ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও প্রতিকারে ঘরোয়া পরামর্শ

ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও প্রতিকারে ঘরোয়া পরামর্শ

প্রথম নিউজ, ডেস্ক: করোনাভাইরাস মহামারীতে বিপর্যস্ত জনজীবনে নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু। এডিস মশাবাহিত এই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকদিন ধরেই বাড়ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও প্রতিকারে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত মধু সেবন, কালিজিরার মতো বিভিন্ন ঔষধি গুণসম্পন্ন খাবার ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করে নেয়া।

মধু : প্রতিদিন সেবনে শরীরের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

কালিজিরা তেল : কালিজিরা বা কালিজিরা তেলকে বলে সব রোগের মহৌষধ। তবে প্রতিদিন তিন চা-চামচের বেশি খাওয়া ঠিক নয়। আগে কখনো না খেয়ে থাকলে আধা চামচ করে শরীরে অ্যাডজাস্ট করে নিতে পারেন। রোগী ও গর্ভবতী মহিলাদের সেবনের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

নিমের তেল : বাড়িতে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে পানির সাথে নিমের তেল মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। এ ছাড়া ১০-১৫ ফোঁটা নিম তেল আধা কাপ নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে গায়ে লাগালেও মশারা আর ধারেকাছে ঘেঁষবে না।

নারিকেল তেল : নারিকেল তেল গায়ে লাগালে মশারা কাছে ঘেঁষে না।

হলুদের গুঁড়া : হলুদের মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, লোহা প্রভৃতি নানা পদার্থ রয়েছে। তাই হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন দুধ বা পানির সাথে হলুদের গুঁড়া বা রস মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করলে অনেকটাই সুস্থ থাকা সম্ভব। হলুদ সাধারণত বিভিন্ন রান্নায় পরিমাণমতো ব্যবহার করা হয়। তবে সরাসরি কাঁচা হলুদও সেবন করা যায়, তবে অবশ্যই মাত্রাতিরিক্ত নয়। রোগী, বিভিন্ন ওষুধ সেবনকারী ও গর্ভবতী মহিলারা সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

দুধ, কলা, ডিম : এগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয়। প্রতিদিন সেবনে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। অনেকের এসব খাদ্যে অ্যালার্জি থাকে অথবা বিভিন্ন রোগ (যেমন- কিডনি রোগ, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স ইত্যাদি) এ দুধ একটি নিষিদ্ধ খাদ্য।

পেঁপে এবং পেঁপে পাতা : পেঁপে খুব দ্রুত রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়াতে সক্ষম। মালয়েশিয়ার এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গুজ্বরের কারণে রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেলে পেঁপে পাতার রস তা দ্রুত বৃদ্ধি করে। রক্ত প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেলে প্রতিদিন পেঁপে পাতার রস কিংবা পাকা পেঁপের জুস পান করুন।

ড্রাগন ফল : ড্রাগন ফলে আছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট। এটি ব্লাডের সাদা সেল (ডইঈ) বাড়াতে সাহায্য করে।

মিষ্টি কুমড়া এবং কুমড়া বীজ : মিষ্টি কুমড়া রক্তের প্লাটিলেট তৈরি করতে বেশ কার্যকর। এ ছাড়াও মিষ্টি কুমড়াতে আছে ভিটামিন এ যা প্লাটিলেট তৈরি করতে সহায়তা করে। তাই রক্তের প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া এবং এর বীজ খেলে উপকার পাওয়া যায়।

লেবু : লেবুর রসে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে। ফলে প্লাটিলেট ধ্বংস হওয়া থেকেও রক্ষা পায়।

দেশী মাছ : দেশী বিভিন্ন মাছ (যেমন- কই, শিং, মাগুর, শোল, বাইন, ছোট মাছ, পাঁচমিশালি মাছ ইত্যাদি) শরীরে রক্ত বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

করণীয় : ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে উচ্চ তাপমাত্রা রোধ করতে শরীর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। শরীর বেশি ঠাণ্ডা মনে হলে খাবার স্যালাইন দিতে হবে। হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। তাকে পূর্ণ বিশ্রামে রেখে বেশি করে পানি খেতে দিতে হবে।

হোমিও প্রতিবিধান : হোমিও মতে রোগ নয়, রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। এ জন্য একজন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক ডা: হানিম্যানের নির্দেশিত হোমিওপ্যাথিক নিয়মনীতি অনুসারে ডেঙ্গুরোগসহ যেকোনো জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যভিত্তিক লক্ষণ সমষ্টি নির্ভর ও ধাতুগতভাবে চিকিৎসা দিলে আল্লাহর রহমতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসা সম্ভব।

হোমিও চিকিৎসা : অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা যেসব মেডিসিন প্রাথমিকভাবে ব্যবহার করে থাকেন- একোনাইট, বেলেডোনা, ব্রায়োনিয়া, রাসটক্স, ইউপেটেরিয়াম পার্ফ, আর্সেনিক এলবাম, কার্বোভেজ, ইপিকাক, সালফারসহ আরো অনেক ওষুধ লক্ষণের ওপর আসতে পারে, তাই ডেঙ্গুজ্বরের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।