পাট-চিনিকলসহ সব বন্ধ কারখানা চালু করার দাবি
সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ
প্রথম নিউজ, ঢাকা: পাট, চিনিকলসহ বন্ধ সব কল-কারখানা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু করাসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে আটটি ট্রেড ইউনিয়নের নতুন গঠিত শ্রমিক জোট জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ।
আজ মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে শ্রমিকদের ১১ দফা দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবি হলো
১। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
২। পাট ও চিনিকল, সুতাসহ বন্ধ সকল কল-কারখানা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু করতে হবে।
৩। শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী শ্রম আইন ও বিধিমালা বাতিল করা, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা।
৪। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমাতে হবে, শ্রমিকের জন্য সপ্তাহে পূর্ণ-রেশনিং চালু করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে, কর্মস্থলে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৫। ইপিজেডসহ সর্বত্র অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার দিতে হবে। ধর্মঘট করার গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল, ২০২৩ বাতিল করতে হবে।
৬। লে-অফ, লক-আউট, ছাঁটাই-নির্যাতন, মিথ্যা মামলা-গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। পুনর্বাসন ছাড়া হুকার উচ্ছেদ চলবে না। সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৭। গার্মেন্টস্ শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণা করতে হবে।
৮। চা শ্রমিকের ভূমির অধিকার ও দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। সকল বকেয়া পাওনা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে।
৯। নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান- ইজিবাইকের লাইসেন্স ও রুট পারমিট দিতে হবে।
১০। পরিবহন, ট্যানারি, নির্মাণ, চাতাল, মৎস্যজীবী, দর্জি শ্রমিক, গৃহ শ্রমিকসহ সকল সেক্টরের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা ও ন্যায়সঙ্গত সকল দাবি মেনে নিতে হবে।
১১। অবাধ ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন রুখে দাঁড়াতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল আকাঙ্ক্ষা পদদলিত করে পুঁজিপতি শ্রেণি দেশে নির্মম ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। কিছু পুঁজিপতি গোষ্ঠী যত সংহত হচ্ছে ফ্যাসিবাদ তত দৃঢ় হচ্ছে।
তিনি বলেন, শ্রমিকের বুক চাপা কান্না আর অসহায় দীর্ঘশ্বাসে আজ বাতাস ভারী। দুনিয়ার সর্বত্র শ্রমিকের ওপর চলছে জুলুম-নির্যাতন, চলছে ব্যাপক শ্রমিক ছাটাই। সর্বোচ্চ মুনাফা লুটেরারদের বুলডোজারের চাকায় পিষ্ট হচ্ছে শ্রমিকের জীবন। আর যাবতীয় শ্রম আইন দুপায়ে মাড়িয়ে যাচ্ছে মালিকরা। ন্যূনতম মজুরির কোনো নিম্নসীমা নেই। নেই শ্রমিকের নূন্যতম মজুরি পাওয়ার রক্ষাকবচের আইন। ফলে বেকার শ্রমিকের পাল্লা যত বাড়ে, ততই কমে মজুরির হার।
এসময় সংগঠনের নেতারা বলেন, দাবিসমূহ পূরণ না হলে অবিলম্বে সারাদেশে সমস্ত জেলা-উপজেলা-শিল্পাঞ্চল-কারখানায় গেইট মিটিং, কর্মীসভা, সমাবেশ, মিছিল, পদযাত্রার কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে একই সঙ্গে সর্বাত্মক শ্রমিক ধর্মঘট-অবরোধের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। সংবাদ সম্মেলন শেষে তারা শ্রম মন্ত্রণালয় অভিমুখে মিছিল করে স্মারকলিপি পেশ করতে যান।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতনের সঞ্চালনায় এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মনজুরুল আহসান খান, শ্রমজীবী আন্দোলনের আহ্বায়ক হারুনার রশিদ ভূঁইয়া, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম, শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এ এফ এম ফয়েজ হোসেন, ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি আলিফ দেওয়ান, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির সভাপতি মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক, শ্রমজীবি সংঘের সভাপতি আব্দুল আলীসহ অন্যান্য শ্রমিক নেতারা।