জবি’র হলে ছাত্রীকে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে

মারধর করা ছাত্রলীগের কর্মীরা হলেন- তামান্না ইসলাম তন্বী, ইশিতা, ফাল্গুনী আক্তার, নিনজা শিকদার, ইরা ও নাজমুন নাহার স্বর্ণা। তারা সবাই জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের কর্মী।

জবি’র হলে ছাত্রীকে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে

প্রথম নিউজ, জবি প্রতিবেদক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলের একটি রুমে এক শিক্ষার্থীকে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগকর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটে গত মঙ্গলবার রাতে। তবে বুধবার হল প্রভোস্টের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্র দেন নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী হাফসা বিনতে নূর। হাফসা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।

মারধর করা ছাত্রলীগের কর্মীরা হলেন- তামান্না ইসলাম তন্বী, ইশিতা, ফাল্গুনী আক্তার, নিনজা শিকদার, ইরা ও নাজমুন নাহার স্বর্ণা। তারা সবাই জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের কর্মী।  

অভিযোগে হাফসা জানান, মঙ্গলবার রাতে নিজেদের রুমের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জুনিয়র রুমমেট রেবেকা খাতুনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তার । একপর্যায়ে রেবেকা খাতুন হলের অন্য রুমের ছাত্রলীগের মেয়েদের নিয়ে এসে রুম আটকে হাফসাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন ও হেনস্তা করে। প্রায় তিন ঘণ্টা হেনস্তা করলে হাফসা অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার রুম পাশে হওয়ায় আমি এসে হাফসাকে রুম থেকে বের করে নিয়ে যেতে চেয়েছি। কিন্তু রেবেকা, নিনজা ও ফাল্গুনীসহ সবাই তাকে ঘেরাও করে ধরে যেন সে আসতে না পারে। একপর্যায়ে সে মোবাইল নিতে গেলেও তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে মোবাইল আনতে দেয়নি। অভিযোগকারী হাফসা বলেন, এটি আমাদের রুমের অভ্যন্তরীণ ঘটনা।

কিন্তু আমাদের দুই ব্যাচ জুনিয়র বোটানি বিভাগের রেবেকা খাতুন হলের অন্য রুমের ৭-৮ জন মেয়েকে নিয়ে আমাদের রুমে এসে আমাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে লাঞ্ছিত ও মারধর করে। তারা সবাই মিলে রাত সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আমার ওপর এ মানসিক নিপীড়ন চালায়। নিনজা শিকদার নামে এক মেয়ে এ পুরো ঘটনা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। শুধু তাই নয়, এই রেবেকার কর্মকাণ্ডে আমাদের অন্য রুমমেটরাও শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার আশঙ্কার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’
অভিযুক্ত নাজমুন নাহার স্বর্ণা বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি ম্যামকে সঙ্গে নিয়ে ওদের রুমে যাই। আমি গিয়ে ওদের শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু হাফসাকে মারধরের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। একপর্যায়ে আমি ওদের রুমে ম্যামকে রেখে নিচে চলে আসি। তারপর নাকি হাফসা আমাদের ছাত্রলীগের মেয়েদের গায়ে হাত দেয়।

হলের আবাসিক শিক্ষক মানসুরা বেগম বলেন, তুচ্ছ ঘটনার জেরে আবেগের বশবর্তী হয়ে এ কলহের সূত্রপাত। অবস্থা বেগতিক জেনে আমি সেখানে উপস্থিত হই। আমি যাওয়ার পরও তারা আক্রমণাত্মক ছিল। হাফসাকে তারা রুমের বাইরে যেতে ও ফোনটাও ধরতে দিচ্ছিল না। মূলত অন্য রুমের মেয়েদের নিয়ে আসার কারণেই এ ঘটনা এতদূর পর্যন্ত গড়ায়। আমি সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করার পরও তারা আমার সামনে বসেই আরও উত্তেজিত হয়ে যায়।

এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার বলেন, হলে বেশ কিছুদিন ধরে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই আছে। আমি এ ধরনের নানা ঘটনায় শঙ্কিত। আজ অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা আলোচনায় বসেছি। তারপর দুপক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। এরপর থেকে যদি কেউ এ রকম কাজের সঙ্গে জড়ায় তাহলে তার সিট বাতিল হবে।