আরব বসন্ত নয়, বাংলা বসন্তের জন্য এদেশের মানুষ প্রস্তুত হচ্ছে: সাইফুল হক

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর)  জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে ও ১ দফা দাবিতে দেশব্যাপী হরতালের সমর্থনে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

আরব বসন্ত নয়, বাংলা বসন্তের জন্য এদেশের মানুষ প্রস্তুত হচ্ছে: সাইফুল হক

প্রথম নিউজ, ঢাকা: আরব বসন্ত নায় বাংলা বসন্তের জন্য এদেশের মানুষ প্রস্তুত হচ্ছে বলে মন্তব্য করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, 'বাংলাদেশের ভাগ্য বাংলাদেশের মানুষই নির্ধারণ করবে।'

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর)  জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে ও ১ দফা দাবিতে দেশব্যাপী হরতালের সমর্থনে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

সাইফুল হক বলেন, 'গতকাল মস্কো থেকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মুখপাত্র মারিয়া যাকারোভা বলেছেন, বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি চলছে তাতে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরবর্তীতে বাংলাদেশে নাকি একটা আরব বসন্ত দেখাদিবে। আরব বসন্তের অর্থ কি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি মানুষ রাজপথে আন্দোলন করতে নেমে আসা। আর আমি বলব এদেশে আরব বসন্ত নয় দেশ হবে বাংলার বসন্ত। এই বাংলা বসন্তের জন্য মানুষ এবার তৈরি হচ্ছে। মানুষের যে পুঞ্জীভূত খুব এই ক্ষোভের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাজপথে নেমে আসবে। এবং এ আশঙ্কায় সরকারের যে তাবেদার তারা পর্যন্ত বুঝতে পারছে। বাংলাদেশের ভাগ্য বাংলাদেশের মানুষই নির্ধারণ করবে।'

পদত্যাগের মধ্যদিয়ে কিভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার দেয়া যায় এই বিষয়ে সাইফুল হক বলেন, 'আমাদের দেশের ৪০ জন বুদ্ধিজীবী একটা প্রস্তাব দিয়েছেন। যে কথা আমরাও বিভিন্ন সময় বলবার চেষ্টা করেছি। সংকট উত্তরণের  জন্য এখনো শান্তি প্রিয় ভাবে সমাধান বের করার সুযোগ আছে। তবে নির্বাচন কমিশন বলছেন, সাংবিধান সমুন্নত রাখার জন্য নাকি ৭ তারিখের নির্বাচন। দাদা আমি বলব এরকম প্রহসনের নির্বাচন দিয়ে জনগণের অধিকার ক্ষুন্ন করে কোনভাবে সংবিধানের দোহাই দিয়ে বৈধতা দেয়া চলবে না। কোনভাবেই মানুষ এই খেলাকে আরেকবার বরদাস্ত করবে না। এজন্য আমরা বলেছি অনতিবিলম্বে এই খেলাটা বন্ধ করেন। সংসারটাকে বাতিল করেন। সংবিধানে আছে সংসদ বাতিল করার পর তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেয়া যাবে। সেই তিন মাসে আপনারা কি করবেন, এটাকে বাতিল করে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেন, নিদৃষ্ট এজেন্ডা নিয়ে। যে কখন কিভাবে পদত্যাগ করবেন। পদত্যাগের মধ্যদিয়ে কিভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার দেয়া যায়।'

সরকারি দলের বড় নেতা প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক হাটে হাড়ি ভেঙে দিয়েছেন উল্লেখ করে সাইফুল হক বলেন, 'কৃষিমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন, আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপির কাছে প্রস্তাব দিয়েছে যে, সরকারের করা ছকে বিএনপির নেতাকর্মীরা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে এক রাতের মধ্যে বিশ হাজার নেতাকর্মীকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে দিবে। এ কথার মানে কি দাঁড়াচ্ছে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে যে অগ্নি সন্ত্রাসী এবং নাশকতার মামলা দিয়েছে এগুলো সবই সরকারের বানানো। বিরোধীদলের উপর নিপীড়ন চালানোর জন্য এবং রাজনৈতিকভাবে একটা চাপ তৈরি করার জন্য বিরোধী নেতাদের তারা আজকে জেলে নিয়ে গেছেন। একথা আরো প্রমাণ করছে যে যতগুলো মামলার রায় দিচ্ছে তা সব হচ্ছে সরকারের ফরমায়েশি ইচ্ছা পূরণের জন্য। নিম্ন আদালতকে দিয়ে তারা আজকে বিরোধী দলকে জেলে পুড়ে ক্ষমতার মসনদকে তারা নিশ্চিত করতে চায়।'

তিনি বলেন, গতকাল আমাকে একটি টিভি চ্যানেলের টকশোতে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আদালতে মুচকি হাসার কারণটা কি। আমি তখন বলেছি, হয়তো উনি এইভেবে মুচকি হাসছেন যে সরকারের ফরমায়েশী রায় এবং দমন-পীরণের ফলে বিএনপি সহ বিরোধী নেতাদের কেও সরকারের ফাদে পাদেয়নি।৷ আজকে সমস্ত বিরোধী দলগুলো ঐক্যবধ্য আছে। 

তেজগাঁওয়ে যে রেলের নাশকতার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিতে সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'আমরা বরাবরি বলেছি, আন্দোলনে আমরা জনগণের উপর নির্ভর করি। কোন ধরনের সহিংসতা নাশকতা এবং উস্কানিতে আমরা পা দিতে চাই না। আমাদের অতীত রেকর্ড বলছে, সরকারের বিভিন্ন রকমের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন করছি। আমরা সরকারকেও বলেছি রাজনৈতিক সমস্ত কিছুর বাইরে নিরপেক্ষভাবে সকল নাশকতার ঘটনার তদন্ত করুন। যারা এই সকল ঘটনার জন্য দায়ী তাদেরকে গ্রেফতার করুন তাদের আইনের আওতায়া আনুন।'

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'মানুষ এটাকে কোন নির্বাচন হিসেবে দেখেনা। যে দেশের মানুষ নির্বাচনকে উৎসব মনে করে, সে দেশের মানুষ নির্বাচন নিয়ে একটা গণ হতাশায় ভুগছে। যে কারণে জাহাঙ্গীর কবির নানক সহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা বলছেন, প্রয়োজনে ভোটারদের পায়ে ধরে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসেন। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে আমি বলছি, হাতে পায়ে ধরলেও এবার আর মানুষ ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসবে না। পুলিশকে বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে হয়তো ভোটারদের ধরে নিয়ে এসে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে হবে। এই হল ভোটের নমুনা।'

তিনি বলেন, এক নেতা বলেছিলেন ১৪ সালের ১৮ সালে নাকি কুত্তা মটকা নির্বাচন হয়েছে। আর এবার কি হবে? শোনা যাচ্ছে যে, প্রতিটা ভোটকেন্দ্র ৩০০ লোকের জটলা রেখে দেবে, সকাল আটটা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত এরা নাকি ঘুরে ঘুরে ভোট দেবে। এবারে এই খেলার আয়োজন করা হচ্ছে। মানুষ ইতিমধ্যে এটাকে ধরে ফেলেছে। 

নির্বাচন কমিশন একটা পরিপত্র দিয়েছে। আর সেটাকে ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা পরশুদিন বলেছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি বেআইনি একটি নিষেধাজ্ঞা। এটা সংবিধান বহির্ভূত একটা নিষেধাজ্ঞা। তাদের যেমন ভোট চাওয়ার অধিকার আছে পাশাপাশি আমরা যারা এটাকে প্রহশনের নির্বাচন মনে করছি তাদেরও এই নির্বাচনের বিরোধিতা করার  নাগরিক অধিকার আছে। নির্বাচন কমিশন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় কোন ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করে বা বিধিনিষেধ দিয়ে মুক্তিকামী মানুষের এই অধিকার বন্ধ করতে পারবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই অনতিবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞার পরিপত্র প্রত্যাহার করুন। 

ইতোমধ্যে আপনারা খেয়াল করেছেন দেশের অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীরা বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। তাদের একজনকে ওইইতোমধ্যে আপনারা খেয়াল করেছেন দেশের অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীরা বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। তাদের একজনকে ওই পর্যন্ত গ্রেফতার হতে দেখি নাই। আর বিরোধী দল রাস্তায় দাঁড়ালে আপনারা সেখানে চাপ দেন হুমকি দেন। এই খেলা জনগণ ধরে ফেলেছে। 

নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সারের সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন,  জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু সহ গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যান্য নেতারা।