বাঘায় আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশত

বাঘায় আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশত

প্রথম নিউজ, রাজশাহী : রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (২২ জুন) বেলা ১১টার দিকে বাঘা উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।

সংঘর্ষে আহতদের বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে বাঘায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত অবিস্ফোরিত তিনটি ককটেল ঘটনাস্থলে পড়ে ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বেলা ১১টার দিকে বাঘা পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আক্কাছ আলীর অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদে মানববন্ধনের ডাক দেয় স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের পক্ষের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকে আয়োজিত মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন সদ্য উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী রোকনুজ্জামান রিন্টু ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল। উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

অপরদিকে, সচেতন নাগরিকবৃন্দের ব্যানারে বাঘা সাবরেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সমিতির নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেয় উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু সমর্থিত স্থানীয় আওয়ামী লীগের আরেক গ্রুপ। মেয়র আক্কাছ আলীর নেতৃত্বে পৌরসভার সামনে থেকে এ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি অপর গ্রুপের মানববন্ধন অতিক্রমের সময় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তবে এ সংঘর্ষ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন উভয় পক্ষ।

উপজেলা চেয়ারম্যান লাভলু গ্রুপের সমর্থকদের দাবি, মানববন্ধন থেকে তাদের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা করা হয়েছে। আর এমপি শাহরিয়ার গ্রুপের সমর্থকেরা দাবি করেছেন, মিছিল নিয়ে এসে তাদের মানববন্ধনে হামলা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আহতরা হলেন বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলী, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দলের (জাসদ ইনু) কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য ও জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি, পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম, আবদুল খালেক, জারমান আলী, আশিক হোসেন, সুলতান আলী, ফিরোজ হোসেন, শাহাদত হোসেন, ইশতিয়াক হোসেন, কামাল হোসেনসহ অনন্ত ৫০ জন। তাদের উদ্ধার করে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে পথচারী উজ্জ্বল হোসেন নামে এক ব্যক্তি পুলিশের টিয়ারশেলে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া আশরাফুল ইসলাম বাবুল ও চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ দুই জনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দলের (জাসদ ইনু) কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য ও জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি বলেন, ‘আমি পরিস্থিতি থামাতে গিয়ে আহত হয়েছি।’

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় বাঘা বাজার এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচএ ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এখানে ১৮ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আরও অনেকেই বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রামেক হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। আর যারা ভর্তি রয়েছেন তাদের চিকিৎসা চলছে।’

সদ্য বাঘা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী রোকনুজ্জামান রিন্টু বলেন, ‘পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলীর নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে এসে আমাদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে হামলা চালানো হয়েছে। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলসহ আমাদের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বাবুলসহ দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

পৌর মেয়র আক্কাছ আলী বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে মানববন্ধন থেকে হামলা করা হয়েছে। এতে আমিসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছি। আহতদের বাঘা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

বাঘা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দুটি কর্মসূচিতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে বাঘ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে অনেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ ছাড়া বাবুলকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
Google News Logoবাংলা ট্রিবিউনের খবর পেতে গুগল নিউজে ফলো করুন