বাবরি মসজিদে প্রথম আঘাতকারী বলবীর সিংয়ের আত্মোপলব্ধি

নাম বদলে হয়েছেন মোহাম্মদ আমির। মুখে লম্বা দাড়ি, মাথায় টুপি, গায়ে আলখেল্লা। কথায় কথায় বলেন, আল্লাহু আকবার, আলহামদুল্লিাহ। 

বাবরি মসজিদে প্রথম আঘাতকারী বলবীর সিংয়ের আত্মোপলব্ধি

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং শিব সেনা পার্টির সমর্থকরা বাবরি মসজিদে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে। এর ফলে পুরো ভারতে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে হওয়া দাঙ্গায় ২ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। এই মসজিদ ভাঙতে প্রথম আঘাত করেছিলেন যে ব্যক্তি তার নাম বলবির সিং। এক সময় শিবসেনার সক্রিয় এই কর্মী বর্তমানে একজন পরিপূর্ণ মুসলিম। নাম বদলে হয়েছেন মোহাম্মদ আমির। মুখে লম্বা দাড়ি, মাথায় টুপি, গায়ে আলখেল্লা। কথায় কথায় বলেন, আল্লাহু আকবার, আলহামদুল্লিাহ। 

কাকডাকা ভোরে আজান দেন, ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাউম’। এক দিন যে বলবীর বাবরির চুড়ো থেকে ইট খসিয়েছিলেন, আজ তিনিই ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে পড়া  মসজিদ মেরামতের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কী হয়েছিল বলবিরের সঙ্গে। ভারতের উর্দু ম্যাগাজিন মাসিক আরমুগানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আদেশ আসার পর আমি সবার আগে কোদাল হাতে বাবরি মসজিদ ভাঙতে অগ্রসর হলাম। আমি মাঝের গম্বুজটির ওপর কোদাল দিয়ে আঘাত করলাম এবং ভগবান রামের নামে জোরে জোরে ধ্বনি দিলাম। দেখতে না দেখতেই মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল।

মোহাম্মদ আমির বলেন, মসজিদ ধ্বংস করে ওইদিন বাড়িতে আসার পর আমার বাবা খুব অসন্তুষ্ট হন। পরিষ্কার বলে দেন, এখন এই ঘরে আমি আর তুমি দুজনে এক সঙ্গে থাকতে পারি না। তুমি থাকলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব, নইলে তুমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। আমার মৃত্যু পর্যন্ত তুমি তোমার মুখ কখনো আমাকে দেখাবে। রাগে-ক্ষোভে তিনি বাড়ি ছেড়ে যেতে উদ্যত হলেন। আমি ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে বললাম, আপনি বাড়ি ছেড়ে যাবেন না, আমিই চলে যাচ্ছি।

মসজিদে হামলার সময় আমার যে বন্ধুটি বিশেষভাবে আমার সহযোগিতা করে তার নাম যোগিন্দর। আমি বাড়ি ছেড়ে চলে আসার কিছু দিন পর যোগিন্দর পাগল হয়ে যায়, সম্পূর্ণ উলঙ্গ থাকতে শুরু করে। পরনে কাপড় রাখত না। অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে তাকে শেকলে বেঁধে রাখা হয়। 

১৯৯৩ সালের ৯ মার্চ আমার বাবা মারা যান। বাবরি মসজিদ ভাঙার অপরাধ আমাকে খুঁড়ে খুঁড়ে খেতে থাকে। তাছাড়া যোগিন্দর পাগল হওয়ার পর আমার মন সব সময় ভীত-সন্ত্রস্ত থাকত, না জানি কোনো আসমানি বিপদ আমার ওপর এসে পড়ে। বাবার দুঃখ ও মনোকষ্ট এবং যোগিন্দরের করুণ পরিণতি আমাকে বার বার ইসলামের দিকে ডাকতে থাকে। ফলে ২৫ জুন ১৯৯৩ যোহর নামাযের পর আমি ইসলাম গ্রহণ করি। আমার নাম রাখা হয় মুহাম্মদ আমের।’

জানা যায়, ১৯৯৩ থেকে উত্তরভারতের মেওয়াত-সহ বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু ভেঙে পড়া মসজিদ খুঁজে বের করে সেগুলির মেরামত করেছেন তিনি। বাবরির প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে কম করে হলেও ভেঙে পড়া শ’খানেক মসজিদকে মেরামত করতে চান তিনি। 

এ মসজিদটি রামায়ণ-খ্যাত অযোধ্যা শহর ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের ফৈজাবাদ জেলায় অবস্থিত । ১৫২৮ সালে সেখানে সম্রাট বাবরের আদেশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যে কারণে জনমুখে মসজিদটির নামও হয়ে যায় বাবরি মসজিদ।