টিকা নিতে হৈ-হুল্লোড় শিক্ষার্থীদের, শঙ্কায় অভিভাবকরা
স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে ঠেলাঠেলি ও উপচেপড়া ভিড় দেখে বেশকিছু সচেতন শিক্ষার্থীর অভিভাবক সংক্রমণের শঙ্কা প্রকাশ করেন।
প্রথম নিউজ, রাজশাহী: সারাদেশের মতো রাজশাহীর গোদাগাড়ীর উপজেলা পরিষদ হলরুমে চলছে কোভিড-১৯ এর টিকাদান কর্মসূচি। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই টিকা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীরা শুরু করে হই-হুল্লোড়। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই প্রবেশদ্বারে প্রবেশের জন্য উপচেপড়া ভিড়, ঠেলাঠেলি ও গ্রিলে ঝুলে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টাও করতে দেখা গেছে।
এনিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। এছাড়া নারী শিক্ষার্থীরা পড়েন বিপাকে। স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে ঠেলাঠেলি ও উপচেপড়া ভিড় দেখে বেশকিছু সচেতন শিক্ষার্থীর অভিভাবক সংক্রমণের শঙ্কা প্রকাশ করেন। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের হলরুমে এমন ঘটনা ঘটে। সূত্র মতে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দেশব্যাপী চলা স্কুল-মাদ্রাসায় ১২ থেকে ১৮ বছরের শিক্ষার্থীদের মাঝে কোভিড-১৯ এর টিকাদান কর্মসূচি চলমান। রাজশাহী উপজেলায় ৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩৫ হাজার ৮০০ জন শিক্ষার্থী পাবে ফাইজারের টিকা।
এদিকে বুধবার পর্যন্ত ২৪ হাজার শিক্ষার্থী টিকা গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে বাকি ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর বৃহস্পতিবার টিকাদান শেষ হবে। শিক্ষার্থীদের মাঝে টিকাদান কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যবিধি মান্য করার জন্য নিয়োজিত আছেন আনসার ও পুলিশ সদস্যরা। তবে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে উপজেলা মিলনায়তনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা মেলে ভিন্ন চিত্র। শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাইনে না দাঁড়িয়ে হুড়োহুড়ি ধাক্কা-ধাক্কি করে টিকা নিতে হলরুমে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এদের মধ্যে অনেককে গ্রিলের রড বেয়েও ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। এদের অধিকাংশের মুখেই নেই মাস্ক। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ থাকলেও তাদেরকে দেখা যায়নি দায়িত্ব পালন করতে। এমনকি আশপাশে ওই টিকাকেন্দ্রে দায়িত্বরতদেরও দেখা যায়নি।
টিকা নিতে আসা আশহাবের অভিযোগ করেন, একটা উপজেলার সব স্কুলের শিক্ষার্থীদের ডেকেছে। সেই সকাল থেকে বসে আছি। কিন্তু টিকা দেওয়ার জন্য ন্যূনতম পরিবেশ দেখছি না। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এসে হুড়োহুড়ি করে টিকা নিতে কক্ষে ঢুকছে। এতে করোনায় আরোগ্যের চাইতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনায় বেশি। গোদাগাড়ীর আইহাই রাহি গ্রামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক খুরশেদ আলী বলেন, আমি আমার বোনকে আইহাই রাহি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পৌরসভা হলরুমে টিকা দিতে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখছি ন্যূনতম শৃংখলা নেই।
টিকা নিতে আসা এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, এখানে টিকা নেওয়ার ব্যবস্থাপনাটাই মনে হচ্ছে ঠেলাঠেলি। তাই আমার সন্তানকেও মনে হয় ঠেলাঠেলি করে টিকা নেওয়াতে হবে। তবে করোনা আক্রান্ত হলে এর দায় কে নেবে? নাম প্রকাশ না করে এক স্কুল শিক্ষক বলেন, যেভাবে আমাদের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে তা কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ছে না। দূরদূরান্ত থেকে আসা এই শীতে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। টিকা কেন্দ্রে ঢুকতে ঠেলাঠেলিতে অনেকে পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছে।
এদিকে অনেকেই অভিযোগ করছেন গত ৮ জানুয়ারি থেকে টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন হওয়ার পর গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা স্বাস্থ্যবিধি মানা ও টিকা দেওয়ার তদারকির দায়িত্বে থাকলেও একদিনও তিনি সেখানে উপস্থিত হননি।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হাসান শাওন বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে টিকা দেওয়ার স্থান নির্ধারণের দিন তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আরও জানান, অল্প সময়ের মধ্যে এ টিকাদান কর্মসূচি হওয়ায় এত অব্যবস্থাপনা। তবে নিয়ম মানতে চেষ্টা করা হয়েছে। জনবলের অপ্রতুল্যতা ও সময় স্বল্পতার কারণে তার কিছু করার নেই। এছাড়া তিনি বলেন, ফাইজারের টিকা এসি ঘর ছাড়া দেওয়া সম্ভব না। আর তাই এমন ঘর নির্ধারণ করে দেওয়ার কারণে এক জায়গায় বেশী শিক্ষার্থীর সমাগম হচ্ছে। আগামীতে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মাথায় রাখা হবে বলেও দাবি তার।
এদিকে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জানে আলম বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা দেওয়ার নির্দেশনা থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাও সচেতন না। এজন্য এই অব্যবস্থাপনা। তবে আগামীতে এসব বিষয়ে নজর রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানান তিনি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: