‘ডিবি তুলে নিয়ে গেল, এরপর শুনলাম ভাই মারা গেছে’

নিহত আলাল কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন।

‘ডিবি তুলে নিয়ে গেল, এরপর শুনলাম ভাই মারা গেছে’

প্রথম নিউজ, ঢাকা: রাজধানীর তুরাগে ফাতেমা আক্তার মুক্তা নামে এক নারীকে হত্যার ঘটনায় আলাল উদ্দিন (৫০) নামে এক ব্যক্তির ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত আলাল কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন।

নিহতের পরিবার জানিয়েছে, রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা আলাল উদ্দিন রাজধানীর তুরাগের বাউনিয়া মহিষাগার এলাকার একটি সাত তলা ভবনের কেয়ারটেকার হিসেবে গত কয়েক মাস ধরে কর্মরত ছিলেন। গত ৫ জুন ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় ফাতেমা আক্তার নামে এক নারীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হয়, ওই নারীর স্বামী ইসমাইল হোসেন আজাদ তার স্ত্রী হত্যায় জড়িত।

পরিবার জানায়, কিন্তু ঘটনার পর ৬ জুন ভবনটির কেয়ারটেকার আলালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ডিবির উত্তরা বিভাগের জোনাল টিম। আটকের পর ডিবি আলালের বিষয়ে কিছু জানায়নি তাদের। পরে শুক্রবার (১৬ জুন) রাতে আলালের পরিবারের কাছে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউশন থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয় তিনি মারা গেছেন।

পরিবারের অভিযোগ, ডিবির নির্যাতনে আলালের মৃত্যু হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিলেন। তাকে বিনা কারণে ফাতেমা আক্তারের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আটক করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে শনিবার (১৭ জুন) আলালের চাচাতো ভাই জাহিদ  বলেন, রাজধানীর তুরাগ এলাকার একটি সাত তলা ভবনের কেয়ারটেকার ছিলেন আলাল ভাই। ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় এক নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ঘটনার পর থানা পুলিশ আলাল ভাইকে গ্রেপ্তার করতে আসলে তারা তদন্ত করে দেখেন তিনি নির্দোষ। পরে তারা তাকে গ্রেপ্তার না করে চলে যায়। তিনি বলেন, কিন্তু ৬ জুন ডিবির একটি টিম আমার ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে যায়। পরে আমরা জানতে পারি, ডিবি হেফাজতে নিয়ে ভাইকে অনেক মারধর করেছে তারা। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে তাকে যে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল সেটিও আমাদের জানানো হয়নি। আমরা অন্য মাধ্যমে এ বিষয়ে জানতে পেরেছি।

জাহিদ অভিযোগ করেন, গতকাল জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউশন থেকে আমাদের ফোন করে জানানো হয় আলাল ভাই মারা গেছে। তারা রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আমাদের ফোন দিয়ে এ তথ্য জানায়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, আলাল ভাইকে ডিবি ভর্তি করেছিল। এর বেশি তারা এই বিষয়ে আমাদের কিছু বলেনি।

জাহিদ আরও বলেন, আলাল ভাইকে ডিবি জিজ্ঞাসাবাদের উদ্দেশ্যে নিয়ে গেছে আমরা এইটুকু জানতাম। তাকে যখন ডিবি আটক করে তখন ওই বাসার কাজের মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিল। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা ছেড়ে দেয়। আমার ভাইকে আটক করার থেকে শুরু করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো পর্যন্ত কোনো তথ্যই আমাদেরকে ডিবি জানায়নি। তবে সিদ্দিকুর রহমান নামে ডিবির এক সদস্যের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছিল। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, আলাল ভাই তাদের কাছে আছে, ভালো আছে। এরপর আলাল ভাইয়ের বিষয়ে আমরা কোনো তথ্য পাইনি। তাকে আটকের ১১ দিন পর গতকাল আমরা জানতে পারি তিনি মারা গেছেন।

এ বিষয়ে তুরাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ফাতেমা আক্তারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছি। পরে আদালতে তুললে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এই মামলার বাদী ফাতেমার ভাই। তিনি আরও বলেন, মামলার আসামি এজাহারনামীয় শুধু ফাতেমার স্বামী আর দু’জন অজ্ঞাত আসামি। বাদী অভিযোগ করায় ইসমাইল হোসেন আজাদকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তবে আমাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনে হয়নি তিনি এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বাকিটা আদালতের বিচার কাজে প্রমাণিত হবে।

এ ঘটনার সঙ্গে ওই বাসার কেয়ারটেকার আলাল কোনোভাবে সম্পৃক্ত কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে আলালের কিছু সংশ্লিষ্টতা পেয়েছিলাম। পরে মামলাটি ডিবিতে চলে যায় তদন্তের জন্য। ডিবি আলালকে আটক বা গ্রেপ্তার করেছিল কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাকে ডিবি আটক বা গ্রেপ্তার করেছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

আলাল উদ্দিনের পরিবারের অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে ডিবি উত্তরার বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ জন্য মোবাইলে ফোনে বার বার কল দেওয়া হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি। এদিকে শনিবার রাত আটটার দিকে আলালের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে লাশের সঙ্গে সুরতহাল প্রতিবেদন পাঠানো হয়নি বলে জানা গেছে।

উল্লেখ, গত ৬ জুন রাজধানীর তুরাগের বাউনিয়া মহিষাগার এলাকার একটি ভবন থেকে ফাতেমা আক্তার মুক্তা নামে এক নারীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের স্বামীর নাম ইসমাইল হোসেন আজাদ। নিহত ওই নারী তার স্বামীসহ গত চার মাস ধরে ওই বাড়ির ২য় তলার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন।