বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপরে হামলা হলে সমোচিত জবাব দেয়া হবে: মির্জা আব্বাস

১৯৮৬ সালের মতো যারা এবারো শেখ হাসিনার অধিনে নির্বাচনে অংশ নিতে চাইবে তারা ‘জাতীয় বেঈমান’ হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা আব্বাস।

বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপরে হামলা হলে সমোচিত জবাব দেয়া হবে: মির্জা আব্বাস

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপরে আর হামলা হলে ক্ষমতাসীনদের সমোচিত জবাব দেয়া হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

বিএনপিসহ বিরোধী দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার  জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মগহানগর এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমাদের আর কারো ওপরে হামলা হবে, কারো ওপরে জুলুম হবে আমরা এক যোগে ঝাঁপিয়ে পড়বো- কাউকে বিন্দু মাত্র ছাড় দেয়া হবে না, সমচিত জবাব দেয়া হবে। আজকে ড. খন্দকার মোশাররফ সাহেবের বাসায় ওপর হামলা হয়েছে, রেদোয়ান সাহেবের ওপর হামলা হয়েছে, আরো যাদের ওপর হামলা হয়েছে ..। আমরা আশা করছি যে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে ইনশাল্লাহ  এই প্রতিরোধ ও প্রত্যাঘাতের মাধ্যমেই আমরা আওয়ামী সরকারের পতন ঘটাবো।

মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে তথ্যকথিত বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন, রাজনৈতিক কর্মকান্ডে বাঁধা দেয়া হবে না। এই কথা যেদিন বললেন, তার ঠিক পরদিন আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাহেবের বাড়িতে হামলা করা হলো ঈদ পূর্নমিলনী অনুষ্ঠানে। এরপরে রেদোয়ান আহমেদের গাড়িতে হামলা করা হলো, বাংলাদেশে ১০/১২ টি জায়গায় হামলা করা হয়েছে ঈদ পুর্ণমিলনী উৎসবে।এই যে কর্মকান্ডগুলো করলো প্রধানমন্ত্রী বলার পরে্ এই ধরনের ঘটনা কী করে ঘটলো? প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ-আদেশ অথবা অনুরোধের পরে এই ধরনের ঘটনা ঘটলো। অর্থাত এদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী কিংবা চোর-বাটপার-লুটেরা আজকে প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে না। তাহলে কেনো খন্দকার মোশাররফের বাড়িতে হামলা হবে, কেনো রেদোয়ানের গাড়িতে হামলা হবে?

তিনি বলেন, খন্দকার মোশাররফের বাড়িতে হামলা হয়েছে… সেখানে কিন্তু আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ-যুব লীগ উত্তম-মধ্যম খেয়েছে, রেদোয়ানের ওখানে হামলা হয়েছে সেখানেও কিন্তু আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুব লীগ উত্তম-মধ্যম খেয়েছে… ।অর্থাত প্রতিরোধ শুরু হয়ে গেছে। এখন প্রত্যাঘাত করতে হবে তাদেরকে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদসহ বিএনপি ও  বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিনের যৌথ উদ্যোগে এই বিক্ষোভ সমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা এই বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেয়।

বিএনপি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আগামী শনিবার সারাদেশে জেলা পর্যায়ে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি করবে।

‘পাতানো নির্বাচনের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি: মির্জা আব্বাস বলেন, নির্বাচন কমিশনার বলছে, আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি ইভিএমে করব না স্বাভাবিক করবো। ওই দিকে প্রধানমন্ত্রী বলে ফেললেন যে, তিন‘শ সিটে ইভিএমে নির্বাচন হবে। তাহলে আমরা আজকে বলছি যে, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না-ওই কথা প্রমাণ হয়ে গেলো। হাসিনা সরকারের অধীনে, আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। এটা আমাদের বক্তব্য। বিভিন্ন পত্রিকায় দেখি কত আসন, এতো আসন…। আসন যারা ভাগ করছেন আমরা আপনাদের পা টা ভাগ করে দেবো। যে আসন ভাগ করতে চান-আসন ভাগের নির্বাচন বাংলাদেশে হবে না, কোনো আতাঁতের বাংলাদেশে হতে দেয়া হবে না-কথাটা মনে রাখবেন।

১৯৮৬ সালের মতো যারা এবারো শেখ হাসিনার অধিনে নির্বাচনে অংশ নিতে চাইবে তারা ‘জাতীয় বেঈমান’ হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, মান্না সাহেব(মাহমুদুর রহমান মান্না) বলেছেন, যারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান হবে। এই কথাটা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানের জনসভায় বলেছিলেন, এরশাদের অধিনে যারা নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান হবে। কিন্তু বলার পরে তিনি ঠিকই নির্বাচনে গিয়েছিলেন। অর্থাত তিনি নিজেকে জাতীয় বেঈমান হিসেবে প্রমাণিত করেছিলেন। এবারো যারা নিজেকে জাতীয় বেঈমান হিসেবে প্রমাণ করতে চাইবে ইনশাল্লাহ আমরা সরকার এবং তাদের বিরুদ্ধে একযোগে ব্যবস্থা নেবো। আগামী আন্দোলনে সকলকে একযোগে কাজ করার প্রস্তুতি নিতেও বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা।

‘শ্রীলংকা প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, শ্রীলংকায় আজকের এই অবস্থাটা কেনো হলো? কারণটা হলো চুরি। শ্রীলংকা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হয়ে গিয়েছিলো, শ্রীলংকা ঋণ নিতো, সেই ঋণের টাকায় মেগা প্রকল্প করতো আর মেগা প্রকল্পের টাকা বিদেশে পাঁচার করতো। একারণে সেখানে অর্থনীতিতে ধস নেমেছে, মানুষজন নিঃস্ব হয়ে গেছে। আপনারাও(বাংলাদেশ সরকার) কিন্তু এই কাজগুলো(মেগা প্রকল্প) স্টপ করছেন না। এখনো ১২টি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। ইতিমমধ্যে বিশেষজ্ঞরা ওইসমসস্ত মেগা প্রকল্পের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে, কথা বলছেন যে, এই সব প্রকল্প হলে বাংলাদেশ শ্রীলংকার মতো হতে পারে।”

‘সয়াবীন তেল মূল্য বৃদ্ধি সিন্ডিকেটের কারণে’

মির্জা আব্বাস বলেন,  দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে আমরা কয়েকবার সভা করেছি। চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। আমরা জানি যে, সাধারণ সরকার দ্রব্যমূল্য বেঁধে দেয় জনগনের সুবিধার্থে। আর এই সরকার তেলের মূল্য বৃদ্ধি হলো ব্যবসায়ীদের স্বার্থে। এই যে টাকা কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে দেশের মানুষ তা জানতে চায়। আবার তারা(সরকার) বলে কি জানেন, দেশে নাকী মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে- দুই হাজার ৮‘শ ৮২ টাকা …। কার কি আয় বেড়েছে আমি জানি না তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে এই নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, আওয়ামী লীগের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে গেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আওয়ামী লীগের বাইরে যারা আছে তারা যে না খেয়ে আছে এতে কোনো সন্দেহ নাই।”

ঢাকা মহানগর উত্তরেরে সদস্য সচিব আমিনুল হকের সভাপতিত্বে ও দক্ষিনের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন,বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল), বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, মহানগর বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমূখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে বিএনপির  প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক  মীর সরাফত আলী সপু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাশুকুর রহমান মাশুক, সেলিমুজ্জামান সেলিম, সহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, আমিরুজ্জামান শিমুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার মারুফ হোসেন, যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, সহ সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান,  স্বেচ্ছাসেবক  দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, সহ সভাপতি গোলাম সারোয়ার, আনু মোহাম্মাদ শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসীন আলী, দফতর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, সহ সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামান, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন নান্নু,  ওলামা দলের সদস্য সচিব মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদার, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল সহ মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom