ফেনীতে আগুনে দগ্ধ ২ শিশু মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার ২
প্রথম নিউজ, ফেনী : ফেনীতে বসতঘরে আগুন লেগে দগ্ধ দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলায় প্রধান আসামিসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মামলার প্রধান আসামি ছাগলনাইয়া পশ্চিম মধু গ্রামের আবু আহম্মদের ছেলে আবদুল আজিম (৪৫) এবং মধ্যম বিরিঞ্চি এলাকার জয়নালের স্ত্রী মায়া বেগম (৪০)।
শনিবার (৭ অক্টোবর) দুপুর দেড়টার দিকে ফেনীস্থ র্যাব-৭ এর কোম্পানি অধিনায়ক মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব জানায়, মামলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে র্যাব বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছাগলনাইয়া পূর্ব মধুগ্রাম এলাকা থেকে আজিমকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যমতে শহরের মধ্যম বিরিঞ্চি এলাকা থেকে আরেক আসামি মায়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত দুইজন মামলার পলাতক আসামিদের সহায়তায় পরস্পরের যোগসাজশে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক বিরোধের জেরে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন দিয়ে দুই শিশুকে পুড়িয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। কোম্পানি অধিনায়ক মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের ফেনী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে নিহতদের বাবা সহিদুল ইসলাম রনি বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মধ্যম বিরিঞ্চি এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে জনি (২২), মৃত বেগু ড্রাইভারের ছেলে আনোয়ার (৫২), ছাগলনাইয়ার পশ্চিম শিলুয়া এলাকার মৃত ইলিয়াছ ড্রাইভারের ছেলে বাদল (৪২), তার ভাই রমজান আলী (৩৮), মৃত মিন্টু ড্রাইভারের ছেলে দিদার (৩২), মৃত গফুর ড্রাইভারের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪২), মৃত শাহজাহান ড্রাইভারের ছেলে রকি (২৮), মৃত হেঞ্চু মিয়ার ছেলে মিয়া ড্রাইভার (৫২), মো. সবুজের ছেলে সজিব (২২), মৃত সোনা মিয়ার ছেলে মো. মিয়া (৫২) এবং শাহ আলম মেম্বারের মেয়ে মোকছেদা আক্তার সুমি (৩০)।
গত মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টার দিকে ফেনী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বিরিঞ্চি এলাকার রনি ও পলি দম্পতির দুই ছেলে মাইদুল ইসলাম শাহাদাত (১৩) এবং রাহাদুল ইসলাম গোলাপ (৬) বসতঘরে আগুন লেগে মারা যায়। পূর্ব বিরোধের জেরে দেওয়া আগুনে এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি পরিবার ও স্থানীয়দের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রনির বাড়িতে আগুন লাগে। ঘরের দরজা দুই দিক থেকে বন্ধ থাকায় কেউই ঘর থেকে বের হতে পারেনি। পরে তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে রনির বড় ছেলে মাইদুলের দগ্ধ মরদেহ খাটের ওপরে পাওয়া যায়। আর ছোট ছেলে রাহাদুলকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সেও মারা যায়। এ ঘটনায় মা পলিও দগ্ধ হয়েছেন।
মৃত দুই শিশুর চাচা কামরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর ফকির বাড়ির হোনা মিঞা মারা যান। পারিবারিক কবরস্থানে অনুমতি ছাড়া প্রতিবেশী জনি ও আনোয়ার তাদের স্বজনের মরদেহ দাফন করতে গেলে কথা কাটাকাটি হয়। তখন তার পরিবারের আনোয়ার, আজিম, বাদল, রমজান ও জনি আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এই বিরোধের জেরেই পেট্রোল ঢেলে ঘরে আগুন লাগিয়ে দুই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
আগুন নেভাতে অংশ নেওয়া স্থানীয়রা জানান, আগুন নেভাতে গিয়ে তারা দেখেছেন ঘরের মূল গেইট বাইরে থেকে কাপড়ের টুকরো দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল, যাতে কেউ বের হতে না পারে।