জিও ব্যাগ বাড়িতে নিচ্ছেন স্থানীয়রা, ঝুঁকিতে নদীর বাঁধ

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বাঁধ নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।

জিও ব্যাগ বাড়িতে নিচ্ছেন স্থানীয়রা, ঝুঁকিতে নদীর বাঁধ

প্রথম নিউজ, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন ঠেকাতে নির্মাণ করা হচ্ছে বাঁধ। এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ সিসি ব্লক এবং বালুভর্তি জিও ব্যাগ। তবে স্থানীয় কিছু অসাধু মানুষ নিজের বাড়িতে এসব সিসি ব্লক তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। জিও ব্যাগ কেটে বালু ফেলে দিয়ে সেগুলোও নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও নদীভাঙনের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা নতুন করে আবারও ঝুঁকিতে পড়ছেন। বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকল্পের সুবিধা থেকে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বাঁধ নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।

 আমাদের কাজ বাঁধ নির্মাণ করে স্থানীয় জনগণকে রক্ষা করা। তারপরও দেখা যায় অনেকে বেড়িবাঁধের জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক বাসায় নিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনছেন। কারণ জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক বাসায় নিলে তারাই ভাঙনের শিকার হবেন। সার্বক্ষণিক বাঁধ পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা বেড়িবাঁধে সচেতনতামূলক কাজ করবো। এগুলো রক্ষায় যাতে স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন। 

আইএমইডি’র প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ‘কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর ভাঙন রোধ’ নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য চিলমারী বন্দর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে রক্ষা করা।

এর অংশ হিসেবে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের জোড়গাছ এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর বরাবর ৬০০ মিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজ করা হয়। এ কাজে সিসি ব্লক ব্যবহার করা হয় ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮২টি। এছাড়া ২৫০ কেজি ওজনের ১ লাখ ৮ হাজার ১৭৩টি জিও ব্যাগ ব্যবহার করা হয়।

এমন অনেকগুলো স্থানে বাঁধ রক্ষায় জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীদের মধ্যে কিছু মানুষ এসব জিও ব্যাগ ছুরি বা কাঁচি দিয়ে কেটে বালি ফেলে দিয়ে ব্যাগগুলো নিয়ে বাড়ির কাজে ব্যবহার করছেন। একইভাবে সিসি ব্লকও বেড়িবাঁধ থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ফের নদীভাঙনের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এছাড়া নদীতীর সংরক্ষণ কাজের নিকটবর্তী স্থানে বালু উত্তোলন , মজুত ও নদীতীরের ফুটপাত থেকে সিসি ব্লক নিজেদের কাজে ব্যবহারের ফলে তীর ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে।

 স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল মেয়াদে কুড়িগ্রাম বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। পরবর্তীসময়ে প্রকল্প এলাকায় শহর রক্ষা প্রকল্প এবং ইমারজেন্সি ডিজাস্টার ড্যামেজ রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্টের আওতায় বিভিন্ন সময় নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ ও ক্রসবার স্পার নির্মাণ করা হয়। এই প্রকল্পগুলোর আওতায় ১১৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ১৭টি রেগুলেটর, ৫ দশমিক ৬৫০ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজ, দুটি গ্রোয়েন, একটি স্পার ও ১৩টি ক্রসবার নির্মাণ করা হয়েছে। 

আইএমইডি’র এমন প্রতিবেদনের বিষয়ে বাপাউবো বলছে, কেউ যাতে বাঁধে ব্যবহৃত জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক নিজেদের কাজে ব্যবহার না করে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাবে বাপাউবো।

আইএমইডি’র প্রতিবেদন প্রসঙ্গে বাপাউবো’র উত্তরাঞ্চলের (রংপুর) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কাজ বাঁধ নির্মাণ করে স্থানীয় জনগণকে রক্ষা করা। তারপরও দেখা যায় অনেকে বেড়িবাঁধের জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক বাসায় নিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনছেন। কারণ জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক বাসায় নিলে তারাই ভাঙনের শিকার হবেন। সার্বক্ষণিক বাঁধ পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা বেড়িবাঁধে সচেতনতামূলক কাজ করবো। এগুলো রক্ষায় যাতে স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মোটিভেশনের কাজের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কাজ করা হবে। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন রোধে  ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৩০২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল মেয়াদে কুড়িগ্রাম বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্প এলাকায় শহর রক্ষা প্রকল্প এবং ইমারজেন্সি ডিজাস্টার ড্যামেজ রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্টের আওতায় বিভিন্ন সময়ে নদীতীর সংরক্ষণ কাজ ও ক্রসবার স্পার নির্মাণ করা হয়। এই প্রকল্পগুলোর আওতায় ১১৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ১৭টি রেগুলেটর, ৫ দশমিক ৬৫০ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজ, দুটি গ্রোয়েন, একটি স্পার ও ১৩টি ক্রসবার নির্মাণ করা হয়েছে।

এসব প্রকল্পের ফলে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার ১৮৪ হেক্টর এলাকা বন্যামুক্ত হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় কুড়িগ্রাম শহর, রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলা শহর এবং উলিপুর-তিস্তা ৫০ কিলোমিটার রেললাইন, প্রায় ২৩৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৮০০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ও চিলমারী বন্দরসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই এলাকার বিভিন্ন স্থাপনা ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য ২০০৬ সালে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) সমীক্ষা করে। ওই সমীক্ষায় তিনটি পর্যায়ে প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। তারপর প্রথম পর্যায়ে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬ দশমিক ৪৫০ কিলোমিটার স্থায়ী তীর সংরক্ষণ কাজ ও একটি ক্রসবার পুনর্বাসন করা হয়।

এছাড়া আইডব্লিউএম’র সুপারিশ করা ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলো স্থায়ীভাবে রক্ষার জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। আইডব্লিউএম এর সমীক্ষা ও বাপাউবো গঠিত কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এখন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ৪ হাজার ৮শ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ, ৫২ দশমিক ৭০ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতীকরণ এবং দুটি আরসিসি ঘাট নির্মাণ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে একনেকের জন্য তৈরি সারসংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন, প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার অনন্তপুর এলাকার নয়ারদারা এবং চিলমারী উপজেলার ফকিরেরহাট, জোড়গাছ, চিলমারী বন্দর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom