বিএনপি শূণ্য করতে সারাদেশে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে: রিজভী 

বিএনপি শূণ্য করতে সারাদেশে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে: রিজভী 

প্রথম নিউজ, ঢাকা : ‘বিএনপি শূণ্য’ করতে সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শনিবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিঙে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ গ্রেফতার থামছে না। দেশের জাতীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্য্ন্ত, ইউনিয়ন পর্যন্ত গ্রেফতারের যে হিড়িক চলছে, যে ধারা চলছে সেটা ভাষায় বলা যাবে না এবং তার সাথে চলছে আক্রমনে আক্রান্ত হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনাও কিন্তু থামছে না।”

রিজভী জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১৭৬ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বিভিন্ন মামলায় ৫৭৫ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে।

২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এই পর্যন্ত ৭ হাজার ৭১৩ জন, মোট মামলা হয়েছে ৫০৬টির অধিক, মোট আসামী ৩৮ হাজার ৫৬০ জন, মৃতু ১০ জন এবং আহত ৫ হাজার ৭৮০ জন।

তিনি একতরফা নির্বাচন চান’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী থাকার যে কি স্বাদ সেই তো তিনি পেয়েছেন। সেই স্বাদের কারণে তিনি(শেখ হাসিনা) অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চান না। দরকার হলে আরো যদি রক্ত ঝরাতে হয়, রক্ত ঝরিয়ে হলেও তিনি এক তরফা নির্বাচন করবেন। বিদেশী একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগনই নাকী তার মূল শক্তি। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিজে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিচ্ছেন না কেনো? জনগন সাথে থাকলে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে অবাধ, অংশগ্রহনমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে ভয় পাচ্ছেন কেনো? ”

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘‘ কেনো আপনি নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপিসহ বিরোধী দলের কর্মসূচিতে নিঃশংস্ব হামলা চালিয়ে শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে কারা অন্তরীণ করেছেন? কেনো আপনি দেশব্যাপী ব্যাপক ধড়পাকড় করেছেন বিএনপিসহ তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের। নেতা-কর্মীদের ধরতে গিয়ে বাসায় না পেয়ে তাদের বাবা, ভাইকে আটক করেছে।”

‘‘ আপনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দলীয় ক্যাডাররা রক্তাক্ত আক্রমন চালিয়ে নেতা-কর্মীদের হত্যা ও বিপুল সংখ্যক মানুষকে জখম কেনো করেছেন? আপনি এতোটাই বিধবংসী হয়ে উঠেছেন যে, দেশব্যাপী ধড়পাকড় করে ভীতির পরিবেশ তৈরি করছে।”

‘৭১ সালের অবস্থা বিরাজ করছে’

রিজভী বলেন, ‘‘ বিএনপিকে বল প্রয়োগে উতখাতের পরিকল্পনা নিয়েছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে এখন একাত্তরের ভয়াল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একাত্তরে হানাদার বাহিনীর হিংস্রতা ও দুঃশাসন হুবুহু নকল করছে আওয়ামী সরকার। তাদের শান্তি কমিটির মতো এখন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করছে।”

‘‘ হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের না পেলে তাদের পরিবারের লোকদের ধরে নিয়ে যেতে। আওয়ামী পুলিশ সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করছে। ছেলে না পেলে তার ভাইকে, ভাইকে না পেলে তার বাবাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সারা দেশ থেকে এই অমানবিক মনুষ্যত্বহীন সংবাদ প্রতিনিয়ত আমাদেরকে শুনতে হচ্ছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ উদ্ভট গায়েবি মামলার নতুন নতুন মডেল দেখতে পারছি। ঢাকাতে গ্রেফতার যুব দলের নেতা মামুনের বিরুদ্ধে বরিশালে ককটেল নিক্ষেপের মামলা করা হয়েছে। যখন সে ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছে তার বেশ কিছুদিন পরে মামলা দিয়েছে ককটেল বিস্ফোরনের অভিযোগে।”

‘‘ জেলে থেকে নাকি ট্রাকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করেছেন বিএনপি নেতা কাঁকন। আপনারা দেখবেন সংবাদপত্রে কিন্তু এই বিষয়গুলো আসছে। এই তাজব্যের কাহিনী, এই তামাশার কথা-বার্তার কথা আমরা প্রায় শুনি, এসব সংবাদ গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। এই সমস্ত হাস্যকর মামলা দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের জুলুম-নির্যাতন-হয়রানির ভয়ংকর আবর্তের মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে।”

‘কারাবন্দি শীর্ষ নেতাদেরাও নির্যাতিত’

রিজভী বলেন, ‘‘ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ কারাগারে। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এর সাথে প্রচন্ড অসদাচরণ করা হচ্ছে। তাকে চিকিতসা থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে।”

‘‘ তার উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস, তিনি উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। গ্রেফতারের পর তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে কোন ঔষধ পর্যন্ত দেয়া হয় নাই। এক মনুষ্যত্বহীন অবিচারে তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে কষ্ট দেয়া হচ্ছে।”

‘উনার বিপদজনক হুমকি’

রিজভী বলেন, ‘‘ আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিষাক্ত মোহেরের আঁছড়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে ছিন্নভিন্ন করতে চাচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অবরোধ, অগ্নি সন্ত্রাস যারা করবে তারা কেউ যেন পার না পায়। যদি কেউ ধরা পড়ে তাকে ধরে ওই আগুনে ফেলতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভয়ানক অগ্নিকুন্ডলিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিক্ষেপের হুমকি… ভয়ংকর সর্বনাশী হুমকি। সরকারের সমগ্র চক্রান্তের পরিসমাপ্তি যারা মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে কারাগারে বন্দি নেতাদের বোমা ছুঁড়ে মারার মামলা দিতে পারে তারা আর শান্তিপূর্ণ অবরোধকারী নিরহ নেতা-কর্মীদেরকে অগ্নি সন্ত্রাসী বানিয়ে পুঁড়িয়ে মেরে ফেলতে পারে.. এটা অসম্ভব কিছু না… তাদের দ্বারাই এটা সম্ভব।”

‘‘ প্রধানমন্ত্রীর এই বিপদজনক হুমকিতে সারা জাতি স্তম্ভিত। জাতীয় সহিষ্ণুনতা ভেঙে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য সংঘাতমময় পরিস্থিতে উসকে দিচ্ছে। মন্ত্রীরা জাতিসংঘ, গণতান্ত্রিক দেশগুলো আহ্বান ও মানবাধিকার সংস্থার আহ্বান আমলে নেওয়া দূরে থাক, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২৮ অক্টোবরে ফুটেজ যেগুলো প্রকাশ পেয়েছে তার প্রতিটাতে দেখা যায় পুলিশের পাশে লাঠিশোঠা নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকেরা আছে। বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধে পুলিশ, ছাত্র লীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগ একযোগে মোকাবিলা করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়া্মীক্যাডাররা একে অপরের পরিপূরক।”