ট্রেনে আগুন আন্দোলনকারীদের সাথে কোন সম্পর্ক নাই: সাকি
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে ও ১ দফা দাবিতে দেশব্যাপী হরতালের সমর্থনে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আজকে সকালে আমরা দেখলাম তেজগাঁওতে চলন্ত ট্রেনে আগুন দেয়া হয়েছে। সেখানে আগুনে পুড়ে বেশ কয়েকজন মানুষ হতাহত হয়েছেন। আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই এই রকম নাশকতার সাথে চলমান আন্দোলনের কোন সম্পর্ক নাই। এরা (সরকার) নাশকতা করে আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করতে চায়। আন্দোলনের উপর ক্র্যাক ডাউন করতে চায়।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে ও ১ দফা দাবিতে দেশব্যাপী হরতালের সমর্থনে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, এই দেশ লক্ষ লক্ষ মানুষ রক্ত দিয়ে তৈরি করেছে। এই দেশে জনগণের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে আনতে হবে। আর সেটা করতে গেলে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় দিয়ে একটা সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হবে। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা, এই ফ্যাসিস্ট কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা বদল করে বাংলাদেশে একটা নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে হবে। এরজন্য গণতন্ত্র মঞ্চ লড়াই করছে। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, ভোটের অধিকার, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা, সুযোগের সমতা; সেই লড়াই চলবে। কোন শক্তি, কোন দমন-পীড়ন এই লড়াইকে থামাতে পারবে না। আপনাদের (আওয়ামী লীগের) যদি সাহস থাকে ঠেকান। আমরা রাস্তায় নামব। আমাদের কর্মীরা নৈতিক জোড় নিয়ে দেশপ্রেম নিয়ে রাস্তায় নামবে। আপনাদের কথায় আমরা ভয় পাই না।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ, বিএনপিসহ যুগপৎ ধারায় ৩৯ টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। এর বাইরেও ৬৩ টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। প্রতিদিন তারা জনগণকে আহবান জানাচ্ছে নির্বাচন বয়কট করতে। এই নির্বাচন তামাশার, দেশের নাগরিক এবং দেশের বিরুদ্ধে। মানুষ তাতে সারা দিয়েছে। আর এই সরকার সেই সারায় ভয় পেয়ে নির্বাচন কমিশনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তাদেরকে দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে যে মিটিং মিছিল বন্ধ করতে হবে। মানুষের কন্ঠ রোধ করতে হবে। এটা যে নির্বাচন নামক তামাশা সেটা আমরা মানুষের কাছে উন্মোচন করে দিচ্ছি এটা বন্ধ করতে হবে। এটা হচ্ছে সরকারের পাঁয়তারা।
ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনা নিয়ে সাকি বলেন, আজকে সকালে আমরা দেখলাম তেজগাঁওতে চলন্ত ট্রেনে আগুন দেয়া হয়েছে। সেখানে আগুনে পুড়ে বেশ কয়েকজন মানুষ হতাহত হয়েছেন। আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই এই রকম নাশকতার সাথে চলমান আন্দোলনের কোন সম্পর্ক নাই। এরা (সরকার) নাশকতা করে আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করতে চায়। আন্দোলনের উপর ক্র্যাক ডাউন করতে চায়।
সরকার জেলে ঢুকিয়ে আন্দোলন দমন করতে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার বিরোধী দলের নেতাদের জেলে ঢুকিয়ে আন্দোলন করতে চায়। এটা আমরা আগেই বলেছি। এখন খোদ সরকারের কৃষিমন্ত্রী ঠান্ডা মাথায় টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছে তারা ভেবেচিন্তে পরিকল্পিতভাবে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জেলে রেখেছেন। উনাদেরকে জেলে না রাখলে নাকি এখন যে হরতাল অবরোধে গাড়ি চলে সেটা নাকি চলত না।
জাতীয় পার্টিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বললেন ভিক্ষার সিট নিয়ে নাকি তিনি নির্বাচন করেন না। তার কয়েক ঘন্টা পরে আমরা দেখলাম ২৬ টি আসন সমঝোতা করে তারা নির্বাচনে গেছেন। জনাব জি এম কাদের সাহেব আপনাকে জাতির কাছে বলতে হবে এই ২৬ টি আসন কী ভিক্ষা?
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারন সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশন একটা পরিপত্র দিয়েছে। আর সেটাকে ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা পরশুদিন বলেছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি বেআইনি একটি নিষেধাজ্ঞা। এটা সংবিধান বহির্ভূত একটা নিষেধাজ্ঞা। তাদের যেমন ভোট চাওয়ার অধিকার আছে পাশাপাশি আমরা যারা এটাকে প্রহশনের নির্বাচন মনে করছি তাদেরও এই নির্বাচনের বিরোধিতা করার নাগরিক অধিকার আছে। নির্বাচন কমিশন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় কোন ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করে বা বিধিনিষেধ দিয়ে মুক্তিকামী মানুষের এই অধিকার বন্ধ করতে পারবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই অনতিবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞার পরিপত্র প্রত্যাহার করুন।
তিনি বলেন, গতকাল মস্কো থেকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মুখপাত্র মারিয়া যাকারোভা বলেছেন, বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি চলছে তাতে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরবর্তীতে বাংলাদেশে নাকি একটা আরব বসন্ত দেখা দিবে। আরব বসন্তের অর্থ কি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি মানুষ রাজপথে আন্দোলন করতে নেমে এসেছে। আর আমি বলব এদেশে আরব বসন্ত নয় দেশ হবে বাংলার বসন্ত। এই বাংলা বসন্তের জন্য মানুষ এবার তৈরি হচ্ছে। মানুষের যে পুঞ্জীভূত খুব এই ক্ষোভের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাজপথে নেমে আসবে। এবং এ আশঙ্কায় সরকারের যে তাবেদার তারা পর্যন্ত বুঝতে পারছে। বাংলাদেশের ভাগ্য বাংলাদেশের মানুষই নির্ধারণ করবে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, নির্বাচন কমিশনার আমাদের মিটিং মিছিলের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তা আমরা মানবো না বলে জানিয়েছিলাম। আমরা বলেছিলাম প্রয়োজন হলে সিইসির বাসার সামনে গিয়ে মিছিল করব। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলছি আপনার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনারকে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুন। আমরা এটাও বলতে চাই আপনারা তফসিল বাতিল করুন। জনগণ এই এই নির্বাচন মানবে না। আমরা জীবন দিয়ে হলেও এই নির্বাচনকে প্রতিহত করব।
নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, আজকে একটা পার্লামেন্ট বহাল রেখে আরেকটা পার্লামেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। এটাতো পাগলের রাজত্ব চলছে। এসময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনসহ গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।