নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: ঢাকা কলেজের ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

তারা প্রত্যক্ষভাবে হামলায় অংশ নেয় এবং সশস্ত্রভাবে হামলার অগ্রভাবে অংশ নেয়

নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: ঢাকা কলেজের ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন ডিবির প্রধান

প্রথম নিউজ, ঢাকা: রাজধানীর নিউমার্কেটে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সংঘর্ষে দুজন নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ঢাকা কলেজের পাঁচ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতাররা হলেন—হিসাববিজ্ঞান বিভাগের আব্দুল কাইয়ূম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পলাশ ও ইরফান, বাংলা বিভাগের ফয়সাল, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের জুনায়েদ।

আজ বৃহস্পতিবার  দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবিপ্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি হত্যা মামলার তদন্ত করছিলাম। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা প্রত্যক্ষভাবে হামলায় অংশ নেয় এবং সশস্ত্রভাবে হামলার অগ্রভাবে অংশ নেয়।

ডিবি জানায়, বিভিন্ন ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদের শনাক্ত করা হয়। পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সংঘর্ষের সময় অস্ত্রহাতে হেলমেট পরে ফ্রন্টলাইনে ছিলেন। নাহিদকে ঘিরে ধরে হামলায় সরাসরি অংশ নেন এই পাঁচ শিক্ষার্থী। তবে ভাইরাল হওয়া আরেকটি ফুটেজে নিস্তেজ নাহিদকে কোপাতে থাকা ওই ব্যক্তিকে এখনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ওই শিক্ষার্থীর নাম ইমন বলে প্রচার করা হলেও তার পরিচয় নিশ্চিত করে জানানো হয়নি। গ্রেপ্তারের পর তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে ডিবি।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে এই হত্যাকাণ্ডকে পূর্ব পরিকল্পিত মনে হয়নি। সংঘর্ষের সময় তাৎক্ষণিক উত্তেজনা থেকে এমনটি ঘটেছে। তবে গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। নিউ মার্কেট সংঘর্ষে ঘটে যাওয়া দুইটি হত্যা মামলার তদন্ত ডিবি করছে- এমনটি উল্লেখ করে হাফিজ আক্তার বলেন, তদন্তের ধারাবাহিকতায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচ জনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি।

ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৮-১৯ এপ্রিল নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। এতে নাহিদ ও মোরসালিন নামে দুইজন নিহত হন। নিউ মার্কেটের দুই দোকানকর্মী বাপ্পী ও কাউসারের মধ্যে ঝগড়ার সূত্রপাত হয় ১৮ এপ্রিল বিকেলে। একপর্যায়ে বাপ্পী বন্ধু হিসেবে ঢাকা কলেজের তিন শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে আসেন। ওই শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের রাতভর সংঘর্ষ চলে। পরদিন ১১টার দিকে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। দুপুর ১টার দিকে নূরজাহান মার্কেটের সামনে নাহিদ ও চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে মোরসালিন আহত হন। তারা চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, নাহিদের মাথার বাম পাশে, পিঠে ও পায়ে কাটা জখম ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে থেঁতলানো পাওয়া যায়। মোরসালিনের মাথায় ইট বা ভারি বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার মাথা থেঁতলানো ছিল। দুটি হত্যা মামলা ডিবিতে স্থানান্তরের পরপরই ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, হামলার অগ্রভাবে ছাত্ররা হাতে ধারালো অস্ত্র, স্ট্যাম্প, লাঠি নিয়ে অবস্থান নেয়। পেছন থেকেও ছাত্ররা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছিল।

এদিকে নূরজাহান আর হকার্স মার্কেটের কর্মচারী ও হকাররা বিপরীত দিক থেকে ইট-পাটকেল মারছিল। নিহত নাহিদ সরাসরি সামনে থেকে মারামারিতে অংশ নেন। তার হাতে বড় একটি ছাতা ছিল, যা দিয়ে ইট-পাটকেল ঠেকাচ্ছিলেন তিনি। ছাত্ররা ধাওয়া দেওয়ার পর, ব্যবসায়ীরা সরে গেলেও ছাতার কারণে নাহিদ তা দেখতে পাননি। ছাত্ররা তার ওপর হামলা চালালে একপর্যায়ে নাহিদ অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই হত্যাকাণ্ডে যারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে অংশ নেন, তাদের মধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা অস্ত্র হাতে হেলমেট পরে হামলার ফ্রন্টলাইনে ছিলেন। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে, হামলায় কার কী অংশগ্রহণ বা কার কী দায় আমরা দেখব।

মুরসালিন হত্যার বিষয়ে আমরা কোনো ফুটেজ বা প্রত্যক্ষ সাক্ষী পাইনি। যেহেতু মামলা চলছে, হয়তো এটি উদঘাটন হতে আরেকটু সময় লাগবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। নিস্তেজ নাহিদকে একজন কোপাচ্ছিলেন, তার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে তার নাম ইমন বলে প্রচার করা হচ্ছে। তবে আমরা তার পরিচয় নিশ্চিত নই। তাকে গ্রেফতার করা গেলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। ইমনকে আমরা খুঁজছি।

উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল রাতে ও ১৯ এপ্রিল দুপুরে নিউমার্কেটের দোকান-মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। এতে নাহিদ ও মোরসালিন নামে দুজনের প্রাণহানি এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। এ ঘটনায় অন্তত তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।  এরপর গত ২৪ এপ্রিল বিকেল পাঁচটায় ঢাকা কলেজের আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের ১০১ নম্বর কক্ষে অভিযান পরিচালনা করেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও ডিবির সদস্যরা।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom