টুকরো কাপড়ে সংসার চলে ৩০ হাজার মানুষের

কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে ভোরের সকাল। সন্ধ্যা নামলেই অনুভূত হচ্ছে শীত। পাতলা কাঁথার মানছে না শীত। তাই হিমেল ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন লেপ-কম্বলের উষ্ণতার।

টুকরো কাপড়ে সংসার চলে ৩০ হাজার মানুষের

প্রথম নিউজ, সিরাজগঞ্জ: প্রকৃতিতে বইছে শীতের হাওয়া। ধীরে ধীরে বাড়ছে এর তীব্রতা। কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে ভোরের সকাল। সন্ধ্যা নামলেই অনুভূত হচ্ছে শীত। পাতলা কাঁথার মানছে না শীত। তাই হিমেল ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন লেপ-কম্বলের উষ্ণতার। এই শীতে উষ্ণতা পেতে বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে কম্বল পল্লী। দামও তুলনামূলক কম। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে এ কম্বল। শুধু তাই নয়, কম্বল তৈরির আয়ে সংসার চলে কারিগরদের।

সিরাজগঞ্জের নদী ভাঙ্গন কবলিত কাজীপুর উপজেলার শিমুলদাইড় বাজার ঘুরে দেখা যায় এসব চিত্র। কথা হয় কাজীপুর উপজেলার কুনকুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোতাহার হোসেনের (৪২) সঙ্গে। স্ত্রী ও দুই সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব তার কাঁধে। আর সেই দায়িত্ব পালনের জন্যই তিনি গার্মেন্টস শিল্পের টুকরো কাপড় দিয়ে কম্বল তৈরির কাজ করেন। এতে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার টাকা আয় হয় তার। এমন কাজে শুধু মোতাহার হোসেন নয় এ মৌসুমে কাজীপুরের প্রায় ৩০ হাজার লোকের সংসার চলছে।

কম্বল তৈরির কারিগর মজনু মিয়া বলেন, কাজীপুরের শিমুলদাইড় বাজার, কুনকুনিয়া, বরশিভাঙ্গা, শ্যামপুর, গাড়াবেড়, মাইজবাড়ি, চালিতাডাঙ্গা, মেঘাই, নয়াপাড়া ও গান্ধাইল মিলে প্রায় ৩০ হাজার লোক গার্মেন্টসের টুকরো কাপড় দিয়ে পা ও ফ্ল্যাট লক মেশিনের মাধ্যমে কম্বল তৈরি করে। তিনি আরও বলেন, পা মেশিন দিয়ে প্রতিদিন একজন শ্রমিক পাঁচ থেকে সাতটি কম্বল তৈরি করেন। প্রত্যেক কম্বল তৈরি বাবদ একজন কারিগর ৩০ টাকা করে পান। আর ফ্ল্যাট লক মেশিনে প্রতিদিন একজন কারিগর আট থেকে নয় শতাধিক কম্বল তৈরি করতে পারে। তারা কম্বলের ওজনের ভিত্তিতে ২ থেকে ৫ টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন। এই মৌসুমে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা ও সংসারের কাজের ফাঁকে এ কাজ করে বাড়তি আয় করেন।

গৃহিণী জরিনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, আমার এক মেয়ে পঞ্চম ও এক ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আমি কাজীপুরের নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় থাকি। আমার স্বামীর উপার্জনে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা ও সংসার চালানো টানপোড়ন শুরু হয়। তাই কম্বল তৈরির কাজ করি। এতে সংসার বেশ ভালো চলছে। জানা যায়, এ উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার পা চালিত ও চার শতাধিক ফ্ল্যাট লক পাওয়ার মেশিন রয়েছে।

কাজীপুর উপজেলার শিমুলদাইড় বাজার সমিতির সভাপতি আবু তাহের বলেন, ১৯৯৪ সালে স্থানীয় সাইদুল ইসলাম প্রথমে গার্মেন্টসের ঝুঁট কাপড় দিয়ে এ কম্বল তৈরি শুরু করে। সেই থেকে এখানে কম্বলের পাশাপাশি ছোট ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক ও তৈরি হচ্ছে। এসব তৈরি সামগ্রী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়।

কম্বল ব্যবসায়ী সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, শীতের মৌসুমে প্রতি বছর শুধু মাত্র শিমুলদাইড় বাজার থেকেই প্রায় ২০ লাখ কম্বল দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে নদী ভাঙ্গন কবলিত মানুষের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো।

এ প্রসঙ্গে কাজীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী বলেন, গার্মেন্টস শিল্পের পরিত্যক্ত ঝুঁটকাপড় দিয়ে কম্বল তৈরির ফলে কাজীপুরে প্রায় ৩০ হাজার লোকের কর্মস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যবসার প্রসার ঘটাতে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজ করছেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom