ঢাকা-সিলেট ও এশিয়ান মহাসড়কের বিষফোঁড়া ময়লার ভাগাড়
মহাসড়কের পাশে থাকা একাধিক ময়লার ভাগাড় দীর্ঘদিন ধরে পথোচারী, যাত্রী সাধারণ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে।
প্রথম নিউজ,নারায়ণগঞ্জ: সড়কের পাশেই ময়লার ভাগাড়। সেই ময়লা পচে বাতাসে ছড়াচ্ছে উৎকট দুর্গন্ধ। সেইসঙ্গে মশা-মাছির উপদ্রবে হুমকির মুখে পরিবেশ। এমনকি ময়লার স্তূপে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে হরহামেশা লাগছে যানজট। ঢাকা-সিলেট ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ অংশে ১০ থেকে ১৫ স্থানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। মহাসড়কের পাশে থাকা একাধিক ময়লার ভাগাড় দীর্ঘদিন ধরে পথোচারী, যাত্রী সাধারণ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। ব্যস্ততম দুটি সড়কের পাশে আবর্জনা ফেলে ময়লার ভাগাড় তৈরি করা হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা পদক্ষেপ নিলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন ও তারাব পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গৃহস্থালীর ময়লা-আবর্জনা এ দুটি মহাসড়কের পাশে ফেলা হয়। সরাসরি রাস্তায় ফেলার কারণে সড়ক হয়ে যাচ্ছে সংকীর্ণ। এতে হরহামেশা সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। রয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এছাড়া যানবাহনের যাত্রী, চালক, হেলপার ও পথচারীরা ময়লার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে চলাচল করছেন।
স্থানীয়রা জানান, সড়কে আবর্জনা ফেলার নির্ধারিত ডাম্পিং পয়েন্ট না থাকায় রাস্তার পাশে যেখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। এসব বর্জ্যের উৎকট গন্ধ বাতাসে মিশে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকায় মশা-মাছিসহ পোকা-মাকড়ের উপদ্রবও বেড়েছে। সড়কের এসব ময়লা পরিষ্কার করতে কেউ দায়িত্বও নিচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান না থাকায় কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি ও ভুলতা গাউছিয়া এলাকার বিসমিল্লাহ সবজির আড়ৎ, গাউছিয়া মাছের আড়ৎসহ বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ ও মার্কেটগুলোর ময়লা-আবর্জনা প্রতিদিন ভ্যানে করে ঢাকা-সিলেট ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে। ব্যস্ততম দুটি মহাসড়কের রূপগঞ্জ অংশে ১০ থেকে ১৫ স্থানে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা জড়ো করা হচ্ছে। এতে করে দুর্গন্ধে ভোগান্তিতে পড়েছেন পথচারীরা।
উপজেলার গোলাকান্দাইলে ফ্লাইওভারের মুখে যেখানে ময়লা ফেলা হয় সেখানেই রয়েছে বাসস্ট্যান্ড। পাশেই রয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি কাপড়ের ভুলতা-গাউছিয়া মার্কেট। এই মার্কেটকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হাফ ডজন প্রাইভেট হাসপাতাল। বিভিন্ন প্রয়োজনে এখানে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের সমাগম থাকে ।অন্যদিকে মহাসড়কের বাংলাকেট, কর্নগোপ, আড়িয়াবসহ অসংখ্য স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলে ভাগাড় তৈরি করা হয়েছে। ময়লার দুর্গন্ধে পথচারী ও যাত্রীদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সুজন মিয়া নামের এক পথচারী বলেন, আমার বাড়ি উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকায়। এশিয়ান হাইওয়ে মহাসড়কের গোলাকান্দাইল এলাকায় বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন ফ্লাইওভারের মুখে ও একই ইউনিয়নের ঢাকা-সিলেট সড়কের বাংলাকেটের পাশে ময়লার স্তূপের কাছ দিয়ে প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে হয়। দুর্গন্ধে নাক চেপেও হাঁটা দায়। ভুলতা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র আবির হোসেন বলেন, গোলাকান্দাইল থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাই। ময়লার দুর্গন্ধে অনেক খারাপ লাগে। এখানে এসেই নাক মুখ চেপে ধরে রাস্তা পার হই।
এ সড়কে যাতায়াতকারী যত্রীবাহী বাসের চালক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বর্জ্য এখন সড়কের বেশিরভাগ জায়গা দখল করে আছে। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল ভাগাড়। দিন দিন এর পরিধি বাড়ছে। বৃষ্টি হলে সড়কগুলোতে ময়লা ভেসে ওঠে। ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় ফেলায় মাঝেমধ্যেই যানজট সৃষ্টি হয়।
গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান তুহিন বলেন, বর্জ্য ফেলার জন্য আমাদের নিজস্ব কোনো জমি নেই। তাই বাধ্য হয়েই রাস্তার পাশে ফেলতে হচ্ছে। কয়েকদিন পর পর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মহাসড়কের দু’পাশ ও ফ্লাইওভারের নিচে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে। স্থায়ী ডাম্পিং পয়েন্ট তৈরি করার বিষয়ে কাজ করছি। আশা করছি দ্রুতই এ সমস্যা সমাধান হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুঁইয়া বলেন, ব্যস্ততম মহাসড়কের ভুলতা গাউছিয়া ও গোলাকান্দাইল একটি জনবহুল এলাকা। এখানে পাইকারি কাপড়ের মার্কেট, হাট-বাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ প্রায় অর্ধডজন হাসপাতাল আছে। সেখান থেকে প্রচুর বর্জ্য রাস্তার পাশে ফেলা হয়। মার্কেটগুলোর মালিক সমিতির লোকজনদের ডেকে মিটিং করে বলেছি যাতে তারা রাস্তার মধ্যে বর্জ্য না ফেলে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে মহাসড়ক এলাকায় আবর্জনার স্তূপ অপসারণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।