পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয় ভারতের চেয়ে দ্বিগুণ কেন প্রশ্ন ড. মইন খানের

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মিডিয়া সেল কর্তৃক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয় ভারতের চেয়ে দ্বিগুণ কেন প্রশ্ন ড. মইন খানের

প্রথম নিউজ, ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশের মত জনঘনত্বপূর্ণ একটি দেশের জন্য অপরিণামদর্শীতার একটি জলন্ত উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, ভারতে তামিলনাড়ুর কুদামকুলীনে একই মডেলের ২০০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয় ৬.৭ বিলিয়ন ডলারে সম্পন্ন হলেও একই কোম্পানির রূপপুর প্রকল্পের ব্যায় দ্বিগুণেরও বেশি কেন? এটি মূলত সরকারের অব্যাহত দুর্নীতির একটি জ্বলন্ত প্রমাণ।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মিডিয়া সেল কর্তৃক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মঈন খান বলেন, কতটা মূল্য দিয়ে আমরা ২৪০০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পাচ্ছি, কোন কোন যুক্তির ভিত্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলো, সেটি একটি ব্যপক গবেষণার বিষয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প যেন বাংলাদেশের দুঃশাসন ও দুর্নীতির এক জাইগান্টিক মনুমেন্ট। বিগত সময়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতাধীন আবাসন ও বালিশকাণ্ডের অবিশ্বাস্য দুর্নীতিই মূল প্রকল্পে দুর্নীতির ব্যাপকতা প্রমাণ করে।

তিনি বলেন, ১২.৮০ বিলিয়ন ডলারের প্রাক্কলিত এই প্রকল্প নিশ্চিতভাবে ২০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে। যার ১২ বিলিয়নের উপর রাশিয়ার সাপ্লাই ক্রেডিট। আওয়ামী অর্থনৈতিক দুঃশাসনের অন্যতম মাধ্যম হলো- এই সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট। কিভাবে এই প্রকল্পে বিপুল ব্যয় নিরূপণ হলো, কোন অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে এই ব্যয়ের বাণিজ্যিক কার্যকরীতা নিরুপণ করা হয়েছে সেটা কখনোই জনসম্মুখে আসেনি।

তিনি আরও বলেন, কোন যথার্থ বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা ছাড়াই এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে এখানে দুই ধরনের বিপর্যয় স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক, অর্থনৈতিক বিপর্যয়- যার অন্তরালে রয়েছে সীমাহীন দুর্নীতি এবং দুই, হলো ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা। এনার্জি সিকিউরিটির নামে মেগা দুর্নীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতি এবং জীববৈচিত্র্যকে চূড়ান্ত হুমকির সম্মুখীন করার জন্য, অপরিনামদর্শী শেখ হাসিনার সরকারকে একদিন ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে, বাংলাদেশ কখনো তাকে ক্ষমা করবে না।

সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, বাংলাদেশে এই প্রকল্পটির গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। তার অন্যতম হচ্ছে আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব, কৃষিখাত ও নদ-নদীর উপর এর প্রভাব। বিশ্বের প্রধান পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারকরী দেশগুলোর কোনটিরই জনসংখ্যার ঘনত্ব যেখানে ৬৫০ জনের বেশি নয় সেখানে বাংলাদেশে এ সংখ্যা ১১১৫.৬২ জন প্রতি বর্গকিলোমিটারে। এরূপ জনঘনত্বের একটি দেশে ব্যয়বহুল প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে শতবার বিশ্লেষণ অপরিহার্য ছিলো। সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত এরূপ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সরাসরি বাতিল করেছে।

তিনি বলেন, এই প্রকল্পে জ্বালানি হিসাবে যে ইউরোনিয়াম ব্যবহার করা হবে তার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মানবস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ। এর পাশাপাশি এক-একটি চুল্লির অভ্যন্তর শীতল করতে প্রতি মিনিটে ৪ লাখ ৫৫ হাজার গ্যালন পানি প্রয়োজন হবে। যা সংগ্রহ করা হবে মূলত পদ্মা নদী অথবা ভূগর্ভস্থ জলাধার থেকে। চুল্লি থেকে নির্গত ৯৯ শতাংশ পানি উত্তপ্ত অবস্থায় আবার ধীর স্রোতের পদ্মা নদীতেই ফেলা হবে। স্মরণযোগ্য যে, পদ্মা নদী আমাদের দেশের বৃহত্তম জলাধার ও মৎস্য ভান্ডার।