দিনে আয় মাত্র ৫০ টাকা, প্রতিবন্ধী বিনোদের কষ্টের জীবন
বিনোদ চন্দ্র গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের ঘগোয়া গ্ৰামের মৃত অশিক চন্দ্রের ছেলে। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে একটি জরাজীর্ণ ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করেন তিনি।
প্রথম নিউজ, গাইবান্ধা: দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত প্রতিবন্ধী বিনোদ চন্দ্রের (৪৫) জীবন। জন্ম থেকেই তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। তবে প্রতিবন্ধী হলেও কারও কাছে হাত না পেতে সাইকেল-রিকশা মেরামত করে সংসার চালান। আর নিজের স্থায়ী কোনো দোকান না থাকায় অন্যের দোকানের বারান্দা বা রাস্তার ধারে তাকে কাজ করতে হয়।
বিনোদ চন্দ্র গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের ঘগোয়া গ্ৰামের মৃত অশিক চন্দ্রের ছেলে। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে একটি জরাজীর্ণ ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিনোদ চন্দ্র প্রায় দুই যুগ ধরে রাস্তার পাশে সাইকেল, ভ্যান ও রিকশা মেরামত করেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার কাছে পরিচিতজনরা ছাড়া অন্যরা আসেন না। পরিচিতদের বিকল সাইকেল আর ফাটা টায়ার মেরামত করে দিনে পারিশ্রমিক পান মাত্র ৫০-৬০ টাকা। এই সামান্য আয় দিয়েই অতিকষ্টে চলে তার সংসার। স্বামীর আয়ে সংসার না চলায় তার স্ত্রী রেনু বালা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। এভাবেই চলছে তাদের পরিবারের চার সদস্যের জীবন।
স্থানীয়রা জানান, বিনোদ চন্দ্র খুব সহজ-সরল মানুষ। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও তিনি জীবিকার তাগিদে সাইকেল মেরামতের কাজ করেন। তার কাছে সাইকেল-ভ্যানের ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে লোকজন আসেন। এতে দিনে ৫০ বা ৬০ টাকার বেশি আয় হয় না। এ দিয়েই তিনি কোনোমতে সংসার চালাচ্ছেন। কখনো তিনি অন্যের কাছে হাত পেতে সাহায্য চাননি। সরকারি বা বেসরকারিভাবে বিনোদকে কোনো সহযোগিতা করা হলে তিনি একটু সচ্ছল জীবনযাপন করতে পারতেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সুজন মিয়া বলেন, বিনোদের কাজের স্থানী কোনো ঠিকানা নেই। বিভিন্ন জায়গায় বসে তিনি সাইকেল মেরামত করেন। এতে যতসামান্য আয় হয়। তার থাকার কোনো ভালো ঘর নেই। ঝুঁপড়ি ঘরে বউ-বাচ্চা নিয়ে থাকেন। আশাদুল ইসলাম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জাগো নিউজকে বলেন, বিনোদ প্রতিবন্ধী হলেও পরিশ্রমী। সমাজের বিত্তবানদের উচিত তাকে সহযোগিতা করা।
বিনোদের স্ত্রী রেনু বালা বলেন, অভাবের সংসার। জীবন বাঁচানোয় দায়। কীভাবে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ যোগাবো। স্বামী দিনে ৫০-৬০ টাকার বেশি কামাই করতে পারে না। তাই আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করি। তিন মাস পর পর স্বামী প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। এভাবেই আমাদের সংসার চলছে।
তিনি আরও বলেন, থাকার একটা ভালো ঘরও নেই। থাকি ঝুঁপড়ি ঘরে। বৃষ্টির দিনে ঘরে পানি ঢোকে। সবাই ঘর পায়, আমরা হতভাগা কোনো ঘর পাই না।
প্রতিবন্ধী বিনোদ চন্দ্র বলেন, একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে তেমন কাজকর্ম না থাকায় দিনে মাত্র ৫০-৬০ টাকা আয় হয়। সামান্য আয় দিয়ে কোনোদিন দু-বেলা, দু-মুঠো খাবার জোটে, আবার কোনোদিন জোটানো দায় হয়ে পড়ে। নিজের কোনো স্থায়ী জায়গা নেই, মানুষের দোকানের সামনে বসেই সাইকেল মেরামত করি। আজ এক দোকানের সামনে তো কাল অন্য দোকানের সামনে এভাবেই চলছে জীবন সংগ্রাম।
বিনোদ আরও বলেন, চাল-ডাল থেকে তেল-নুনসহ এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। যা আয় করি তা দিয়ে এখন আর কোনোভাবেই সংসার চলছে না। তাই কাজ শেষে বাড়িতে যাওয়ার সময় রাস্তায় কম দামে যে সবজি পাই তা-ই কিনে নিয়ে যাই। তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম লেবু বলেন, বিনোদ চন্দ্র দরিদ্র কিন্তু পরিশ্রমী মানুষ। প্রতিবন্ধী ভাতা আর সাইকেল মেরামত করে যা আয় হয় তা দিয়েই অতিকষ্টে তার সংসার চলছে। পরবর্তীতে কোনো অনুদান আসলে তাকে দেওয়া হবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ-নূর-এ আলম বলেন, বিনোদ সম্পর্কে কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবো। সেইসঙ্গে তাকে সহযোগিতাও করা হবে।