ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে রেস্তোরাঁ ভাঙচুর-লুটপাটের অভিযোগ

হামলাকারী নেতা-কর্মীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম এ সিফাদ কোরাইশী ওরফে সুমনের ঘনিষ্ঠ অনুসারী বলে জানা গেছে। 

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে রেস্তোরাঁ ভাঙচুর-লুটপাটের অভিযোগ

প্রথম নিউজ, মানিকগঞ্জ: মদ্যপ অবস্থায় মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় ঢুকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে পৌর এলাকার বেউথা এলাকায় ‘টি অ্যান্ড ফিস ল্যান্ড’ নামে রেস্তোরাঁয় এ হামলা ও লুটপাট করা হয়। হামলাকারী নেতা-কর্মীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম এ সিফাদ কোরাইশী ওরফে সুমনের ঘনিষ্ঠ অনুসারী বলে জানা গেছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার বেউথা এলাকায় রেস্তোরাঁ গড়ে তোলেন এম এম জনি। তিনি জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক। গতকাল সোমবার রাত ৮টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক মনিরুল হক ওরফে মিম, ছাত্রলীগ কর্মী শামীম হোসেন ওরফে বাবু, আতিকুর রহমান ও দিহান আহমেদ তন্ময়সহ ছাত্রলীগের ছয়-সাতজন নেতা-কর্মী মদ পান করে ওই রেস্তোরাঁয় ঢুকে অপ্রীতিকর আচরণ ও রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া তরুণীদের উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। 

এছাড়াও রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া অন্যান্য লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এ সময় ওই রেস্তোরাঁর মালিক জনি তাদেরকে সংযত হওয়ার অনুরোধ করলে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে গালাগাল করতে থাকেন। এ সময় তারা বলতে থাকেন তারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন এবং কিছুক্ষণ পরে সেখান থেকে চলে যান। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রায়ই রেস্তোরাঁয় এসে বিশৃঙ্খলা করেন এবং খাবার খেয়ে অনেক সময় বিল কম দিয়ে চলে যান বলেও অভিযোগ করেন রেস্তোরাঁর মালিক।

এরপর রাত ১০টার দিকে মিম, বাবু ও আতিকসহ ছাত্রলীগের ১০-১২ জন নেতা-কর্মী ধারালো চাপাতি ও রাম দা নিয়ে ওই রেস্তোরাঁয় ঢুকে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এ সময় তারা রেস্তোরাঁর ছয়টি টিন সেড ঘর, দুটি ফ্রিজ, বেশ কয়েকটি চেয়ার ও একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। বাঁধা দিতে গেলে হামলাকারীরা রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক আসিফ হোসেনকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। এতে তার দুই হাত গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়।

রেস্তোরাঁর মালিক এম এম জনি জানান, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মদ পান করে রেস্তোরাঁয় এসে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছিল। এ সময় তাদের বাধা দিলে হামলাকারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আমরা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমনের লোকজন। পরে জনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গে মুঠোফোনে কল করে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর রেস্তোরাঁ থেকে তারা চলে যায়। কিন্তু রাত ১০টার দিকে তারা আবার এসে রেস্তোরাঁয় হামলা চালায়। এতে আমার প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করবেন বলে তিনি জানান।

রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক আসিফ হোসেন জানান, মদ্যপ অবস্থায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করে কাস্টমারদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে থাকে। এ সময় তাদের বাঁধা দিলে আমাকে চাপাতি দিয়ে দুটি কোপ দেয়। এতে আমার হাতে গুরুতর জখম হয়। তারা রেস্তোরাঁর বেশ কয়েকটি টিনে টং ঘর, চেয়ার-টেবিল, ফ্রিজসহ আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র ভাঙচুর করে এবং চলে যাওয়ার সময় বলে- ‘আমরা ছাত্রলীগ করি, সুমন ভাইয়ের লোক।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া এক ব্যক্তি জানান, গতকাল রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার দিকে তিনি পরিবার নিয়ে ওই রেস্তোরাঁয় খেতে যান। এসময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাকে বলেন, তুই কে? তিনি বলেন, আমি কাস্টমার। এ কথা শুনে একজন চাপাতির উল্টো দিক দিয়ে তার শরীরে আঘাত করে এবং গালাগাল করতে থাকে। পরে তাকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রেস্তোরাঁ থেকে বের করে দেন।

এ বিষয়ে জানতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম এ সিফাদ কুরাইশী ওরফে সুমনের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। কোনো ব্যক্তির অন্যায়-অপরাধের দায় সংগঠন বহন করবে না। বিষয়টি তদন্ত করে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম।

মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ সরকার জানান, ইতোমধ্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তিনি। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom