আওয়ামী লীগ নেতার নেওয়া ‘ঘুষের টাকা’ ফেরত দেওয়া হলো ইউএনওর মধ্যস্থতায়
নিজের বাসায় ডেকে আজ শুক্রবার ইউএনও ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দেন।
প্রথম নিউজ, নাটোর: নাটোরের গুরুদাসপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর দেওয়ার নামে আওয়ামী লীগ নেতার নেওয়া ‘ঘুষের টাকা’ ফেরত দেওয়া হলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ‘মধ্যস্থতায়’। নিজের বাসায় ডেকে আজ শুক্রবার ইউএনও ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দেন। ঘটনা জানতে পেরে সাংবাদিকেরা সেখানে উপস্থিত হন। তখন বিষয়টি গোপন রাখতে কয়েকজন ভুক্তভোগী নারীকে ইউএনওর বাসার পেছন দিক দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দেয়াল টপকাতে ব্যবহার করা হয় মই। যদিও সাংবাদিকেরা তা–ও দেখে ফেলেন। বিষয়টি নিয়ে ইউএনও শ্রাবণী রায় বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মধ্যস্থতাকারী ও দায়িত্ববান কর্মকর্তা হিসেবে ওই টাকা ফেরত দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী নারীরা জানান, গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অন্তত সাত নারীর কাছ থেকে ছয় মাস আগে ৫০ হাজার করে টাকা নেন। এঁদের মধ্যে ছয়জন ঘর পেয়েছেন, একজন পাননি। যদিও তাঁরা ঘুষের টাকা ফেরত চাইছিলেন। গত বুধবার দুই ভুক্তভোগী নাটোর আমলি আদালতে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নূর মোহাম্মদ ইউএনওর কার্যালয়ে অভিযোগকারীদের বক্তব্য শোনেন। তখন ইউএনও শ্রাবণী রায় ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম সেখানে ছিলেন না। তিনি ওই দিনই নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে ঘুষ গ্রহণের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন এবং দায়ী করেন নাজিরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শওকত রানাকে। অবশ্য শওকত রানা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার পর নজরুল ইসলামের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তাঁর বাসভবনে গেলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি। অবশ্য ভুক্তভোগী নারীরা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নজরুল ইসলাম বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং তাঁদের টাকা ইউএনওর মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়ে এসেছেন।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য অভিযোগকারী সাত নারীকে ইউএনও শুক্রবার তাঁর বাসভবনে ডেকে নেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা ইউএনওর বাসভবনে যান। সেখানে চারজন অভিযোগকারীকে ৫০ হাজার করে এবং একজনকে ৪০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। দুজনকে মামলা প্রত্যাহারের পর টাকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
এদিকে ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় সাংবাদিকেরা ইউএনওর বাসভবনের সামনে জড়ো হন। তখন ইউএনও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। পরে বেলা দুইটার দিকে দেখা যায়, কয়েকজন নারীকে ইউএনওর বাসভবনের পেছন দিক দিয়ে বাইরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দেয়াল টপকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে মই।
টাকা ফেরত পেয়ে বাড়ি ফেরার পথে গুরুদাসপুর থানা মোড়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা হয় অভিযোগকারী নারীদের। তাঁরা টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টি জানান এবং ফেরত পাওয়া টাকাও দেখান। এক নারী বলেন, সাংবাদিকদের দৃষ্টি এড়াতে ইউএনওর গাড়িচালক জয়নাল হোসেনের সহায়তায় মই বেয়ে সীমানাপ্রাচীর অতিক্রম করেন তাঁরা।
নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নূর আহমেদ শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, বৃহস্পতিবার নারীদের যে অভিযোগ তিনি শুনেছেন, সেগুলো খতিয়ে দেখা ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। তবে কেন, কী কারণে, কোন পরিস্থিতিতে ইউএনও তাঁর বাসভবনে ডেকে ঘুষের টাকা ফেরত দিলেন, সেটা তিনিই বলতে পারবেন।