দেশের সংকট সমাধানে আ.লীগ সরকারের পতন ঘটাতে হবে : ড. মোশাররফ
ইসি গঠন নিয়ে আরেকটি নাটক শুরু করেছে সরকার

প্রথম নিউজ, ঢাকা: নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আইন প্রসংগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। সুতরাং দেশের চলমান সংকট সমাধানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।
আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেডআরএফ।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা নন দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সকল সেক্টরে অবদান রেখেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার জন্মবার্ষিকীতে জেডআরএফের আলোচনার জন্য ধন্যবাদ। আমি বলবো- দেশের বিশেষ দুটি দিন। একটি ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের বিরুদ্ধে উই রিভোল্ট বলে দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তৎকালীন সেনাবাহিনীর তরুণ মেজর জিয়াউর রহমান। আজকে অনেকেই জিয়াউর রহমানকে হিংসা করেন। তার নাম মুছে ফেলার জন্য এমন কোনো কাজ নেই তারা করছেনা। যারা জিয়াউর রহমানের অবদান স্বীকার করেন না তারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করেনা। অন্যরা তো তখন ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো। কেউ ইচ্ছা করলে ইতিহাস মুছে দিতে পারেনা।
আরেকটি ঘটনা হলো ৭ নভেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন তারা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধ্বংস করেছিল। কতা বলার স্বাধীনতা বন্ধ করেছিলো। রক্ষীবাহিনী দিয়ে মানুষ হত্যা করে প্রথম মানবাধিকার লংঘন করেছিলো। তখন ক্যু আর পাল্টা ক্যু হচ্ছিল। তখন ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব যে সংঘটিত হলো সেটা হলো ইতিহাসের আরেকটি টার্নিং পয়েন্ট। তখন দেশের ক্ষমতার পাদপ্রদীপে আবির্ভূত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনরুদ্ধার করেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি জাতিসত্তার পরিচয় দিয়েছেন। সবার ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। দেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনেন। মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নামে লুটপাট চলছিল।
শহীদ জিয়া দেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। আওয়ামী লীগ বার বার গণতন্ত্র হত্যা করেছে আর বিএনপি তা বার বার পুনরুদ্ধার করেছে। এগুলো ইতিহাস। চাইলেই মুছে ফেলা যাবেনা। তেমনি আজকে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ কারাবন্দী।
২০১৮ সালের নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে করে তারা সরকার গঠন করেছে। তারা বলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। আসলে প্রধানমন্ত্রী নির্লজ্জ। আজকে আমেরিকার গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাংলাদেশ দাওয়াত পায়নি। কারণ তারা বহির্বিশ্ব সবাই জানে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। যে দেশে গনতন্ত্র থাকেনা সেদেশে মানবাধিকার থাকেনা। তাই আওয়ামী লীগ আজ ১২ বছর ধরে গুম খুন ও মানবাধিকার লংঘন করে চলেছে। এটা হচ্ছে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী সরকারের বৈশিষ্ট্য। তারা ভেবেছিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে মানবাধিকার লংঘন করে ক্ষমতায় টিকে থাকবে। এমনকি ২০০৪ সাল থেকে তারা বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। তবুও তারা তাদের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেছে। লবিস্টরাও ব্যর্থ হয়েছে। আজকে তাদের অপকর্মের কারণে আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগ বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান ও কিছু কর্মকর্তার নামে স্যাংশন দিচ্ছে। তবুও তারা আমলে নিচ্ছে না।
আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে বিশ্বাস করে না। কেননা অতীতে জনগণ তাদেরকে লালকার্ড দেখিয়েছে। যে কারণে তারা ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ২৯ ডিসেম্বর রাতেই করেছে। এখন চারদিক থেকে সরকারের বিরুদ্ধে ওয়ার্নিং দিচ্ছে। র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ জাতিসংঘ আমলে নিয়েছে।
আজকে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সরকার যে আইন করেছে তার জাতির সাথে আরেকটি নাটক। আমরা বলেছি আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপি কখনো কোনো নির্বাচনে যাবে না। কেননা আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন কমিশন সরকারের স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। সুতরাং এসব সংকট সমাধানে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের কোনো বিকল্প নেই। দেশে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বলেন, শহীদ জিয়া আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। যিনি সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক এবং বীর উত্তম খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। আজ তার অবদান মুছে ফেলতে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। তার সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে এবং দেশনায়ক তারেক রহমানকেও দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু সেসব সম্ভব হবে না। তারা রয়েছেন দেশের মানুষের হৃদয়ে। কেননা শহীদ জিয়া দেশের উন্নয়নের জন্য যা করেছেন তার কখনো জাতি ভুলবেনা। বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা ও জবাবদিহিতা নেই। কারণ তারা বিনাভোটের সরকার। তারা সংসদ থেকে বের না হলে জনগণ তাদেরকে বের করে আনবে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন। সময় আসছে এই সরকারের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেবে জনগণ।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, জেডআরএফের সকল কর্মকান্ড আর্তমানবতার সেবায়। শহীদ জিয়াউর রহমান যত বড় তার কর্মময় জীবন তার চেয়ে বেশি বড়। দেশের সমৃদ্ধির জন্য সব সেক্টরে তার অবদান রয়েছে। তিনি জাতীয়তাবাদের ঘোষণা দিয়ে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। আজকে দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস থেকে তাকে যারা বাদ দিতে চান তারা পাগল। তাই দেশ বাঁচাতে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডাঃ ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, জেডআরএফের লক্ষ্যই হলো আর্তমানবতার সেবায় কাজ করা। ইতিমধ্যে করোনাকালে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ফ্রি চিকিৎসা সেবা, চব্বিশ ঘণ্টা হটলাইনে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। এধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
জেডআরএফের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও প্রকৌশলী মাহবুব আলমের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, জেডআরএফের অধ্যাপক. আবুল হাসনাত মোঃ শামীম, ডাঃ সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, কৃষিবিদ ড. আকিকুল ইসলাম আকিক, ডাঃ মোঃ মেহেদী হাসান, প্রকৌশলী উমাশা উমায়ন মনি চৌধুরী, প্রকৌশলী সুমায়েল মোঃ মল্লিক, এ্যামট্যাবের বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেডআরএফের মনিটর অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, প্রকৌশলী কেএম আসাদুজ্জামান চুন্নু, মিসেস শামীমা রাহিম, সর্দার মোহাম্মদ নূরুজ্জামান, দবির উদ্দিন তুষার, শফিকুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলাম রাকিব, আমান উল্লাহ আমান, প্রকৌশলী আসিফ হোসেন রচি, এএসএম রাকিবুল ইসলাম আকাশ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: