প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা

মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া অনুমোদন

প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা
প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা

প্রথম নিউজ, অনলাইন : ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি (যেসব ওষুধ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেনা যায়) ছাড়া ওষুধ বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘ঔষধ ও কসমেটিকস আইন, ২০২৩’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। বিকালে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন এই তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এ সংক্রান্ত পুরাতন দুটি আইনকে এক করে এবং এর সঙ্গে আরও নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করে মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে গত বছরের ১১ই আগস্ট এ আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। সেটিকে আজ চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আজকে অনুমোদনের ক্ষেত্রে একটু পরিবর্তন এসেছে। আগে যে আইনগুলো ছিল সেগুলো মূলত ওষুধ নিয়ে ফোকাস করা ছিল। কিন্তু নতুন যে খসড়াটি করা হয়েছে সেখানে কসমেটিকসও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সেজন্য এই আইনটির নামকরণ করা হয় ঔষধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩। তিনি আরও বলেন, এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এখানে ধারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

বলা হচ্ছে, এখন রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ থাকবে। বিষয়টি অমান্য করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইনে কসমেটিকসকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কসমেটিকসের উৎপাদন, বিতরণ ও স্টোর এগুলো আমাদের রেগুলেট করা হবে। আমাদের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর যেটা আছে সেটা কন্টিনিউ করবে ও তাদের দায়িত্ব-পরিধি এখানে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এখানে শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে। আইনে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) যে গাইডলাইন আছে, সেটি যেন আমাদের ওষুধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হয় সে ব্যাপারে খুব জোর দেয়া হয়েছে। আইনটিতে এ গাইডলাইন প্রতিপালন করা বাধ্যতামূলক করা হবে। খসড়া আইনে শাস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ৩০টা অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে ও এসব অপরাধে শাস্তির কথা উল্লেখ করা আছে। অসৎ উদ্দেশ্যে ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে শাস্তি যাবজ্জীবন পর্যন্ত। নকল ওষুধ উৎপাদন বা জ্ঞাতসারে কোনো নকল ওষুধ বিক্রি, মজুত, বিতরণ বা বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রদর্শন করলে সেখানেও যাবজ্জীবনের প্রভিশন রাখা হয়েছে। ওষুধে ভেজাল করলে বা কোনো ভেজাল ওষুধ উৎপাদন, বিক্রয়, মজুত, বিতরণ করলে যাবজ্জীবনের প্রভিশন রাখা হয়েছে। মাহবুব হোসেন বলেন, ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনটি ওভার দ্য কাউন্টার বিক্রি করা যাবে সেটা বলা আছে খসড়া আইনে। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর লাইসেন্স অথরিটি হিসেবে কাজ করবে। কসমেটিকস উৎপাদন করতে হলে তাদের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। এ ছাড়া কিছু ওষুধের দাম সরকার ঠিক করে দেবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার বৈঠকের নির্ধারিত এজেন্ডার বাইরেও একটা বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। যেসব জমিতে সারা বছর তিন ধরনের ফসল উৎপাদন করা হয় সেসব জমিতে কোনো প্রকল্প নেয়া যাবে না প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিন ফসলি জমিতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, স্থাপনা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বা আবেদন পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে সোলার প্যানেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিল্ডিং তৈরি করার প্রস্তাব বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন কোনো তিন ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না।

কোনো তিন ফসলি জমিতে প্রকল্প নেয়া যাবে না, এটি সংরক্ষণ করতে হবে। এটি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন। এটা আমরা এখন নিয়মিত মনিটর করবো। সরকারি- বেসরকারি সব ক্ষেত্র কি নির্দেশনার মধ্যে পড়বেÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো ক্ষেত্রেই কোনো প্রকল্প হতে পারবে না। সরকারি-বেসরকারি সব লেভেলে। তিনি আরও বলেন, কোনো তিন ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। প্রকল্প নেয়ার সময় যাচাই করে দেখা হবে এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছেও তা পাঠানো হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোতে চিঠি দেয়া হবে।