ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের আত্মপ্রকাশ
ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলাই এই ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের লক্ষ্য।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: ৯ দফার ভিত্তিতে ১৫টি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল এই ছাত্র ঐক্য গঠনের ঘোষণা দেন। ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলাই এই ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের লক্ষ্য। ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়কারী করা হয়েছে তিনজনকে। তারা হলেন, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের মশিউর রহমান খান রিচার্ড ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আরিফুর রহমান আদীব।
১৫টি ছাত্র সংগঠন হলো: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্রসমাজ (পার্থ), জাগপা ছাত্রলীগ (লুৎফর) ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন।
ছাত্র ঐক্যের ৯ দফা প্রস্তাবনা হলো:
১. বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারে আন্দোলনরত দলগুলোর ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা।
২. শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য হবে মানবিকতার বিকাশ, নৈতিকতা বোধের উন্নতি, মানুষে মানুষে বৈষম্য বিরোধী চিন্তার অনুশীলন এবং এই লক্ষ্য পূরণে শিক্ষা কাঠামো, পাঠদান পদ্ধতি, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক সমস্ত ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক চর্চাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির অন্তত ৫ ভাগ বরাদ্দ করে সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বিকাশের উপযোগী হয়ে জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়। একটি উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এর প্রয়োজন মেটাতে বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণায় সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষার বিকাশ। বুনিয়াদি শিক্ষাকে সার্বজনীন, অবৈতনিক ও মানসম্মত করার উদ্যোগ গ্রহণ।
৩. সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ নিবর্তনমূলক সকল আইন বাতিল করতে হবে।
৪. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্যাতনবিরোধী আইন করে শিক্ষাঙ্গনগুলোকে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব মুক্ত করা, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, প্রথম বর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রদের সিট পাওয়ার বৈধ অধিকারের স্বীকৃতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ। সর্বোপরি দলমত নির্বিশেষে সকল সংগঠনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৫. শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর পুনঃনির্ধারণ, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার পুনর্বিন্যাসসহ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ। শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি করে পর্যাপ্ত উপকরণ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও মনোযোগের কথা মাথায় রেখে মিড ডে মিল চালু করতে হবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট (মূল্য সংযোজনী কর) আরোপ করা চলবে না। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন-ফি কমাতে হবে এবং অভিন্ন নীতিমালা ও বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে।
৬. জ্ঞানকে গভীর করার জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ফলে সারা বিশ্বের সমস্ত ধ্রুপদী সাহিত্য ও পাঠ্যপুস্তককে মাতৃভাষায় রূপান্তরের জন্য একটি জাতীয় অনুবাদ সংস্থা স্থাপন করে দ্রুততার সাথে এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
৭. বর্তমান সরকার যেভাবে ইতিহাসের ব্যক্তিকেন্দ্রিক বয়ান তৈরি করেছে এবং জনগণের ভূমিকাকে নির্বাসিত করেছে তার বদলে বাংলাদেশের জনগণের নির্ধারক ভূমিকাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ইতিহাসে সকল ব্যক্তির যার যা অবদান আছে তার স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সামনে প্রকৃত ইতিহাস পৌঁছে দেয়ার জরুরি কাজটি করার জন্য পাঠ্যপুস্তক সংস্কার করতে হবে।
৮. শিক্ষার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণের সমস্ত ব্যবস্থা এবং শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সহজ শর্তে শিক্ষা ঋণ দিতে হবে। সকল শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবিমার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে।
৯. সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর সুযোগের সমতা এবং নাগরিক অধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।