পরিমাণে কম দেয় অর্ধেকেরও বেশি পেট্রোল পাম্প

আগস্ট মাসে দেশের ৭৭টি পেট্রোল পাম্পে অভিযান পরিচালনা করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এরমধ্যে ৪৫টি পেট্রোল পাম্পকেই পরিমাপে গড়মিল পাওয়া গেছে। সেই হিসাব বলছে, দেশের ৫৮ ভাগ পেট্রোল পাম্পই পরিমাণে কম দেয়।

পরিমাণে কম দেয় অর্ধেকেরও বেশি পেট্রোল পাম্প

প্রথম নিউজ, ঢাকা: পেট্রোল পাম্পগুলোতে পরিমাণে কম দেওয়ার অভিযোগ বেশ পুরনো। এবার খোদ সরকারি সংস্থার অভিযানেই এর প্রমাণ মিললো। গত আগস্ট মাসে দেশের ৭৭টি পেট্রোল পাম্পে অভিযান পরিচালনা করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এরমধ্যে ৪৫টি পেট্রোল পাম্পকেই পরিমাপে গড়মিল পাওয়া গেছে। সেই হিসাব বলছে, দেশের ৫৮ ভাগ পেট্রোল পাম্পই পরিমাণে কম দেয়। তবে মালিকপক্ষ বলছে, পরিমাপক ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় এধরনের গড়মিল পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে একসঙ্গে বসারও অনুরোধ তাদের।

জ্বালানি বিভাগের একটি বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়গুলো আগস্ট মাসে মোট ৭৭টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। এরমধ্যে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ৩৪টি, মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ২২টি এবং যমুনা অয়েল কোম্পানির ২১টি পেট্রোল পাম্প ছিল। এরমধ্যে পদ্মার ২৩টি, মেঘনার ১২টি এবং যমুনার ১০টির বিরুদ্ধে পরিমাণে কম দেওয়াসহ নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। এরমধ্যে প্রধান অভিযোগই ছিল পরিমাণে কম দেওয়া।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, দেশের পেট্রোল পাম্পগুলো আগে তেলে ব্যাপক পরিমাণ ভেজাল দিতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। আর একারণে এখন আর ভেজাল দিতে পারে না পাম্প মালিকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পেট্রোল পাম্পে পরিমাণে কম দেওয়াসহ নানা অভিযোগে জ্বালানি বিভাগ নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকদের অনুরোধ করে। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে সারাদেশের পেট্রোল পাম্পে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয় না। মাঝে-মাঝে অভিযান পরিচালনা করা হলে বড় রকমের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত সারাদেশের পেট্রোল পাম্পে কতগুলো অভিযান পরিচালিত হলো তা একমাস পরপর জেলা প্রশাসন থেকে জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়। সেই হিসাব ধরে অর্ধেকের বেশি পেট্রোল পাম্পের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন ওই বৈঠকে জ্বালানি তেল পরিমাপে কম দেওয়া এবং ভেজাল প্রতিরোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন।

তেল বিপণন কোম্পানিগুলো থেকে এসব বিষয় পর্যবেক্ষণে কর্মকর্তা রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ওই কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এসব কাজ হয়ে থাকে। তারা নিয়মিত মনিটরিং করলে এটি হওয়ার কথা নয়। বিপিসির এক কর্মকর্তা জানান, পেট্রোল পাম্পগুলোকে জরিমানার সঙ্গে সঙ্গে এই কর্মকর্তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু সেগুলো কিছুই করা হয় না। এজন্য মাঠ পর্যায়ে জ্বালানি তেল নিয়ে জালিয়াতি থামছে না।

সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগ গ্যাস চুরির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বশীলদের জবাবদিহির আওতায় এনেছে। তেল বিপণনের ক্ষেত্রেও এমন কিছু করা সম্ভব হলে সাধারণ মানুষ আরও ভাল সেবা পেত বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগ থেকে পেট্রোল পাম্পগুলোর জিপিআরএস লোকেশন চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে পেট্রোল পাম্পগুলোর তেল ক্রয় এবং বিক্রয়ের তথ্য ডিজিটাল প্রক্রিয়াতে রাখা গেলে সাধারণ মানুষকে তারা ফাঁকি দিতে পারতো না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল বলেন, আমরা প্রতিবার বলে আসছি, উনারা যেসব ওজন মাপার মেশিন নিয়ে যান সেগুলোর সঙ্গে আমাদেরগুলোর অনেক তফাত। তাই পরিমাপ এক হয় না। পাম্পগুলোতে যাতে পরিমাপে কম না দেয়, সে বিষয়ে আমরা বার বার সতর্ক করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাম্প মালিকরাও চান বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে হোক। এটি করতে হলে দুই পক্ষ মিলে বসে পরিমাপের পাত্র নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তা না হলে এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ কোনোদিন মিটবে না।’

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom