তারেক রহমান ইতিহাসের উত্তরাধিকার
ইতিহাসের পাতায় আলীভ্রাতৃদ্বয় নামেই গৌরবোজ্জ্বল পরিচিতি ক্ষণজন্মা এই সহোদর জুটির। বৃটিশভারতের মজলুমের অন্যতম কান্ডারীদের তালিকায় আজো শোভা পায় চাঁদতারা খচিত তুর্কী টুপিতে উন্নত শির।
প্রথম নিউজ, অনলাইন : উপমহাদেশে বৃটিশ বিরোধী রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক অধ্যায় দখল করে আছে খেলাফত আন্দোলন। অসাধারণ এক সাহসী বীরাংগনা মা'এর নাম "বি আম্মা বেগম"। বি আম্মা বেগমের দু' সন্তানঃ মাওলানা মুহাম্মদ আলী এবং মাওলানা শওকত আলী। দুজনই খেলাফত আন্দোলনের তুখোর নেতা। ইতিহাসের পাতায় আলীভ্রাতৃদ্বয় নামেই গৌরবোজ্জ্বল পরিচিতি ক্ষণজন্মা এই সহোদর জুটির। বৃটিশভারতের মজলুমের অন্যতম কান্ডারীদের তালিকায় আজো শোভা পায় চাঁদতারা খচিত তুর্কী টুপিতে উন্নত শির
ভ্রাতৃযুগলের জোড়া ছবি।
একবার মহিয়সী জননী বি আম্মা বেগম জেলগেটে যেয়ে গলাটিপে হত্যা করতে চেয়েছিলেন তাঁরই দুসন্তানকে। কারন, তাঁর নিকট সংবাদ পৌছেছিল বৃটিশের কাছে আন্দোলন না করার শর্ত দিয়ে দুভাই মুক্তিলাভ করতে যাচ্ছেন। রাগে আর অপমানে তেজস্বিনী মা তাই হাজির হলেন কারাগারের ফটকে। অবশ্য সন্তানেরা মাকে আশ্বস্ত করলেন, এই বলে যে, জীবন গেলেও তাঁরা মায়ের অবাধ্য হয়ে নাক খত দিয়ে জেল থেকে বেড় হবেন না। পরে জানা গেল মায়ের কাছে ওই সংবাদটি ছিল ভুল। যেমন মা, তেমনই তাঁর সন্তানেরা। অবিভক্ত বৃটিশভারেতর পরাধীন কোটি জনতা সেদিন এই অগ্নিগর্ভা মহিলার অটলতায় পেয়েছিল ইস্পাত কঠিন অনুপ্রেরণা। বি আম্মা বেগম হয়ে উঠেছিলেন মুক্তিপাগল সর্বস্তরের মানুষের আম্মাজান। আজো স্বাধীনতার ইতিহাস যে উৎসর্গপ্রাণ সংগ্রামী নারীর প্রতি সততঃ শ্রদ্ধাবনত, তাঁর নাম "বি আম্মা বেগম"।।
তাঁর সন্তান মাওলানা মুহাম্মদ আলী সেদিনের বৃটিশভারেতর আকাশে জন্মেছিলেন যেন উজ্জ্বল আগুনের নক্ষত্রের এক জ্বলন্ত বিচ্ছুরণ.......। সেদিনের পরাধীন ভারতবাসীর হৃদয়ে ঝড় তুলেছিলেন বজ্র কন্ঠের ঘোষনা দিয়ে "স্বাধীনতার সনদ ব্যতীত আর পরাধীন ভারতে ফিরে আসব না"! ব্যর্থ হলো ইংল্যান্ডের রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স -- স্বভাবসিদ্ধ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী মাওলানা মুহাম্মদ আলীর আর কোনদিনই ফেরা হয়নি পরাধীন ভারতের জমিনে। প্রবাসের মাটিতে তিলে তিলে বিলীন হলো এই অগ্নিপুরুষের নির্বসিত জীবন। জীবনকে ঐশর্যমন্ডিত করেছিলেন যে পরাধীনতাকে ঘৃনা করার শপথে, মরণকেও দীপ্তিময় করে গেলেন সর্বশেষ উচ্চারনে--"আমার মৃতদেহও যেন পরাধীন দেশের মাটি স্পর্শ না করে।" অবশেষে জেরুজালেম-এ অনেক পুণ্যবানদের সমাধির সাথে সহযাত্রী হলেন বীরাংগনা জননী 'বি-আম্মা বেগমে'র অমিত ত্যাজী সন্তান স্বাধীনচেতা অগ্নিপুরুষ মাওলানা মুহাম্মদ আলী। সমাপ্ত হলো এক নশ্বর জীবনের, কিন্তু ইতিহাসের পাতার অম্লান অক্ষরে রয়ে গেল অসম সাহসী দেশপ্রেমিকের গৌরবমন্ডিত আরেক সোনাঝরা অধ্যায়.......।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে সগৌরবে, মহাসমারোহে! আজ আমাদের স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর বিগত-- বৃটিশ বিদায় নিয়েছে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে; এরই মধ্যে অতীতের গুহায় স্থান পেয়েছে পাকিস্তানের নির্মম ষ্টীম রোলার। তারপরেও ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এ ভূখন্ড যেন আজো এক অবরুদ্ধ কারাগার। কোটি মজলুমের ব্যঞ্জনা-বিদগ্ধ দীর্ঘশ্বাসে এখানেও আবির্ভূত -- আর একজন বি-আম্মা বেগম-- তাঁর নাম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ঝান্ডা সমুন্নত রাখার জন্য খালেদা জিয়ার অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল রণাঙ্গনে যখন তাঁর স্বামী মহান স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জিয়া যে শত্রু নিধনে জীবনবাজী রেখে যুদ্ধে রত, তখন এই মহিয়ষী নারী সেই শত্রুদের হাতে বন্দী। শহীদ জিয়া যেখানে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক,খালেদা জিয়া সেখানে বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক।
আজও লালসবুজের পতাকা সংরক্ষণের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হিমশীতল কারাগারে গণতন্ত্র হত্যাকারীদের হাতে বন্দী। নিয়তির নির্মম পরিহাস, দুঃস্বপ্নের মতো, অভিশপ্ত এক-এগারো ও বর্তমান অবৈধ সরকারের প্রাণঘাতী গণহত্যার সিডরে খালেদা জিয়ার দু'সন্তানের একজন--আরাফাত রহমান কোকোর নির্বাসনেই সাঙ্গ হলো অন্তিম নিশ্বাস। তাঁরই আরেকজন অদম্য সাহসী সন্তান দেশনায়ক তারেক রহমানের হাতে আজ ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলকে কারাগার মুক্ত করার বিজয় নিশান। --তিনিও নিষ্পেষণের নির্বাসনে--প্রবাসে সাত সমুদ্রের ওপারে থেকে জাতির ক্রান্তিকালে গণতন্ত্র ও দেশরক্ষার সাহসী সিপাহসালার।
সেদিনের ভারতে বি-আম্মা বেগমের সন্তান উৎসর্গ বৃথা যায়নি, তবে কি আজকের বাংলাদেশের বি-আম্মা বেগম--খালেদা জিয়ার দু'সন্তান উৎসর্গ ব্যর্থ হবে? কালের ইতিহাস বলছে--"নিশ্চয়ই না"। মহিয়সী বি- আম্মা বেগমের কাছে পরাধীন বৃটিশভারতের আছে অসীম ঋণ; আজও বাংলাদেশের কোটি মজলুম জনতা এক সাহসী মাতৃহৃদয়ের কাছে দেশপ্রেমের ঋণে আবদ্ধ--তাঁর নাম ' খালেদা জিয়া'।এই ঋণ-- ইতিহাসের ঋণ। তাঁরই সুযোগ্য সন্তান গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষার ঐতিহাসিক সংগ্রামে সাফল্যের নিশান হাতে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। তাঁর নাম তারেক রহমান। তাই তারেক রহমান ইতিহাসের উত্তরাধিকার।
ডা. মাজহারুল আলম, (লেখকঃ সদস্য, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি)
email:[email protected]
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: