তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিলে দেশ রক্ষা পাবে: সরকারকে দুদু

তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিলে দেশ রক্ষা পাবে: সরকারকে দুদু

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে আপনি যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিবেন, তত দেশের জন্য মঙ্গল হবে। বিশৃঙ্খলা থেকে দেশ রক্ষা পাবে এবং আপনাদেরও মান-সম্মান থাকবে। বৃহস্পতিবার (০৮ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

দুদু বলেন, মানুষ ৫ আগস্টের পর স্বপ্ন দেখেছে তারা যে ১৬ বছর ভোট দিতে পারেনি, হাসিনার পতনের পর দেশের মানুষ ভাবতে শুরু করেছে এবার ভোট দেয়ার দিনটা এসেছে। বিএনপি ১৬-১৭ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে গেছে। গুম-খুনের শিকার হয়েছে, ফাঁসির দড়ি কাঁধে নিয়েছে। প্রায় পৌনে পাঁচ হাজার নেতাকর্মী গুম খুনের শিকার হয়েছে। এটা শুধু বিএনপির লিস্টে আছে। এর বাইরেও অনেকে আছে। এতো ত্যাগ দিয়েছে একমাত্র গণতন্ত্রের জন্য। 
তিনি বলেন, বেগম জিয়া লন্ডন থেকে যখন দেশে আসলেন, শুধু ঢাকা শহর নয়; সারা বাংলাদেশটা যেন রাস্তায় নেমে এসেছে। সারা দেশটা উদগ্রীব হয়েছিল। তিনি (খালেদা জিয়া) শুধু আমাদের নেত্রীই নন, সারা বিশ্বের গণতন্ত্রের আন্দোলনের প্রতীকে রুপান্তরিত হয়েছে। তিনি গণতন্ত্রের মাতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। 
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তারেক রহমান ও তার পরিবার নির্যাতনের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান প্রায় ২ দশক ধরে দেশের বাইরে আছেন। ওনাকে আসতে দেয়া হয়নি। তার উপর যেভাবে অত্যাচার হয়েছিল, ওনাকে আল্লাহ রক্ষা করেছে। ওনার ছোট ভাই (কোকো) তো নির্যাতনের কারণে মারা গিয়েছিল। তাকে হত্যা করা হয়েছে। এখন যদি কেউ বলে একদল খেয়েছে, আরেক দল খাবে। কি আর বলবো! রুচির সংকট। 
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন,কেউ আবার বলছে, আমরা তো কোনো দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য গণঅভ্যুত্থান করিনি। তাহলে লুটপাট করার জন্যে আর জামায়াতের কাছে থেকে প্রাডো গাড়ি নেয়ার জন্যে! আগে পকেটে মানিব্যাগ ছিল না, এখন বিশাল অফিস। বিভিন্নভাবে পত্র-পত্রিকায় এসেছে। তারা বাংলাদেশকে হতাশ করেছে। তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনকে বিতর্কিত করেছে। 
এখন নতুন দরবেশ নামে একজনকে পাওয়া গেছে। যিনি ৪০০ কোটি টাকা লুটপাট করেছে। পুরাতন দরবেশকে আমরা বিদায় করার পর আরেকজন নতুন দরবেশ এসেছে।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র হচ্ছে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। হাসিনা করেছে ১৬-১৭ বছর ধরে। কোনোভাবেই সে নির্বাচন মানতে চায়নি। একটা জালিয়াতির নির্বাচন করে ক্ষমতায় ছিল। তাকে দেখলেই মূলত ডাইনিসুলভ চেহারার মতো লাগে। এত বড় খুনি, গণহত্যাকারী, নির্যাতনকারী, লুটেরা আর এই বাংলাদেশে দ্বিতীয় কেউ জন্মেছে বলে আমার জানা নেই। শেখ হাসিনাকে বিদায় করা হয়েছে গণতন্ত্রের প্রত্যাশায়। এখনো যদি ভোটের কথা দাবি জানাতে হয়, এর থেকে লজ্জা আর কিছু নেই।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, এই আন্দোলনে যারা কখনোই ছিল না, তারা এখন সরকার পরিচালনা করছে। আমি তাদের ছোট করছি না। গণতন্ত্র চাওয়ার কারণে, রাস্তায় মিছিল করার কারণে হয়নি তাদের বিরুদ্ধে একটা মামলাও হয়নি। এখন আপনারা একটা ভালো কাজ (নির্বাচন) করে যান, ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে আপনাদের নাম থাকবে। 
বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে আপনি যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিবেন, তত দেশের জন্য মঙ্গল হবে। বিশৃঙ্খলা থেকে দেশ রক্ষা পাবে এবং আপনাদেরও মানসম্মান থাকবে।
আমাদের নেতা তারেক রহমান ধৈর্য ধরতে বলেছেন তাই বিএনপি ধৈর্য ধরে আছে জানিয়ে কৃষকদলের সাবেক এই আহবায়ক বলেন, নির্বাচনে বিএনপিকে জিতানোর জন্য নয়; কিন্তু বিএনপি ছাড়া কোনো তৃতীয় দল নেই বাংলাদেশকে পরিচালনা করার। কারণ এই বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছে, অনেক অত্যাচার সহ্য করেছে, নির্মমতার মুখোমুখি হয়েছে। মানুষ বিএনপিকে পছন্দ করে। মানুষ বেগম জিয়া ও তারেক রহমানকে পছন্দ করে। বিএনপি ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করছে। আমাদের নেতা বলেছে ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করতে হবে। আর হাসিনা ডুবেছে নিজের কারণে। তিনি বিএনপিকে নিয়ে অনেক উপহাস করেছেন। এখন যে কোথায় আছেন খুঁজেও পাচ্ছি না। 
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কোভিদ ব্যাপারীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, কৃষকদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এস কে সাদী, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন, রেজাবউদ্দোলা সহ প্রমুখ।