জাবিতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীর ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ

মঙ্গলবার (৬ জুন) দিবাগত রাত ১১টার দিকে হামলার এ ঘটনা ঘটে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের একটি অ্যাম্বুলেন্সও ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

জাবিতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীর ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ

প্রথম নিউজ, জাবি: তিন দফা দাবিতে অবস্থানরত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়ের ওপর হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এতে আন্দোলনরত ওই শিক্ষার্থীসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (৬ জুন) দিবাগত রাত ১১টার দিকে হামলার এ ঘটনা ঘটে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের একটি অ্যাম্বুলেন্সও ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, হামলার নেতৃত্বে যারা ছিলেন তারা অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে গৌতম কুমার দাস (৪৫ ব্যাচ), নোবেল (৪৩ ব্যাচ), গোলাম রাব্বি (৪৫ ব্যাচ), মুরসালিন (৪৬ ব্যাচ), তানভীর (৪৬ ব্যাচ), রায়হান (৪৬ ব্যাচ), রাহাত (৪৭ ব্যাচ), তুষায় (৪৫ ব্যাচ), ফেরদৌস (৪৫ ব্যাচ), তারেক মীর (৪৬ ব্যাচ), সজীব (৪৫ ব্যাচ), নাফিস (৪৬ ব্যাচ) সরাসরি হামলায় অংশগ্রহণ করেন বলে জানান তারা।

হামলার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী তাপস্বী রাবেয়া  বলেন, ‘প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সহমত হয়ে আমরা সেখানে অবস্থান করি। এরপর যখন রাত দশটায় বিদ্যুৎ চলে যায় তখন রাতের আঁধারে আমাদের ওপর  ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। আমরা যারা নারী শিক্ষার্থী আছি তাদেরকে বিভিন্ন গালিগালাজও করা হয়। অনশনকারী শিক্ষার্থীকে জোর করে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়, এরপর আবার সেই অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করা হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. কামাল বলেন, আমি মেডিকেলে ডাক্তারের মাধ্যমে জানতে পারি মীর মশাররফ হলে শিক্ষার্থী অসুস্থ। এসময় আমি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে অসুস্থ শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসার পথে হলের শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তব্যরত চিকিৎসক আনিছুর রহমান বলেন, মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে আনা হয়। তখন অনশনকারী শিক্ষার্থী আমাকে জানায় তাকে জোর করে তুলে মেডিকেলে আনা হয়েছে এবং সে চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাকর না, বডিগার্ডও না। ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।’

এদিকে ওই ঘটনার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে একটি মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম। উপাচার্যের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন।

দাবিগুলো হলো- মীর মশাররফ হোসেন হলের সব অবৈধ ছাত্রদের রাতের মধ্যে হল ত্যাগ করতে বাধ্য করতে হবে, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাদী হয়ে মামলা করতে হবে, প্রক্টর এবং প্রাধ্যক্ষকে অব্যাহতি দিতে হবে, গণরুম এবং গেস্টরুম সংস্কৃতি শেষ করতে হবে, প্রথমবর্ষ থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হলে আসনের ব্যবস্থা করা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, ‘যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনারা নাম দেন সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত না। যদি কোনোভাবে কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’