দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর

দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর

প্রথম নিউজ, ঢাকা : বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তামাক পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানির (বিএটিবিসি) ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ৭ বছর আগে ২০১৬ সালের নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে ১ হাজার ৮১১ কোটি ৬৫ লাখ শলাকা সিগারেট উৎপাদন ও সরবরাহের ওপর  রাজস্ব ফাঁকির এই তথ্য পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে গঠিত বিশেষ কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটকে (এলটিইউ) অপরিশোধিত অর্থ আদায়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সোমবার (২ অওেক্টাবর) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি সব মিলিয়ে ২ হাজার ৫৪ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে এনবিআর। এ বিষয়ে গঠিত মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত ২১ সেপ্টেম্বর এনবিআর থেকে এক চিঠিতে ফাঁকি দেওয়া করের ঠাকা পুনরুদ্ধারের জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি) ১ হাজার ৮১১ কোটি ৬৫ লাখ শলাকা সিগারেট উৎপাদন ও সরবরাহের ওপর ৪৮ শতাংশ সম্পূরক শুল্কবাবদ ১ হাজার ৫৬৫ কোটি ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ২৭৬ টাকা এবং ১৫ শতাংশ হারে মূসক বাবদ ৪৮৯ কোটি ১৪ লাখ ৫৪ হাজার ৭৭৪ টাকা অপরিশোধিত রাজস্ব ফাঁকি দেয়। বিশেষ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে  ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সম্পূরক শুল্ক ও মূসক বাবদ ২ হাজার ৫৪ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার টাকা ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া যায়। ফাঁকিকৃত অর্থ আদায় করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল এবং অগ্রগতি প্রতিবেদন এনবিআরকে অবহিত করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে গত ১৪ আগস্ট এনবিআর সদস্য ড. মো. সহিদুল ইসলামকে আহ্ববায়ক করে ৬ সদস্যের একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি যাবতীয় কাগজপত্র ও দলিলপত্র পর্যালোচনা শেষে গত ২৮ আগস্ট ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানিকে শুনানিতে তলব করে। এর দুই দিন পর প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছে।

সূত্র  জানায়, ব্রিটিশ আমেরিকা টোব্যাকোর ২০১৬ সালের রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি সামনে আসে ২০১৮ সালে। ওই সময় ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে এনবিআরে প্রদত্ত তথ্য ও অডিট রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্যে গড়মিল দেখতে পায়। এর ভিত্তিতে হিসাব করে ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে বলে প্রাথমিক প্রমাণ তাদের হাতে আসে। এরপর এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা ও বাইরের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার পর ২০২১ সালের আগস্টে চূড়ান্ত ডিমান্ড জারি করার পর ওই সময় বকেয়ার বিষয়টি রহস্যজনকভাবে বিএটিবি'র পক্ষে নিষ্পত্তি হয়। এরপর চলতি বছরে বিষয়টি আবারও সামনে এলে এনবিআরের বিশেষ কমিটি ওই অর্থ আদায়ের সুপারিশ করে।
Google News Logoবাংলা ট্রিবিউনের খবর পেতে গুগল নিউজে ফলো করুন