জনগণের জীবনবাজি রাখা আন্দোলনের বিজয় নিশ্চিত: রিজভী
প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনগণের রাজপথ কাঁপানো আন্দোলন, দেশের ৯৫ শতাংশ জনমত এবং জাতিসংঘসহ গোটা বিশ্বের আহ্বান উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা আবারো এক তরফা পাতানো নির্বাচন আয়োজনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। জনগণ চূড়ান্ত লড়াইয়ে নেমেছে। তাদের জীবনবাজি রাখা উদ্বেল আন্দোলনের বিজয় এখন নিশ্চিত।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, শেখ হাসিনাকে জনগণ ভোট ডাকাতি করে আর কোন দিন সংসদে যাওয়ার সুযোগ দিবেনা। আর এই ভুয়া সংসদকে রাবার স্টাম্প বানিয়ে যেসব অবৈধ আইন পাশ করা হয়েছে তা তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত এমপিরা বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেবে।
তিনি বলেন, গতকাল সমাপ্তি ঘটেছে নিশিরাতের ভোট ডাকাতির মাধ্যমে গঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনের। গত ৫ বছর ধরে ভুয়া এমপিরা সংসদে দাঁড়িয়ে কেবল স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমান এবং বিএনপিকে নিয়ে মিথ্যাচার, খিস্তি-খেউড়, কুৎসা উদ্গীরণ আর আওয়ামী কোটারী স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, সংসদকে জনসম্পৃক্তহীন কথিত জনপ্রতিনিধি দাবীদাররা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মিথ্যাচার-প্রোপাগান্ডা-হুমকি-ধামকির বক্তব্য চর্চার ময়দান বানিয়ে ফেলেছিল। তারা সাধারণ জনগণের জন্য কল্যাণকর কিছু করেনি। মোট ২৭২ দিনের কার্যদিবসে এই সংসদকে আওয়ামী দলীয় আড্ডাবাজির আখড়ায় পরিণত করা হয়েছিল। ৫ বছর ধরে অবৈধ সংসদে যে ১৬৫টি বিল পাস করেছে তার প্রায় সবই গণবিরোধী। একাদশ সংসদের ২৫টি অধিবেশনের মধ্যে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সংসদে বিশেষ অধিবেশনের নামে জনগণের বিপুল অর্থের শ্রাদ্ধ করা হয়েছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, গত মাসে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, সংসদ পরিচালনায় প্রতি মিনিটে গড় ব্যয় হয় প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনার প্রশংসায় ৬১ ঘণ্টা ২৬ মিনিট ব্যয় হয়েছে। এর আর্থিক মূল্য প্রায় ১০০ কোটি ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭০৪ টাকা। কোরাম সংকটের সংসদের ক্ষতি প্রায় ৮৯ কোটি ২৮ লাখ আট হাজার ৭৭৯ টাকা।
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সরকারি দল একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা করেছে। তার মানে সংসদকে আওয়ামী লীগ চিরদিন ক্ষমতায় থাকার খায়েশ পূরণে আপন স্বার্থে যা ইচ্ছা তাই করেছে। তবে শেষ হওয়া অবৈধ সংসদই আওয়ামী লীগের শেষ সংসদ। তাদের আর ফিরে যাওয়ার পথ নেই, বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, আওয়ামী নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী দলদাস পুলিশ-প্রশাসন সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিরোধী দল-মত উচ্ছেদ করে পুরানো কায়দায় নতুন কোন ফর্মূলায় ভোটরঙ্গ নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য। দেশে জনগণের ভোটের অধিকার, সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালনকালে বা পালনের পরে পুলিশ নানা অভিযোগের অজুহাতে বিএনপির নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ও নান নিপীড়ন-নির্যাতন শুরু করে দেয়।
তিনি বলেন, বিরোধী দলগুলোর এসব কর্মসূচি পালনকালে সরকারি দল ও এর অঙ্গসংগঠনের সাঙ্গপাঙ্গদেরও রাজপথে মারমুখী অবস্থানে দেখা যায় ও তারা মারণাস্ত্রসহ নানা সহিংস সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করে যার ভিডিও চিত্র এবং স্থিরচিত্র হরহামেশা গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেসব গুণ্ডাপাণ্ডাদের বা নির্দেশদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগের কোন নেতাকে গ্রেফতার হতে দেখলাম না। তাহলে রাষ্ট্রের এই পুলিশবাহিনী কার? আওমামী লীগের? পুলিশের এহেন দলীয় দাসসূলভ কমের্র তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা সারাদেশ থেকে খবর পাচ্ছি, বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে তথাকথিত নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ভোটার বাড়াতে নতুন এক অভিনব কদর্য মিশনে নেমেছেন শেখ হাসিনা। তার নির্দেশেই সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় কার্ডের মাধ্যমে সুবিধা ভোগী প্রায় দুই কোটি মানুষকে টার্গেট করেছে আওয়ামী লীগ এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় অনুগত প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
রিজভী বলেন, গত কয়েকদিন যাবত প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায়, প্রতিটি উপজেলায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর হতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রত্যক্ষ ও পরেক্ষভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত এবং উপকার ভোগীদের নিয়ে সমাবেশ করছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং নেতারা। প্রায় প্রতিটি সমাবেশে জেলা প্রশাসক, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ইউএনওসহ থানার ওসিরাও উপস্থিত থাকছেন। প্রতিটি গ্রাম থেকে কার্ডধারী সুবিধাভোগীদের সমাবেশে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। না গেলে কার্ড বাতিলের হুমকি দেয়া হচ্ছে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের এই সমাবেশে শেখ হাসিনা সরকারের কথিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অবহিতকরণ এবং আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নৌকায় ভোট প্রদানের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় সকল মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, স্বামী পরিত্যক্তা, ভিজিএফ, টিসিবি, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সকল ধরনের সুবিধা ভোগীদের কার্ড ভোটের আগে জমা দেয়া এবং ভোট কেন্দ্রে এসে তা ফেরত নেয়া হবে বলে অধিকাংশ সমাবেশে জানানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভোট কেন্দ্রে সন্তোষজনক মাত্রায় ভোটার উপস্থিতি এবং ভোট প্রদানের শতকরা হার বড় আকারে বিদেশিদের দেখানোর জন্য এই ভয়াবহ কূটকৌশল নিয়েছে। জনগণের কস্টার্জিত টাকায় ভাতাভোগী অসহায়-হতদারিদ্র মানুষদেরকে শেখ হাসিনা গণতন্ত্র ও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টিকারী বিদেশিদের সামনে প্রতারণার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। কারণ সরাসরি কার্ডধারী এক কোটি ২০ লাখ ভাতা ভোগীসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি মানুষ।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ১২ কোটি ভোটারের মধ্যে ছয় ভাগের এক ভাগ উপকারভোগ। শেখ হাসিনা এবং তার পারিষদগণ ভালো করেই জানে যে, বাংলাদেশের মাটিতে ভোটারবিহীন ভোট কেন্দ্রে আর গরু-ছাগল ঘোরাফেরা করবে না। নিশিরাতের ভোটও হবেনা। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। সুতরাং শেখ হাসিনার অসংলগ্ন কথাবার্তা এবং উদ্ভ্রান্তের মতো আচরণ স্বাভাবিক মানুষের পর্যায়ে নেই।
তিনি বলেন, আমরা খবর পাচ্ছি- বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন গোপন বৈঠক হচ্ছে, গণভবনে শলা-পরামর্শ হচ্ছে কীভাবে? জনগণের নির্ভীক সাহসী লড়াই নির্মূল করা যায়? কিন্তু লাভ নেই। কারণ একটি দেশের জনগণ সর্বদাই ‘চির উন্নত মমশির’ জনগণ হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছে। কোন কিছুতেই কিছু হবে না। সময় শেষ, পতন হবেই। সুতরাং আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিভিল প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনসহ সকলকে বলবো জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না। গণশত্রু হবেন না।
সারাদেশে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা মামলার বিবরণ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১১টি মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ২৯২ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব মামলায় এক হাজার ৪৫ জনের অধিখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।