তারুণ্যের সমাবেশ নিয়ে বিএনপি’র ৩ সংগঠনের ব্যাপক প্রস্তুতি
গত শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে তারুণ্যের সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: দীর্ঘদিন ধরেই সরকার পতনসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনেও সক্রিয় দলটির নেতাকর্মীরা। চলমান আন্দোলনের মধ্যেই নতুন কর্মসূচি দিয়েছে দলটির ৩ সংগঠন। তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলনে সক্রিয় করতেই যৌথভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। আগামী ১১ই জুন থেকে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করবে তারা। এদিন চট্টগ্রামে বড় আকারে সমাবেশ করতে চায় ৩ সংগঠন। ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছেন নেতারা। এনিয়ে রাজধানীর নয়াপল্টনে দফা দফায় চলছে বৈঠক। এ ছাড়া চট্টগ্রামেও বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা তারুণ্যের সমাবেশ সফল করতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। গঠন করা হচ্ছে সাংগঠনিক টিম।
বিভাগের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা থেকে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন কৌশল। গতকাল মঙ্গলবার ৩ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা দফায়-দফায় বৈঠক করেন। পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত এসব বৈঠকে সমাবেশ সফল করতে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করতে নির্দেশনা দিয়েছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা।
দায়িত্বে থাকা নেতারা বলছেন, ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষা করতেই তরুণ প্রজন্মকে জাগ্রত করতে হবে। আসছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশের মতোই সাধারণ মানুষ তারণ্যের সমাবেশে অংশ নেবে। বিএনপি’র ৩ অঙ্গ সংগঠন বলছে, ধারাবাহিকভাবে সারা দেশের বড় ৬টি শহরে বড় আকারে তারুণ্যের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এসব সমাবেশে তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ অংশ নেবে। প্রতিটি সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারাও তারুণ্যের সমাবেশে দিকনির্দেশনা দেবে। সমাবেশ সফল করতে যুবদল, স্বেচ্চাসেবক দল ও ছাত্রদল একইসঙ্গে কার্যক্রম চালাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের জন্য গত কয়েকদিন ধরে ধারবাহিক মিটিং করছেন নেতারা। বিএনপি হাইকমান্ডের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন।
এর আগে গত শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে তারুণ্যের সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ’ স্লোগানে এই কর্মসূচি হবে। এটি কোনো বিভাগীয় সমাবেশ নয়। প্রায় ৪ কোটি ভোটার গত ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে পারেনি। তাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশ সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী হবে। সমগ্র দেশবাসী বর্তমান সরকার দ্বারা নির্যাতিত, নিপীড়িত। রিকশাচালক থেকে শুরু করে ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, পেশাজীবী সবাই এই সরকারের দ্বারা নির্যাতিত। কারণ তাদের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে সব জিনিসপত্রের সীমাহীন দাম বেড়েছে। বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ, আইনের শাসন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী বসবাসের উপযোগী হিসেবে নির্মাণ করতে চাই।
গতকাল রাতে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, তারণ্যের সমাবেশ ঘোষণার পর থেকেই আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। তরুণ প্রজন্ম উচ্ছ্বসিত। সাংগঠনিকভাবেও আমরা সাড়া পাচ্ছি। সমাবেশ সফল করতে ইতিমধ্যে জেলা ও থানাপর্যায়ে টিম গঠন করা হয়েছে। আমার আশা রাজনৈতিক ইতিহাসে তারুণ্যের সমাবেশ হবে একটা মাইলফলক। এর মধ্যদিয়েই সরকারবিরোধী আন্দোলনে তরুণ প্রজন্ম অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
তারণ্যের সমাবেশ পর্যায়ক্রমে ১৭ই জুন বগুড়া (রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ মিলে), ৭ই জুলাই খুলনা, ১৫ই জুলাই বরিশাল, ২২শে জুলাই সিলেট এবং সর্বশেষ ২৯শে জুলাই ঢাকায় করবে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। এদিকে বিএনপি’র এ কর্মসূচির বাইরে আগামী শুক্রবার সমাবেশ করবে শ্রমিক দল। এ ছাড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশে জেলাপর্যায়ে জেলা শহরের বিদ্যুৎ অফিসের সমানে ১ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। দেশে অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতির প্রতিবাদে একদিনের এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে দলটির নেতাকর্মীরা। ঘোষিত এসব কর্মসূচি সফল করতে দিনভর সরগরম হয়ে উঠেছে নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়। সারাদিনই নেতাকর্মীদের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠছে পুরো এলাকা।