ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সময় চার বছর ও ব্যয় বাড়ছে সাড়ে ২৬২ কোটি
চলতি (২০২১-২০২২) অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে চলমান প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে প্রকল্পটি। এর আওতায় ৩২২ কোটি ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া আছে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকা ঘিরে যানজট নিরসনে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। তবে এ প্রকল্পের ব্যয় আরও ২৬২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বাড়ছে। পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়ও বাড়ছে চার বছর। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ানোর প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। সেতু কর্তৃপক্ষের এই প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে।
২০১৭ সালের সালের অক্টোবরে অনুমোদিত মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা ছিল ১৬ হাজার ৯০১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অর্থ ঋণ দেওয়ার কথা বলেছিল চীন। যার অংক ছিল ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। ২৬২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা খরচ বাড়ানোর ফলে এখন প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১৭ হাজার ১৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। তবে এক্ষেত্রে চীনের ঋণ আর বাড়ছে না।
প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রায় চার বছর পর গত ২৮ অক্টোবর সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে চীনের ওই ঋণচুক্তি সই হয়েছে। চুক্তির আওতায় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে নয় হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা ঋণ দিতে রাজি হয় চীনা এক্সিম ব্যাংক। দেশটির পলিসি প্রিফারেন্সিয়াল বায়ার্স ক্রেডিটের (পিবিসি) আওতায় এ ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় ব্যাংকটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘাটতি ঋণ এক হাজার ২৮০ কোটি টাকাসহ বেড়ে যাওয়া ব্যয় ২৬২ কোটি টাকাও সরকারি কোষাগার থেকে মেটানো হবে। প্রথমে সরকারি অংশে প্রকল্পে অর্থায়ন পাঁচ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা থাকলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে সাত হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। ফলে সবমিলিয়ে এক হাজার ৫৪২ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় করবে সরকার। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হওয়ার সময় নির্ধারণ ছিল। মেয়াদ চার বছর বাড়িয়ে এখন ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নানা খাতের কাজ বাড়ছে। ফলে প্রকল্পটি সংশোধন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় র্যাম্প নির্মাণের পরিমাণ অপরিবর্তিত রেখে এ খাতে ৫২ কোটি টাকা ব্যয় বাড়তে পারে। দুই লেনবিশিষ্ট নবীনগর ফ্লাইওভারেও ব্যয় বাড়বে। অ্যাট-গ্রেড রোড পুনঃনির্মাণ ( ২ লেন + ২ লেন সার্ভিস সড়কসহ) বাবদ এখাতে ৪১ কোটি ৯৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। দুই লেন ব্রিজ নির্মাণের পরিমাণ অপরিবর্তিত রেখে এ খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ১৯ কোটি ৭৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয় বাড়ানোর। এছাড়া ওভারপাস, ফ্লাইওভার, ইউটিলিটির জন্য ড্রেনেজ এবং ডাক্ট নির্মাণ, টোল প্লাজা ও কাস্টমস ডিউটিস কন্সট্রাকশন খরচের পরিমাণ অপরিবর্তিত রেখে এ খাতে মোট ৬৪ কোটি ৫৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
অনুমোদিত মূল প্রকল্পে কন্টিনজেন্সি প্রাইস ছিল মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৪ শতাংশ, সংশোধিত প্রকল্পে এ খাতে ৮ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ভাতা, সম্মানী , আউটসোর্সিং কর্মী, পেট্রল, লুব্রিকেন্ট, স্টেশনারি, যানবাহন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধিরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের সময়-ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সেতু বিভাগের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন) ওমর মো. ইমরুল মহসিন বলেন, চীন প্রথমে যে পরিমাণ ঋণ দিতে চেয়েছিল তা দেয়নি (এক হাজার ২৮০ কোটি কম দিয়েছে)। চীন শুধু টানেলে ১০০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে। প্রকল্প ঋণ কমার কারণে জিওবি খাত থেকে টাকা বাড়বে। এজন্য প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) সংশোধন করতে হবে। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। প্রকল্পের ব্যয়ের সঙ্গে সময়ও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো চলছে। অনেক আগে শুরু হয়েছে প্রাথমিক কাজ।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া বাইপাইল হয়ে নবীনগর মোড় এবং ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করে যানজট নিরসন করা।
সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, সফলভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০টি জেলার সহজ সংযোগ স্থাপিত হবে। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও হবে যানজটমুক্ত। পাশাপাশি যানজটমুক্ত হবে আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা এলাকা।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, এক্সপ্রেসওয়েটি হবে সাভার ইপিজেড থেকে আশুলিয়া-বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ র্যাম্প থাকবে। উড়াল সড়কের উভয় পাশে চার লেনের ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মিত হবে। নবীনগর ইন্টারসেকশনে থাকবে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল সড়ক। প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন এলাকায় তিন কিলোমিটার সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনাও থাকবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে।নির্মাণ পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য প্রকল্পটির পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)।
চলতি (২০২১-২০২২) অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে চলমান প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে প্রকল্পটি। এর আওতায় ৩২২ কোটি ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া আছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: