বাংলাদেশের ওপর ভয়ঙ্কর দানবের মতো চেপে বসেছে স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী শাসন : ছাত্রঐক্যে
আজ রোববর সকালে ডিআরইউ ( ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর আজ ভয়ঙ্কর দানবের মতো চেপে বসেছে এক নিকৃষ্ট স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী শাসন।
আজ রোববর সকালে ডিআরইউ ( ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্রঐক্য। তার পূর্বে বক্তব্য রাখেন ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান। নেতৃদ্বয় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যে'র কর্মসূচি ঘোষনা।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তে ভেজা বাংলাদেশের ওপর আজ ভয়ঙ্কর দানবের মতো চেপে বসেছে এক নিকৃষ্ট স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী শাসন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত মর্মবস্তুকে; মানুষের মর্যাদা, ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী কায়দায় দেশ পরিচালনা করছে। বর্তমান সরকারের দেশ পরিচালনার কোন রাজনৈতিক ও নৈতিক বৈধতা নেই। তাদের দখলদারিত্বমূলক শাসনে দেশ, জনগণ ও দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ বড় ধরণের বিপর্যয়ে নিপতিত হয়েছে। অধিকারবোধ ক্রমশ ক্ষমতাসীনদের কৃপা কিংবা অনুগ্রহের বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। এই সরকার দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করে দিয়েছে, রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান তার রাষ্ট্রীয় পরিচয় হারিয়ে দলদাসে পরিণত হয়েছে, সবকিছুকে করা হয়েছে এক ব্যক্তির ক্ষমতার অধীনস্থ। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আজ বিপন্ন। সার্বভৌমত্ব ভয়ংকর হুমকির সম্মুখীন। এই সরকার জাতীয় স্বার্থকে বন্ধক রেখে তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব তাই আজ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সাথে সম্পর্কিত হয়ে গেছে। তারা তাদের একচেটিয়া ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া. ৭১-এর ঘাতকের ন্যায় আজ গণমানুষের মুখোমুখি হয়ে ভয় ও ত্রাসের মাধ্যমে সকল বিরোধী মত-পথকে দমনে হায়েনার হুংকার দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্পষ্ট ঘোষণা ছিলো- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকার পতনের ১দফা ও রাষ্ট্র সংস্কারে প্রস্তাবিত ৩১ দফার আলোকে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তই পারে মুক্তিযুদ্ধের সেই আকাঙ্খার পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অবহেলা ও উদাসীনতা এবং দূর্নীতি ও লুটপাটের প্রয়োজনে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরাপ্রকারান্তরে গিনিপিগে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থার অগণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক ও অনুৎপাদনশীল কাঠামো অটুট থাকায় একদিকে শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরদিকে শিক্ষার মান ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ মদদে প্রশ্নফাঁস শিক্ষার মূল ভিত্তিকে দূর্বল করে দিয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃত করে একদলীয় বয়ান প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে ধারণ না করে বিভক্তি ও বিভেদ সৃষ্টির নানা উপাদানে পরিপূর্ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের যেকোন দুঃসময়ে এদেশের শিক্ষার্থীরা সবার আগে প্রতিবাদমুখর হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী চরিত্রকে দমনে সরকারদলীয় সংগঠন ছাত্রলীগকে পেটোয়া বাহিনী হিসেবে তৈরি করা হয়েছে এবং তাদের একচেটিয়া আধিপত্য জারি রাখতে যা খুশি তাই করার লাইসেন্স দিয়ে দেয়া হয়েছে। জবাবদিহিতাহীন বেপোরোয়া ক্ষমতা ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী-দখলবাজ শক্তিতে পরিনত করেছে। ছাত্রলীগের কাঠামোগত নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক পরিসর ধ্বংস হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলগুলোতে গণরুম-গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন-নির্যাতন অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে অতিক্রম করেছে। ফেনী নদীর পানির ন্যায্য বন্টনের দাবি করছি।
তিনি বলেন, ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার জন্য বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, গেস্টরুমে নির্যাতনের বলি হয়েছেন ঢাবি শিক্ষার্থী হাফিজুর মোল্লা। ক্যাম্পাসে বিরোধীমতের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা-মামলা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণরুম-গেস্টরুমে নির্যাতনের পাশাপাশি গত ১৫ বছরের দীর্ঘ শাসনামলে নিপীড়নের সাংগঠনিক কাঠামোকে ক্লাসরুম পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে। আর সমস্ত ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এইসব নিপীড়নের ঘটনায় সাহায্যকারীর ভূমিকা পালন করেছে। সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। ছাত্রলীগের একক আধিপত্যের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ জিম্মি। তারা লড়াইয়ের শক্তি হারাতে বসেছে। রাষ্ট্র ও শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ যেন শিক্ষার্থীদের স্বাধীন বিকাশের পথে বাধা না হতে পারে সেই জন্যে শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাঙ্গনে বিদ্যমান ছাত্র রাজনীতির কাঠামোর মধ্যেও প্রয়োজন নতুন গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত। যে বন্দোবস্ত সকল রাজনৈতিক দলের শিক্ষার্থীদের সহাবস্থান নিশ্চিত করবে, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণে গবেষণা, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সকল বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতার পথকে প্রশস্ত করবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান অবৈধ সরকারের কাছে ছাত্র সমাজ কিংবা দেশবাসীর পদত্যাগ ভিন্ন অন্য কোন দাবী নেই। আমাদের দাবী গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী আন্দোলনরত সকল রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতি। সরকারের পদত্যাগ, ভোটাধিকার এবং রাষ্ট্র ও শিক্ষাব্যবস্থার গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লড়াই তাই আজ এক সূতোয় গাঁথা।
বাংলাদেশকে রক্ষায় ছাত্র আন্দোলনের যে গৌরবজ্জ্বল ঐতিহ্য তা ৫২ বছরের নানান রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও নীতির কারনে আজ বিভ্রান্ত, অসংগঠিত ও পথভ্রষ্ট। একইসাথে ভয় ও দখলমুক্ত গণতান্ত্রিক ধারার শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার নিয়ে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের রাজপথে নামিয়ে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করা আমাদের ঐতিহাসিক কর্তব্য।
ইতোমধ্যেই ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ৯ দফা প্রস্তাবনা ঘোষণা করা হয়েছে। ১২ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখের ছাত্র কনভেনশনে ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র কর্তৃক পঠিত এই ৯ দফা প্রস্তাবনা সারাদেশের ছাত্র প্রতিনিধিদের দ্বারা গৃহীত হয়েছে (ছাত্র ঐক্যের ৯ দফা দাবি সংযুক্তি হিসেবে দেয়া হলো)। উক্ত ৯ দফার ভিত্তিতে বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে ক্রিয়াশীল গণতান্ত্রিক ১৫টি ছাত্র সংগঠন সম্মিলিতভাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যে'র পক্ষ থেকে আমাদের প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
কর্মসূচি: আগামী ১৯ অক্টোবর ২০২৩, বৃহস্পতিবার ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে অতি দ্রুত রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতেও ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে জনমত সংগঠিত করা হবে।
এভাবেই গণতান্ত্রিক, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারভিত্তিক বাংলাদেশের পক্ষে শক্তিশালী জনমত গঠন এবং রাজপথে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদীদের পতন নিশ্চিত করা হবে, ইনশাআল্লাহ। এই লড়াইয়ে আপনাদের সকলকে আমরা পাশে চাই। আপনাদের সহযোগিতা চাই। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে অচিরেই দেশের ভাগ্যাকাশে নতুন ভোরের তেজোদীপ্ত সূর্য উদিত হবে, ইনশাআল্লাহ।
ছাত্র ঐক্যের সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সহ সভাপতি তবিবুর রহমান সাগর, রিয়াদ ইকবাল, সাখাওয়াত হোসাইন, সাইফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মাকসুদুর রহমান সুমিত, জুয়েল মৃধা, আবু জাফর, শাজাহান শাওন, সালেহ মোহাম্মদ আদনান, জকির উদ্দিন আবির, সহ সাধারণ সম্পাদক রেজোয়ান আহমেদ
সহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।