বিচ্ছেদের আবেদন আসাদের স্ত্রীর, ভিত্তিহীন বললো রাশিয়া

বিচ্ছেদের আবেদন আসাদের স্ত্রীর, ভিত্তিহীন বললো রাশিয়া

প্রথম নিউজ, অনলাইন:  সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ব্রিটিশ স্ত্রী আসমা আল-আসাদ বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেছেন। এমনকি, আসাদকে আটকে রেখে তার সব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। সম্প্রতি তুর্কি ও আরব গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ পায়। তবে আসমা আল-আসাদ বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন ও তাকে রাশিয়ায় আটকে রাখার বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে ক্রেমলিন।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, এই প্রতিবেদনগুলোর কোনো সত্যতা নেই। আসাদ মস্কোতে আটক ও তার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে- এমন দাবি মিথ্যা।

এর আগে রোববার তুর্কি ও আরবি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর আসাদ পরিবার রাশিয়ায় আশ্রয় পেয়েছে। এরমধ্যেই আসমা আল-আসাদ মস্কোতে বিচ্ছেদের আবেদন করেছেন বলে দাবি করা হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ১৯৭৫ সালে লন্ডনে সিরীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আসমা। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। তবে ২০০০ সালে আসমা সিরিয়ায় যান ও একই বছর আসাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

বাবা হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সালে সিরিয়ার ক্ষমতায় আসেন বাশার আল-আসাদ। এরপর ২৪ বছর শক্ত হাতে শাসন করেন সিরিয়া।

তবে ১২ দিনের ঝটিকা আক্রমণে গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেয় হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ও আরও কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিমানে করে দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাশার আল-আসাদ মস্কোতে আশ্রয় লাভ করেন। সেখানে বসবাস করলেও তার ওপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়। তাকে মস্কো ত্যাগ করার অনুমতি দেয়া হয়নি বা রাজনৈতিক কোনো তৎপরতা চালানোর অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশ কর্তৃপক্ষ তার সম্পদ ও অর্থ জব্দ করেছে। তার সম্পদের মধ্যে ছিল ২৭০ কেজি স্বর্ণ, ২ বিলিয়ন ডলার, মস্কোতে ১৮টি অ্যাপার্টমেন্ট।

বাশার আল-আসাদের ভাই মাহের আল-আসাদকে রাশিয়ায় আশ্রয় দেয়া হয়নি। তার অনুরোধ এখনও বিবেচনাধীন রয়েছে বলে সৌদি ও তুর্কি মিডিয়া জানিয়েছে। খবরে বলা হয়, মাহের ও তার পরিবার রাশিয়ায় গৃহবন্দি রয়েছেন।

উল্লেখ্য, পতনের পর সিরিয়া থেকে বাশার আল-আসাদের রাশিয়ায় চলে যাওয়াটা ছিল অপরিকল্পিত। গত ১৬ ডিসেম্বর সিরিয়ার প্রেসিডেন্সি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এমন দাবি করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, বাশার আল-আসাদ সিরিয়া ছেড়ে যেতে চাননি।

টেলিগ্রামে সিরিয়ান প্রেসিডেন্সি অ্যাকাউন্ট থেকে বিবৃতিতে দাবি করা হয়, সিরিয়া থেকে আমার প্রস্থানের পরিকল্পনাও ছিল না বা যুদ্ধের শেষ ঘণ্টায়ও আমি দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নিইনি। আমি ৮ ডিসেম্বর ভোর পর্যন্ত আমি দামেস্কে ছিলাম ও আমার দায়িত্ব পালন করেছি।

বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়, ৮ ডিসেম্বর সকালে আসাদ সিরিয়ার হামিমিমে রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে চলে যান ও ঘাঁটি আক্রমণের মুখে পড়লে রাশিয়া তাকে সরে যেতে বলে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ঘাঁটি ছেড়ে যাওয়ার কোনো কার্যকর উপায় না থাকায়, মস্কো অনুরোধ করেছিল যে ঘাঁটির কমান্ড ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আসাদকে রাশিয়ায় অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে। এটি দামেস্কের পতনের একদিন পরে ঘটেছিল।

বিবৃতিতে আসাদ আরও দাবি করেন, দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহীদের হাতে চলে যাওয়ার সময় আমি পদত্যাগ বা আশ্রয় চাওয়ার কথা বিবেচনা করিনি। কোনও ব্যক্তি বা দলও এমন প্রস্তাব আমাকে দেয়নি। বরং সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়াই একমাত্র কর্মপন্থা বলে আমার মনে হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি