দম্পতিকে মারধর করে ছিনতাই: ঢাবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার
বহিষ্কৃত দুজনই ছাত্রলীগের নেতা।
প্রথম নিউজ, অনলাইন : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক দম্পতিকে মারধর করে স্বর্ণালংকার ছিনতাইয়ের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃত দুজনই ছাত্রলীগের নেতা। তারা হলেন- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তানজির আরাফাত তুষার এবং আইন বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাহুল রায়। তুষার বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দীন হল হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর রাহুল রায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সহসম্পাদক। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন, অসদাচরণ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না'- সেজন্য চিঠি পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৭ই জানুয়ারি ছিনতাইয়ের অভিযোগে ঢাকার শাহবাগ থানায় মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক নারী শিক্ষার্থী।
মামলার এজাহারে তার অভিযোগ, ১৫ই জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি ও তার স্বামী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন-সংলগ্ন ফটকের সামনে দিয়ে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। এ সময় রাহুল, তুষারসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয়জন তাদের গতিরোধ করেন। রাহুল তাকে ‘শ্লীলতাহানি’ করেন। তুষারসহ কয়েকজন তার স্বামীকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে মারধর করেন।মারধরের একপর্যায়ে রাহুল তার স্বামীর গলায় থাকা দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের চেন ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার তুষার পরে জামিনে ছাড়া পান। ওই সময় রাহুল পলাতক ছিলেন।
এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় এক দম্পতিকে মারধর করে টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ওই দুই শিক্ষার্থী হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ফাহিম তাজওয়ার জয় এবং তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের মো. সাজিদ আহমেদ। তারা দুজনই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং মাস্টারদা সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে হল শাখা ছাত্রলীগের সদস্য। আক্রান্ত দম্পতির মামা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব বাদী হয়ে সোমবার শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন। শাহবাগ থানার ওসি নুর মোহাম্মদ বলেন, পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। ঘটনার ভুক্তভোগী বেসরকারি চাকরিজীবী রাসেল মুন্সী ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাদের বাসা চানখারপুলে হওয়ায় তিনি ও তার স্ত্রী প্রায়ই শহীদ মিনার এলাকায় যান। সেই রাতে তারা দুজন শহীদ মিনারের সামনে বসে গল্প করছিলেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ১২টার দিকে ৩/৪ জন এসে তাকে মারধর করে তার কাছে থাকা মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ওই মানিব্যাগে নগদ ২২ হাজার টাকা ও ব্যাংকের এটিএম কার্ড সহ জরুরি কাগজ পত্র ছিল। নিজের মোবাইল ফোনে ছিনতাইকারীদের ছবি ধারণ করার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি রাতে ওই দম্পতিকে শহীদ মিনার এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জয়-সাজিদসহ আরও ১০-১২ জন গালাগালি, শ্লীলতাহানি ও মারধর করেন। এসময় তাদের থেকে ২২০০০ টাকা ও ব্যবহৃত এটিএম কার্ড ছিনতাই করে। খবর পেয়ে মামলার বাদী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাকে ও তার ছেলেকেও সেখানে মারধর করা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বিষয়টি অবহিত হয়েছি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।