জঙ্গী নাটক মঞ্চস্থ করে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে সরকার: রিজভী
প্রথম নিউজ, ঢাকা: পাশ্ববর্তী দেশের পরিকল্পনায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটি জঙ্গী নাটক মঞ্চস্থ করে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘সবকিছু উজাড় করে দেয়া শেখ হাসিনা সরকারকে জোড়াতালির ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের পরিকল্পনায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটি জঙ্গী নাটক মঞ্চস্থ করে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়ের মতো আগামী ৭ জানুয়ারির ভাগ বাটোয়ারার নির্বাচনের প্রাক্কালে জঙ্গী নাটক মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা করছে।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ, এদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু উগ্র নয়। বাংলাদেশের অসংখ্য ছেলেমেয়ে ইসলাম ধর্মের শিক্ষা গ্রহণের জন্য কওমী, আলীয়া, সুন্নী মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। এই পর্যন্ত এসব মাদ্রাসায় কোনো ধরণের উশৃংখল কর্মকাণ্ড কিংবা সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রলীগ বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলো চর দখলের মতো দখল করে রেখেছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ফেসবুকে ভারতবিরোধী লেখার জন্য বুয়েটের ছাত্র আবরারকে হত্যা করেছে, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপর বার আর হামলা করে তাদেরকে মারাত্মকভাবে আহত করেছে, গত পরশু ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। এভাবে ছাত্রলীগ-যুবলীগের আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সমগ্র দেশের আপামর জনসাধারণকে জিম্মি করে রেখেছে অথচ আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী প্রকৃত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করে তাদের পার্শবর্তী দেশের নির্দেশনায় জঙ্গী নাটক মঞ্চস্থ করে সাধারণ জনগণের মৌলিক অধিকার-ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টায় মরিয়া হয়ে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু ফ্যাসিস্ট রক্তপিপাসু সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে এ দেশের ইসলামপ্রিয় আলেম ওলামাদের বহিঃবিশ্বে জঙ্গী হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে আহ্বান করছি আপনারা শেখ হাসিনা ও তাঁর প্রভুদের প্রপাগান্ডাকে বিশ্বাস না করে আওয়ালীগের একতরফা সাজানো ডামি নির্বাচন নিয়ে স্বোচ্চার হোন এবং এদেশের জনগণের একান্ত চাওয়া গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন।’
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামীলীগ ২০১৪ সালে বিনা ভোটে অটোপাস এবং ২০১৮ সালে মধ্যরাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসলেও এবার আর কোনো রাখ-ঢাক নেই তাদের। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে প্রকাশ্যে আসন বাটোয়ারা করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। গোটা দেশ গোল্লায় যাচ্ছে সেদিকে ন্যূনতম ভ্রূক্ষেপ নেই। তার পরিষদবর্গ-দলদাস-আজ্ঞাবহরা ব্যস্ত কিভাবে পাতানো নির্বাচনী ম্যাচ খেললে জনগণ এবং বিদেশিদের চোখে ধুলো দেয়া যাবে। একদল উচ্চ শিক্ষিত তথাকথিত আত্মা ও ব্যক্তিত্ব বিক্রি করা বুদ্ধিজীবি ব্যস্ত আছেন নির্বাচনে নৌকা জিতবে কত আসনে সেই হিসাব নিয়ে। প্রশাসন ব্যস্ত কিভাবে নির্বাচন করলে জনগণ বুঝতে পারবে না যে এটা পাতানো নির্বাচন হচ্ছে সেই কৌশল নিয়ে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘মাফিয়া চক্রের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ব্যস্ত শেখ হাসিনার হাতে জিম্মী জনগণের এই মহাবিপদের সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কিভাবে বাড়ানো যায় সেই কৌশল নিয়ে। আর জনগণ লড়াই করছে জীবন বাঁচানোর যুদ্ধে। এর মধ্যে ধেয়ে আসছে প্রলয়ংকরী বিপর্যয়। বেপরোয়া ও নজিরবিহীন আওয়ামী লুটপাটে ধ্বংস হয়ে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ৯ বিলিয়ন ডলারে নীচে। ১১ ডিসেম্বর প্রথম আলো’র কলামে বলা হয়েছে, “আইএমএফের এসডিআর ঋণ, ব্যাংকগুলোর দেশি মুদ্রা ক্লিয়ারিং এবং এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর বিল বাদ দিলে প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দাঁড়ায় প্রায় ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এক সপ্তাহ আগে বলেছেন, আমরা বর্তমানে একেবারে তলানিতে এসেছি। আর তো নিচে নামার পথ নেই। আমার ৩৬ বছরের সিভিল ও পাবলিক সার্ভিসে কখনোই এমন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট প্রত্যক্ষ করিনি। বিদেশি ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এই অবস্থায় কার্যত দেউলিয়াত্ব ঘোষণার অপেক্ষা মাত্র।’
রিজভী বলেন, ‘সারা দেশে ধাবিত হচ্ছে নিশ্চিত ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির দিকে। লুটপাট ও দুর্নীতি করে ব্যাংকিং সেক্টর ফোকলা করে দিয়েছে আওয়ামী লুটেরা গোষ্ঠি। টাকার ঘাটতির কারণে দেশের শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন সেবা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল এক চিঠিতে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকের চলতি হিসাবের ঋণাত্মক স্থিতি সমন্বয়ের জন্য ২০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে। দেশের জনগণ জানেন, এই ব্যাংকগুলো শেখ পরিবারের ক্যাশিয়ার হিসাবে সর্বমহলে পরিচিত কুখ্যাত চিহ্নিত মাফিয়া চক্র দখল করে গিলে খেয়েছে। একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার সহযোগিতায় শরিয়াহভিত্তিক লাভজনক ব্যাংকগুলোর মালিক, চেয়ারম্যান, পরিচালকদের চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে দখলের ইতিহাস রীতিমত রোমহর্ষক।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অসহনীয় মূল্যস্ফীতি, নজিরবিহীন ডলার সংকট, ডলারের বিনিময়ে টাকার অভূতপূর্ব অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং ও আর্থিক অব্যবস্থাপনা, অপরিণামদর্শী ভ্রান্ত নীতি, অদক্ষ ও দলকানা নীতি বৈষম্য, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচার, ঋণ প্রাপ্তির অপর্যাপ্ততা, সুশাসনের অভাব, সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আয় বৈষম্য এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রহীনতা বর্তমান অর্থনৈতিক নৈরাজ্যে দেশ ও জনগণের মরণদশা। অর্থ পাচার করে বিদেশে গাড়ি বাড়ি ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। সিঙ্গাপুরসহ দেশে দেশে শ্রেষ্ঠ ধনীর তালিকাভুক্ত হচ্ছে। দেশে-বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছে। আর অন্যদিকে গরিব আরও গরীব হচ্ছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, করোনা উত্তরকালে প্রায় চার কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছে। এক রিপোর্টে বলা হয়েছে বর্তমানে ৪২ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্যের যাঁতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অর্থনীতি আজ মহাসংকটে নিমজ্জিত। রাষ্ট্রযন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামীলীগ ছাড়া কারো বাসযোগ্য নেই এখন এই দেশ। একদিকে বধ্যভূমি অন্যদিকে দুর্ভিক্ষের এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে প্রতিটি মানুষকে রাজপথে নেমে মাফিয়া সরকারের ক্ষমতায় থাকার সিলমোহরের নির্বাচন বানচাল করে দিতে হবে। এখন আর কারো ঘরে বসে থাকার পরিস্থিতি নেই। আপনাকে প্রতিবাদে নামতেই হবে।’
রাষ্ট্রীয় অর্থের বিনিময়ে খরিদ করা “কুইন্স পার্টি”, ভূঁইফোড় পার্টি-তৃনভোজী পার্টি-ডামি পার্টি-খুঁদকুঁড়ো পার্টি এবং বিভিন্ন দল থেকে অচ্ছুত লোকজন হায়ার করে নিয়ে কথিত নির্বাচনী নাটক মঞ্চস্থ করার তামাশায় কেউ কোনো প্রক্রিয়ায় অংশ নিবেন না। ভোট কেন্দ্র্রে যাবেন না। ভোট দিবেন না। ‘আমরা আর মামুরা’ মার্কা এই নির্বাচনের প্রার্থী বা তাদের পক্ষভুক্তদের সংশর্ব ত্যাগ করুন। বিএনপি বা অঙ্গসংঠনের কোনো পর্যায়ের কোনো নেতাকর্মী যদি এই ভূয়া নির্বাচন এবং কোনো প্রার্থীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, প্রচার প্রচারণায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অংশগ্রহণ-সমর্থন বা ভোট প্রদান কেন্দ্রীক কর্মকাণ্ডে ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে কঠোরতর সাংগঠনিক ব্যবস্থানেয়া হবে।’