বিএনপির রাজনীতিতে মিথ্যাচার ভর করেছে: হানিফ
আজ মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভায় আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, গতকাল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা নাকি এর সাথে জড়িত নয়। তার এই কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। অথচ এই মির্জা ফখরুল সাহেব নাকি আগে শিক্ষক ছিলেন। কোথায় শিক্ষক ছিলেন, আমি তা জানি না। একজন শিক্ষক এত নির্লজ্জ মিথ্যাবাদী হতে পারে, আমি তা আগে কখনো দেখি নাই! উনি একজন প্যাথোলজিক্যাল লায়ার। মিথ্যাবাদী, চরম মিথ্যাবাদী। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপির রাজনীতিটাই মিথ্যাচারে ভর করে আছে।
আজ মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভায় আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সন্ত্রাস-মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের অভয়াশ্রম বিএনপি-জামায়াতের নির্দেশে ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলা দিবস স্মরণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সাথে একই সূত্রে গাঁথা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। এটা বর্বোরচিত গ্রেনেড হামলা, এটা পৃথিবীর ইতিহাসে আরেকটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। বাঙালি জাতির জন্য এটি একটি কলঙ্কময় দিন। এই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে একটি রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য। সেসময় বিরোধী দলীয় নেত্রী ছিলেন আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। একটা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ছিল, প্রতিবাদী সমাবেশ ছিল না। এরপরেও সেখানে হামলা করা হলো। আর এর লক্ষ্য ছিল একটাই শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সকল সিনিয়র নেতাদের হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া অর্থাৎ আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দেয়া।
তিনি আরও বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত নেতাকর্মীদের হাসপাতালের নিয়ে যাওয়ার বিষয়েও নানা টালবাহানা করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্লিনিকে আহতদের চিকিৎসা করতে হয়েছে। বেগম আইভি রহমানকে সিএমএইচ-এ ভর্তি নিবে না, অনেক টালবাহানা করা হয়েছে। সেই সিএমএইচ এ আমাদের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা দেখতে যাবেন, কিন্তু তাঁকে গেইটে আটকে দেওয়া হলো। গাড়ি ঢুকতে দেবে না। এরপর নেত্রী পাঁচ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে সিএমএইচ এ গিয়েছিল! কতটা পৈশাচিক হলে এই রকম কর্মকাণ্ড করতে পারে। বেগম খালেদা জিয়া আহতরা যখন মুমূর্ষু অবস্থায় তখন নাটক করার জন্য দেখতে গেলেন। তখন আইভি রহমানের পুত্র, কন্যাকে পাশের রুমে আটকে রাখা হলো তালা দিয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা! কী নিষ্ঠুর আচরণ ছিল। শুধু তাই নয়, সংসদে বসে খালেদা জিয়া বললেন, শেখ হাসিনাকে কে মারতে যাবে? উনি নিজে ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গেছে। কী নিষ্ঠুর রসিকতা ছিল এটা!
বিএনপির উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভুলে গেছেন আজকে। আপনারা যদি ঘটনা নাই ঘটাবেন, কেন মিথ্যাচার করলেন? কেন মামলার আলামত নষ্ট করলেন? কেন আপনারা তড়িঘড়ি করে জঙ্গিদের ভুয়া পাসপোর্ট দিয়ে ওই রাত্রে বিদেশে পাঠিয়ে দিলেন। আমার প্রশ্ন-জঙ্গিদের সাথে সম্পৃক্ত না থাকলে কেন তাদের পাঠাতে হলো? যে ক্যাপ্টেন আলামত রাখতে বলেছিল তাকেও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে সবই তো আজকে ইতিহাসে চলে এসেছে। কিন্তু এখনো আপনারা নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। কিন্তু মিথ্যাচার করে পার পাওয়া যাবে কি? এটা ভাবার কোন কারণ নেই৷ আজকে প্রমাণিত হয়েছে ওই ঘটনার সাথে আপনাদের দলই নয়, বরং সরকারও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল।
হানিফ বলেন, এই ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, ১৭ জনের যাবজ্জীবন হয়েছে। কিন্তু ওই ঘটনার মূল হোতা, মূল ক্রিমিনাল-মাস্টারমাইন্ড সন্ত্রাসী তারেক রহমানের মৃত্যুদণ্ড হয় নাই। যার কারণে এই রায় এই দেশের মানুষেরই কাছে মনঃপুত হয় নাই। আমরা খুশি হতাম ঐ রায় পুনর্বিবেচনা করে ঐ সন্ত্রাসী তারেককে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে এদেশের সন্ত্রাস নির্মূলে জোরালে ভূমিকা রাখলে। আমি এই বিষয়ে মাননীয় আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এছাড়া সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটির নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।