টানেলের শেষ প্রান্তে আলোর রেখা দেখতে পাচ্ছি : মেজর হাফিজ
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা বন্ধ হচ্ছে না
প্রথম নিউজ,ঢাকা : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। আমরা চাই না আর কোনো ফেলানী কাঁটাতারে ঝুলে থাকুক। সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু আমরা দেখতে চাই না। তিনি বলেছেন, আমাদেরকে শক্তি অর্জন করতে হবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করে জনগণের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে এই ফেলানীদেরকে আগামী দিনে রক্ষা করবো। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে লেবার পার্টির ফেলানী হত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আগ্রাসন বিরোধী কনভেনশনে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মেজর হাফিজ বলেন, আজকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই, প্রধান বিচারপতিকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। বর্তমান সরকারকে সরাতে যে আন্দোলন বিএনপি করছে, তাতে টানেলের শেষ প্রান্তে আলোর রেখা দেখতে পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা টানেলের শেষে আলোর রেখা দেখতে পারছি। এই সরকারের আয়ু বেশি দিন নেই। রাজপথে অনেক বেশি লোকসমাগম হচ্ছে, সাধারণ মানুষও আসছে। পরিবর্তন আসবেই।’ চলমান ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তুলনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এগিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হচ্ছে, নৌকার ভরাডুবি হচ্ছে। স্বতন্ত্র ও বিরোধী প্রার্থীরা জয় পাচ্ছেন। নির্বাচনে এতো কারচুপির পরও তারা জিততে পারছে না। কারণ জনগণ তাদের ঘৃণা করে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের চেহারা কেমন, এক মুরাদ হাসানের মাধ্যমে আমরা দেখতে পেলাম। এ রকম অসংখ্য মুরাদ হাসান রয়েছে। মুরাদ হাসান হলো ‘টিপ অফ দ্য আইসবার্গ’। অধিকাংশ মুরাদ হাসানরা পানির নিচে, তাদের চেহারা এখনো দেখা যাচ্ছে না। সরকার পরিবর্তন হলে অসংখ্য মুরাদ হাসান পাবেন। সে দিন বেশি দূরে নয়, অপেক্ষা করুন।
সম্প্রতি দেশের একটি বাহিনীর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ ধরে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী দিনে তারা (আওয়ামী লীগ) নিশিরাতে নির্বাচন করতে পারবে না। যেহেতু বিশ্বের পরাশক্তির দৃষ্টি পড়েছে, একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে। আরো অনেক নিষেধাজ্ঞা আসবে। যদিও দেশের জন্য এটি লজ্জাকর। সরকার প্রতিহিংসামূলকভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘কষ্ট দিচ্ছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, এখন জনগণের উচিত বিএনপির নেতৃত্বে রাজপথে নেমে এই সরকারকে বিদায় করা। ৭ জানুয়ারি ফেলানী হত্যা দিবসে প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ লেবার পার্টির উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। ‘মানবাধিকার সংরক্ষণ সংস্থা’র নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট জহুরা খাতুন জুঁই এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থানার অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী খাতুন। পাঁচ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে ছিল তার লাশ। নির্মম ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে প্রতিবছর লেবার পার্টি দিনটিকে ফেলানী হত্যা দিবস পালন করে আসছে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় ছাত্র-যুবসমাজ ও দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম জোরদার করা সময়ের দাবি। একটি দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করে দেশে রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় ভারতীয় পানি আগ্রাসন ও সীমান্ত হত্যা বন্ধে জাতিসংঘের মাধ্যমে অধিকার নিশ্চিত করা একান্ত জরুরী। কেননা অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতার নামন্তর।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, খ্রীস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যালবার্ট পি কস্টা, লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফারুক রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোসলেহ উদ্দিন, রামকৃষ্ণ সাহা, বিএনপির প্রান্তিক বিষয়ক সম্পাদক অর্পনা রায় দাস, মুক্তিযোদ্ধা দলের যুগ্ম-সম্পাদক শহীদুল ইসলাম চৌধুরী মিলন, লেবার পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব আবদুর রহমান খোকন, হুমায়ুন কবীর, আর্ন্তজাতিক সম্পাদক খোন্দকার মিরাজুল ইসলাম, দেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন, মহানগর শ্রমিকদলের সম্পাদক মাহবুবুল আলম বাদল, দৈনিক সরকার সম্পাদক ওবায়দুল হক, ছাত্রমিশন সভাপতি সৈয়দ মো: মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: