পশ্চিমবঙ্গে ভোটে মৃত ১৭, কেন্দ্রীয় বাহিনী গেল কোথায়?

পশ্চিমবঙ্গে ভোটে মৃত ১৭, কেন্দ্রীয় বাহিনী গেল কোথায়?

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১৭ জন। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, পঞ্চায়েতে প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখতে হবে। তবে আদালতের সেই নির্দেশনার পরও অনেক বুথেই তাদের দেখা গেল না।

এই পরিস্থিতিতে রোরবারও কুলতলি থেকে একজন তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর খবর এসেছে। গুলি, বোমা, বুথদখল, বিক্ষোভ, মারামারি কী হয়নি এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। মনোনয়নপর্ব থেকে শুরু করে ভোট পর্যন্ত ৩৯ জনের প্রাণ গেছে।


নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে করার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। শনিবার পর্যন্ত রাজ্যটিতে ৬৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। সাধারণত এক কোম্পানিতে একশ থেকে ১২৫ জন জওয়ান থাকেন। ক্ষেত্রবিশেষে তার বেশিও হতে পারে।

এক কোম্পানিতে একশ জন জওয়ান ধরলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান এসেছে ৬৫ হাজার। কিন্তু শনিবার ভোটের দিন অনেক বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনো জওয়ানকে দেখা যায়নি।

তারপরই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে তারা গেলেন কোথায়? যে সব জেলায় ভয়াবহ সহিংসতা হয়েছে, সেখানে কেন সব বুথে তারা ছিলেন না? রাজ্য নির্বাচন কমিশন কি এইভাবে হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করতে পারে?

রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সমন্বয়ের ভূমিকায় ছিলেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) আইজি বুদাকোটি। তিনি কমিশনকে জানিয়েছিলেন, রাজ্যে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি রয়েছে, তাতে একজন জওয়ান রাখলে তাদের নিরাপত্তার চিন্তা থাকছে। তাই প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে অন্তত চার থেকে পাঁচ জন জওয়ানকে মোতায়েন করতে হবে। একটি ভোটকেন্দ্রে একাধিক বুথ থাকে।

রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিং প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী আসতে এতো দেরি হলো কেন? আমরা তো ২২ তারিখ তাদের জানিয়েছিলাম। তারপর বেশ কয়েকবার মনে করিয়ে দিয়েছি। তারপরও গত ৩ জুলাই ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী এলো। আগে এলে সুবিধা হতো।’

আর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুক্তি, বাহিনী কোথায় মোতায়েন করা হবে তা আগে থাকতে জানাতে হয়। সেইমতো ট্রেন ও অন্য যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হয়। এর জন্য সময় লাগে। নির্বাচন কমিশনের অসহযোগিতার কারণেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর যেতে দেরি হয়েছে।

‘পঞ্চায়েতে এভাবে সম্ভব নয়’
পঞ্চায়েত ভোটের সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের পার্থক্য আছে। এখানে অনেক বেশি বুথ থাকে। সাংবাদিক আশিস গুপ্ত বলেছেন, ‘সব বুথে প্রচুর কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে ভোট করতে গেলে আড়াই লাখ জওয়ান লাগবে। ভোটের দিন কয়েক আগে ৬৫-৭০ হাজার জওয়ান আসবে, তাদের গ্রামে গ্রামে মোতায়েন করা যাবে বলে যারা মনে করছেন, তারা বাস্তবসম্মত চিন্তা করছেন না। ফলে লোকসভা ভোটে যা সম্ভব, তা পঞ্চায়েত ভোটে সম্ভব নাও হতে পারে।’

সাংবাদিক শরদ গুপ্তার মতে, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দায়িত্ব তো নির্বাচন কমিশনের। লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের হাতে দায়িত্ব থাকে। ফলে তারা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েন করে নির্বাচন করতে পারে। পঞ্চায়েত ভোট করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।’

পাল্টা প্রতিরোধের ছবি
এবার পঞ্চায়েত ভোটে দেখা গেছে, তৃণমূলেরও প্রচুর কর্মী মারা গেছেন। কোথাও আইএসএফ, কোথাও বাম, কোথাও কংগ্রেস এহং কোথাও বিজেপিও পাল্টা মারের রাস্তায় গেছে। কোথাও তো গ্রামবাসীরা ভোট দিতে না পেরে বুথ ঘেরাও করে রেখেছেন। ব্যালট বাক্স পুকুরে ফেলে দিয়েছেন।

কোথাও গ্রামবাসীরা সন্ত্রাস করতে আসা মানুষকে তাড়া করেছেন, ধরতে পারলে মারধর করেছেন।

আশিস গুপ্ত মনে করেন, ‘এটা হবেই। কারণ, বিরোধী দলগুলোর অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। শাসক দলের পক্ষ থেকে যে কাণ্ড করা হচ্ছে, তাতে তাদের টিকে থাকতে গেলে প্রতিরোধ করতে হতোই। তাই তারাও কিছু এলাকায় একই পন্থায় তৃণমূলকে ঠেকাতে গেছে। লোকসভা ভোটের সময় এরকম ঘটনা বাড়তেই পারে।’

শরদও মনে করেন, ‘পঞ্চায়েতকে ঘিরে সহিংসতার যে ছবি দেখা গেছে, তাতে এটা স্বাভাবিক। ভাঙরে মনোনয়নপত্র যাতে জমা দিতে না পারে, সেজন্য বিডিও অফিস কার্যত ঘিরে রেখেছিল শাসক দলের কর্মীরা। বোমা ও গুলির বন্যা বয়ে গেছে। রাজনীতিতে কোনোকিছুই তো একতরফা হতে পারে না।’