Ad0111

নিখোঁজদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন

মানবন্ধনে অংশ নেয়া প্রত্যেকে তাদের নিখোঁজ স্বজনের ছবি সঙ্গে নিয়ে আসেন। কারও বুকে ছিল সন্তানের ছবি, কারও বুকে বাবার ছবি, আবার কারও বুকে ভাইয়ের ছবি। বক্তব্যে নিজেদের দুঃসহ কষ্টের কথা তুলে ধরেন নিখোঁজদের স্বজনরা।

নিখোঁজদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন
নিখোঁজদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ‘তিন বছর ধরে বাবা নিখোঁজ। জানি না কোথায় আছে। কেমন আছে। আমি বাবার খোঁজ চাই। বাবাকে ফিরে পেতে চাই। দেশের সর্বোচ্চ সংস্থার কাছে আমরা বারবার আবেদন করেছি। কিন্তু আমার বাবার কোনো খোঁজ মেলেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে এসেও আমাদের কেন বাবাকে ফিরে পাওয়ার জন্য রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হয়?’ অশ্রুসজল চোখে এভাবেই বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকূতি জানিয়েছেন মিরপুরের কাঠ ব্যবসায়ী নিখোঁজ ইসমাইল হোসেন বাতেনের মেয়ে ইশা। গতকাল বিকালে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক মানববন্ধনে ইশা এ আকূতি জানান। নানা সময় ‘গুমের’ শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠন। এ সময় নিখোঁজদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রিয়জনদের সন্ধান পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান তাদের স্বজনরা।

মানবন্ধনে অংশ নেয়া প্রত্যেকে তাদের নিখোঁজ স্বজনের ছবি সঙ্গে নিয়ে আসেন। কারও বুকে ছিল সন্তানের ছবি, কারও বুকে বাবার ছবি, আবার কারও বুকে ভাইয়ের ছবি। বক্তব্যে নিজেদের দুঃসহ কষ্টের কথা তুলে ধরেন নিখোঁজদের স্বজনরা।

২০১৩ সালে ২রা ডিসেম্বর রাজধানীর শাহবাগে ফুল কিনতে গিয়েছিলেন বংশালের পারভেজ হোসেন। এরপর থেকে নিখোঁজ। বিভিন্ন জায়গার ঘুরেও পারভেজের খোঁজ পায়নি স্বজনরা। প্রতি বছর বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিখোঁজ বাবা পারভেজের ছবি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ায় ছোট্ট মেয়ে রিদি। গতকাল মানববন্ধনেও বাবার ছবি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল রাস্তায়। আদিবা ইসলাম রিদি বলেন, আমি চাইনা বাবার ছবি নিয়ে আর রাস্তায় দাঁড়াতে। আমার কষ্ট হয়। আমার আর ভালো লাগে না বাবাকে ছাড়া। সবাই তাদের বাবার সঙ্গে ঘুঁরতে যায়। আমি বাবার সঙ্গে ঘুরতে পারি না। আমার মন চায় বাবার সঙ্গে ঘুরতে। বাবার জন্য খুব কষ্ট লাগে। বাবাকে ছাড়া আমার খুব অসহায় লাগে। আপনারা আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।

নিখোঁজ গাড়িচালক কাউসার হোসেনের মেয়ে ১০ বছর বয়সী লামিয়া আক্তার বলেন, আগামী ১৫ই ডিসেম্বর আমার জন্মদিন। কিন্তু আজ বাবা আমার কাছে নেই। কিছুদিন আগে আমার হাত কেটে গেছে। সবাই আসলেও বাবা আমাকে দেখতে আসেনি। আর কতকাল বাবার জন্য কান্না করবো। আপনারা আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। বাবা ছাড়া আমার এক মুহূর্তও ভালো লাগে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটাই আবেদন, বাবাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন।

নিখোঁজ চঞ্চল হোসেনের ছেলে ৬ বছর বয়সী আহাদ বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকূতি জানিয়ে বলেন, সবাই তাদের বাবার সঙ্গে কথা বলে। আমি বাবার সঙ্গে কথা বলতে পারি না। স্কুলে যেতে পারি না। বাবার সঙ্গে খেলতে পারি না। আমার বাবাকে ফিরে পেতে চাই।

রাজধানীর রামপুরা থেকে নিখোঁজ ছাত্রলীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর মা সালেহা বেগম বলেন, আমার ছেলে দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ। আমার ছেলেকে গুম করা হয়েছে। ছেলেকে ফিরে পেতে হাজারও মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়েছি। সবাই শুধু আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু আজও আমি আমার ছেলেকে ফিরে পাইনি। আর কতদিন আমি ছেলের অপেক্ষায় থাকবো, বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন সালেহা বেগম।
মানবন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আপনারা সবাই জানেন আজকে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশে কি মানবাধিকার আছে? কেউ বলতে পারবে না এদেশে মানবাধিকার আছে। বাংলাদেশে আছে দানবাধিকার। দানবদের অধিকার আমরা এখানে দেখি। এই দানবরা সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকে। তারা সরকার দ্বারা প্রতিপালিত হয়। তারা যা ইচ্ছা করে বেড়ায়। তাদের কাছে আমরা জিম্মি।

তিনি বলেন, আজকে এখানে বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের কান্না দেখেছেন। তাদের কেউ পিতাকে হারিয়েছে। এর মধ্যে কেউ তাদের বাবাকে চোখেও দেখেনি। প্রতিবছর তারা তাদের বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকূতি জানিয়ে রাস্তায় দাঁড়ায়। জীবনের অধিকার সবচেয়ে বড় অধিকার। সেই অধিকার তাদের বাবারা পায়নি। এই দেশে আইন, আদালত, সংবিধান আছে কিন্তু কেউই এই অসহায় সন্তানদের কাছে তাদের বাবাদের ফিরিয়ে দেয়ার ভূমিকা রাখে না।

মায়ের ডাক সংগঠনের সভাপতি আফরোজা ইসলাম আঁখির সভাপতিত্বে মানবন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন- গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর প্রমুখ। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news