ ডায়রিয়ার রোগী আসছে চিকিৎসা নিতে। কিন্তু সেটা রোববার আইসিডিডিআর,বিতে সাড়ে ৫২২ ডায়রিয়ার রোগী এসেছে। আইসিডিডিআর,বি’র কর্মকর্তারা বলছেন, গরম বেশি হলেও তাদের হাসপাতালে রোগী স্বাভাবিক ধারায়ই আসছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, রোজায় মানুষ বাইরের খাবার কম খাচ্ছেন। এই গরমে তুলনামূলকভাবে কম ঘামাচ্ছে। ফলে শরীর থেকে পানি কম বের হওয়ায় অন্যান্য সময়ের তুলনায় ভালো অবস্থা রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, খাবার স্যালাইন খাওয়ায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের জন্য খাবার স্যালাইন ক্ষতির কারণও হতে পারে। এতে ডায়াবেটিসের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।