চমেকে ভর্তি ২০৩ জনের ১৬১ জনই শিক্ষার্থী, গুলিবিদ্ধ ২৪
কোটা সংস্কার আন্দোলন
প্রথম নিউজ, চট্টগ্রাম: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে ২০৩ জন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ছুরিকাঘাত ও গুলিবিদ্ধ হয়ে চার শিক্ষার্থী ও দুই পথচারী নিহত হয়েছেন। রবিবার (২৮ জুলাই) চমেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে এই তথ্য জানিয়েছেন। জানা যায়, ১৬ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় চমেকের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া ২০৩ জনের মধ্যে ১৬১ জনই শিক্ষার্থী। নিহত ৬ জনের মধ্যে পাঁচজনকেই মৃত অবস্থায় সরকারি এই হাসপাতালে আনা হয়। এছাড়া আহতদের মধ্যে ৬ জন পুলিশ সদস্য, ৩৬ জন সাধারণ মানুষ এবং ৬ জন নারী ও এক শিশু রয়েছে। আহতদের মধ্যে ২৪ জন গুলিবিদ্ধ। জানা গেছে, ১৬ ও ১৮ জুলাই মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট মোড়ে এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে।
চমেক হাসপাতালের হিসেব অনুযায়ী, গত ১৬ থেকে ২৫ জুলাই হতাহত হওয়া ২০৩ জনের মধ্যে ৫ জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৯৮ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ৯৯ জন আহত ব্যক্তিকে চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে ৯৩ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সবশেষ রবিবার (২৮ জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত চমেক হাসপাতালের ২নং ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ১ জন ও ২৬নং অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে পাঁচজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
চমেক সূত্র আরও জানায়, আহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিকিৎসাধীন ছিলেন ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ১২১ জন, অর্থোপেডিক ১১ জন, ২৮নং নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ১৭ জন এবং চক্ষু ওয়ার্ডে ১৭ জন। বাকি ৩১ জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারি হাসপাতালের মধ্যে শুধু চমেক হাসপাতালের তথ্য পাওয়া গেলেও চট্টগ্রামের অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কাছে হতাহতদের কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ। গতকাল রবিবার বিকালে তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় নগরের বেসরকারি কোনো হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক কোটা আন্দোলনে হতাহতের কোন পরিসংখ্যান দিতে পারেনি। বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে শুধু পার্কভিউ হাসপাতালে ১৬ জুলাই ৯ জন এবং ১৮ জুলাই ৮ জন আহত ব্যক্তি ভর্তি হয়েছেন বলে মৌখিকভাবে সিভিল সার্জন কার্যালয়কে জানায়।
চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন শিক্ষার্থী ও দুজন পথচারী নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৬ জুলাই মুরাদপুর এলাকায় অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে মারা যান নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ শান্ত (২৪) এবং একইদিন ছুরিকাঘাতে মারা যান চট্টগ্রাম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র এবং চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক কক্সবাজার পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামা গ্রামের শফিউল আলমের ছেলে ওয়াসিম আকরাম (২৩)।
১৬ জুলাই বিকালে মুরাদপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নগরের শুলকবহর এলাকার ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী মো. ওমর ফারুক। ১৮ জুলাই বিকালে বহদ্দারহাট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় স্থানীয় মুদি দোকানের কর্মচারী ১৪ বছরের কিশোর সাইমন। সবশেষ গত মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২২)। ১৮ জুলাই নগরের বহদ্দারহাটে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সেদিন বিকেলে বহদ্দারহাট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মোহাম্মদ ইমাদ (১৮) নামে এক শিক্ষার্থী।