প্রতিশ্রুতিতে আস্থা নেই ভোটারদের, চান না অতীতের পুনরাবৃত্তি
প্রথম নিউজ, বরিশাল: দুইদিন পরেই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ৩৫ দফা, জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ৩০ দফা, ইসলামী আন্দোলন মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম ১৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। শনিবার ইশতেহার ঘোষণা করবেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন।
ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি ও ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বাহারি বিজ্ঞাপনের সঙ্গে রয়েছে কর্মী-সমর্থকদের নানা প্রচারণা। তবে সেসব প্রতিশ্রুতিতে মন গলছে না ভোটারদের। বিগত বছরগুলোতে প্রতিশ্রুতির জোয়ারে ভেসে উল্টো দুর্ভোগ আর হয়রানির শিকার হতে হওয়ায় এবার যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার কথা বলছেন তারা।
নগরীর ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিগত ২৫ বছর এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একজনই। এবারও তিনি এসে বিভিন্ন অঙ্গিকার করেছেন। আসলে তাকে দিয়ে ওয়ার্ডবাসীর কোনো উপকার হচ্ছে না। ফলে ওয়ার্ডবাসী হয়তো এবার বিকল্প কাউকে বেছে নিবেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ এবং তার আগের মেয়র আহসান হাবিব কামাল নগরবাসীর জন্য কোনো কাজই করেননি। উল্টো সাদিক আব্দুল্লাহ বিভিন্নভাবে নগরবাসীকে হয়রানি-অপমান-অপদস্ত করেছেন। যদিও ভোট চাইতে এসে তিনি আমাদের বড় বড় আশা দেখিয়েছিলেন। সুতরাং ভোটে আমি এবার কাউন্সিলর আর মেয়র পদে কারোর প্রলোভনে পড়ে ভোট দিব না।
২৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনিরা বেগম বলেন, সাদিক মেয়া খুব বড় বড় স্বপ্ন দেখাইছিল। তাকে ভোট দিলে নগরী সিঙ্গাপুর হবে। আমরা এখন নলছিটি উপজেলার চেয়েও খারাপ অবস্থানে আছি। সতুরাং সাদিক মিয়ার চাচা বা লাঙ্গলের তাপস কিংবা চরমোনাই হুজুরে এসে যত কথাই বলুক কারো আশ্বাস আর বিশ্বাস করতে চাই না। ভোট গেলে কেউ মনে রাখে না। কেন্দ্রে গিয়ে যাকে মনে করবো কথার চেয়ে কাজ বেশি করবে তাকে ভোট দিব।
৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন, নৌকা, লাঙ্গল, হাতপাখা ও টেবিল ঘড়ির প্রার্থীরা এসেছিলেন। তারা অনেক কথা বলে গেছেন। তবে কথায় বিশ্বাস কমে গেছে। সাদিক ভাই সিঙ্গাপুর বানানোর কথা বলেছিলেন। কিছুই করতে পারেনি। সতুরাং কেউ বরিশালকে সিঙ্গাপুর করবে তেমন আলৌকিক প্রতিশ্রুতি আর শুনতে চাই না, বিশ্বাসও করতে চাই না। ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, সারা বছর ভোগান্তিতে থাকতে হয়। কাউন্সিলরকে বললে বলেছে কর্পোরেশনে বরাদ্দ নেই। আর সাদিক ভাই কোনো কাজ করতে পারেনি। তার আগেরবার কামাল মিয়াকে ভোট দিয়েছিলাম, তিনিও কিছু করতে পারেননি। এবার আর এসব ভুল করবো না। যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পাই তাহলে কারো কথায় না, মনের মত প্রার্থীকে ভোট দিব। আর যদি কেউ ভোট আগেই দিয়ে দেয় তাহলে তো কোন কথা নাই।
২৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফারুক মির বলেন, দল বা রাজনৈতিক বিবেচনায় না, এবার ভোট দেব যিনি বরিশালকে উন্নত করার আন্তরিকতা দেখাবেন তাকে। ২১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহবুবা মোর্শেদ আসমা বলেন, বিভাগীয় শহরে বাস করেও কোনো সুযোগ-সুবিধা পাই না। পানি না থাকলেও অনেক মানুষ পানির বিল দিতে বাধ্য হয়। সিটি কর্পোরেশন যেখানে নগরবাসীর কষ্টের কথা শুনবে সেখানে পাথরের মত চেপে বসেছিল। যদি ১২ তারিখ ভোট দিতে পারি তাহলে আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিব। আমি নৌকা, লাঙ্গল, হাতপাখার ইশতেহার পড়ে দেখেছি। মনে হয়েছে সক্ষমতার চেয়ে অতিরঞ্জিত লিখে সকলেই মন ভোলানোর চেষ্টা করছেন। আমার স্বামীও একটি দল করেন। তাকে শ্রেফ বলে দিয়েছি যেন তার সিদ্ধান্ত আমার ওপরে চাপাতে না আসে। আমার মত নগরবাসীরও উচিত হবে যাকে যোগ্য মনে করবে তাকে বেছে নিতে। অন্তত কারো মন ভোলানো গল্পে আমরা ভেসে না যাই।
একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শহিন হাওলাদার বলেন, পশ্চিম কাউনিয়া এলাকাটি বর্ধিত এলাকার চেয়েও অবহেলিত। আমরা মজিবর রহমান সরোয়ারকেও মেয়র নির্বাচন করে দেখিছি, আবার শওকত হোসেন হিরনকেও মেয়র করেছি। কামাল, সাদিককেও ভোট দিয়েছিল নগরবাসী। ফলাফল খুব হতাশার। এত বঞ্চনার পর আর কারো আশ্বাসে আমরা পাগল হচ্ছি না।
লেখক জাহিদ আব্দুল্লাহ রাহাত মনে করেন, প্রতিশ্রুতি না শুনলে প্রার্থীর আন্তরিকতা বোঝা যাবে না। আবার যোগ্যতা না থাকলে সে সব কিছু পেলেও নাগরিকদের জন্য কাজ করতে পারবে না। ফলে প্রতিশ্রুতি এবং যোগ্যতা দুটোই বিবেচনা করা উচিত। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল নগরের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি শুনে আমি হতবাক হচ্ছি। শুধু আমি না, এমন মনোভাব হয়তো নগরীর অধিকাংশ ভোটারের। কারণ প্রার্থীরা যেভাবে ঘোষণা দিচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে এটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হচ্ছে না, আলাদা রাজ্য নির্বাচন হচ্ছে। ভোটারদের সঙ্গে এমন ভুল ব্যখ্যার প্রতিশ্রুতি দেওয়া উচিত না।