চালু হয়নি ৩৪ লাখ টাকার ট্রাফিক সিগন্যাল, যানজটে নাকাল রংপুরবাসী

নগরীতে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট স্থাপনের এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও চালুর কোনো উদ্যোগ নেই।

চালু হয়নি ৩৪ লাখ টাকার ট্রাফিক সিগন্যাল, যানজটে নাকাল রংপুরবাসী

প্রথম নিউজ, রংপুর: রংপুর মহানগরীতে দিন দিন বাড়ছে যানজট। তীব্র যানজটের কারণে নাকাল হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকলেও যানজট পরিস্থিতি অনেকটাই অনিয়ন্ত্রিত। ইশারা করে, বাঁশি বাজিয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণে হাঁপিয়ে উঠেছে ট্রাফিক পুলিশ। অথচ নগরীতে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট স্থাপনের এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও চালুর কোনো উদ্যোগ নেই।

এ নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ওপর দায় চাপিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রংপুর মহানগর পুলিশ (আরপিএমপি)। অপরদিকে সিটি কর্পোরেশন উল্টো দায় চাপিয়েছে আরপিএমপিকে। পাল্টাপাল্টি দায় না চাপিয়ে ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট চালুর দাবি সচেতন মহলের।  

জানা গেছে, রংপুর মহানগরীতে যানজট নিরসনে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পরীক্ষামূলকভাবে পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড় ও লালকুঠি মোড় এলাকায় ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেন। এ লক্ষ্যে ২০২১ সালের ২৮ জুন লালকুঠি মোড়ে অবৈধ দখলদারদের ১৩টি দোকানপাট উচ্ছেদ করেন সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ২০২২ সালের শুরুতে ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট স্থাপন করা হয় ওই তিন স্থানে।

নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড় ও লালকুঠি মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল পরিচালনায় বসানো হয় যন্ত্রপাতি। পায়রা চত্বরে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যালের লাইটপোস্টগুলো স্থাপন করা হলেও পরবর্তীতে সেগুলো সরিয়ে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে স্থাপন করা হয়। বর্তমানে এসব সিগন্যাল পোস্ট চালু না হওয়ায় ৩৪ লাখ টাকার সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী।

এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর যানজট কমাতে ট্রাফিক পুলিশ লাঠি দিয়ে ইশারা করে, বাঁশি বাজিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, রাস্তার ধুলোবালির মাঝে যানজট নিরসনে কাজ করে যাওয়া ট্রাফিক পুলিশেরা নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। সনাতনী পদ্ধতিতে যানজট নিরসন করতে গিয়ে অনেক সময় যানবাহনগুলোর ধাক্কায় অনেক ট্রাফিক পুলিশকে আহত হতে হয়েছে।

রংপুর মহানগরীতে যানজট নিরসনে নির্দিষ্ট লেন ব্যবহারে বাধ্যবাধকতাসহ যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা ও রাস্তার ধারে দোকানপাট বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। ট্রাফিক আইন মেনে চলাচলের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ প্রয়োগে তৎপরতাও চালাচ্ছেন। তারপরও অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনগুলো নির্দিষ্ট লেন ব্যবহার না করার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে, যানজট বাড়ছে।

রংপুর নগরীর পায়রা চত্বর সেন্ট্রাল রোড এলাকার বাসিন্দা হাসনাইন আহমেদ নয়ন বলেন, রংপুর নগরীতে যানজট এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। নগরীর তিনটি পয়েন্টে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা হলেও সেটি আজও চালু হয়নি। দেশ ডিজিটাল হলেও রংপুরের ট্রাফিক ব্যবস্থা কেন ডিজিটাল হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়।

সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি সাব্বির আরিফ মোস্তফা পিয়াল বলেন, এখনও ট্রাফিক পুলিশ হাতের ইশারা কিংবা বাঁশি বাজিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন। এরপরেও ফাঁক-ফোকর পেলেই রিকশা-অটোরিকশা কিংবা মোটরসাইকেল সিগন্যাল অমান্য করে চলাচল করছে। ফলে রাস্তা পারাপার হওয়া নারী, শিশু, বৃদ্ধরা প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। রংপুর নগরীকে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যালের আওতায় আনা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি  বলেন, রংপুর উন্নত হচ্ছে কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে। ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্টগুলো স্থাপনেও পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে। আমরা চাই জনগণের টাকার সঠিক ব্যবহার হোক। লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপিত ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্টগুলো চালু না হওয়ায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

যানজট নিরসনে রংপুর সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত না রাখা, পার্কিংয়ের জায়গায় ব্যবসায়ীদের দোকান বসাতে দেওয়া, রাস্তার ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি অটোরিকশার লাইসেন্স প্রদান, যততত্র ডাস্টবিন স্থাপনসহ নানা কারণে যানজট নিরসন প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি করেন আরপিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) মো. মেনহাজুল আলম। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, নগরীর তিনটি পয়েন্টে স্থাপন করা ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্টগুলো শিগগিরিই চালু করা হবে। এ নিয়ে সিটি মেয়রের সঙ্গে কথাও হয়েছে। আমরা ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট উদ্বোধনের প্রস্তুতিও নিয়েছি।

এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) প্যানেল মেয়র মাহবুববার রহমান মঞ্জু  বলেন, ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপনের পর পরীক্ষামূলক চালানোর সময় কিছু ত্রুটির কথা জানায় ট্রাফিক বিভাগ। বিষয়টি ঢাকার সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে জানালে তারা রংপুরে এসে সিগন্যালের ত্রুটিগুলো সারিয়ে দিয়েছে। দ্রুতই ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যালটি চালু করা হবে।