চীন ও ভারত ঋণ মওকুফ করলে শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেবে আইএমএফ

যেকোনো দেশকে ঋণ দেওয়ার আগে আইএমএফ এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যে তারা ঋণ ফেরত পাবে।

চীন ও ভারত ঋণ মওকুফ করলে শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেবে আইএমএফ
চীন ও ভারত ঋণ মওকুফ করলে শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেবে আইএমএফ

প্রথম নিউজ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঋণসংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা। সংকট মোকাবিলায় তারা ইতিমধ্যে দুর্দিনের ত্রাতা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে সহজে ঋণ পাচ্ছে না তারা। ঋণ দেওয়ার আগে আইএমএফ বলে দিয়েছে, চীন ও ভারত যদি শ্রীলঙ্কার দেনা কমাতে রাজি হয়, তাহলে তারা ঋণ দেবে। যেকোনো দেশকে ঋণ দেওয়ার আগে আইএমএফ এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যে তারা ঋণ ফেরত পাবে। আইএমএফের কাছে তারা ২৯০ কোটি ডলারের বেইল আউট চেয়েছে। খবর বিবিসির। এই পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি নন্দলাল ভীরাসিংহে বিবিসিকে বলেন, ‘এখন সব পক্ষেরই উচিত হবে নিজেদের স্বার্থে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া। আইএমএফ যত তাড়াতাড়ি আমাদের ঋণ দেবে, ততই মঙ্গল—ঋণদাতা হিসেবে তাদের এবং গ্রহীতা হিসেবে আমাদের। এতে আমাদের পক্ষে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা সহজ হবে।’

নন্দলাল ভীরাসিংহে আরও বলেন, ‘আমরা এ ধরনের পরিস্থিতিতে থাকতে চাই না—ঋণ পরিশোধ করতে পারব না—এই বাস্তবতা যেন দীর্ঘমেয়াদি না হয়। এটা আমাদের দেশের জন্য ভালো নয়। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরাও শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগ করতে স্বস্তি পাচ্ছেন না।’

সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, চীনের কাছ থেকে অবকাঠামোগত ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। এটা ঠিক, হাম্বানটোটা বন্দর নির্মাণে চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করতে পারেনি দেশটি। সে জন্য এই বন্দরের পরিচালনা চীনের হাতে ছেড়ে দিতে হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে শ্রীলঙ্কার মোট বৈদেশিক ঋণের ১০ শতাংশ চীনের কাছ থেকে নেওয়া। তবে চীনের ঋণের সুদহার অনেক বেশি—৬ শতাংশ। মোট ঋণের ৪৭ শতাংশ শ্রীলঙ্কা পশ্চিমা দেশ ও দাতাদের কাছ থেকে নিয়েছে। এর বড় একটি অংশ সার্বভৌম বন্ডের ঋণ। এই ঋণের মেয়াদ খুবই কম। একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধের চাপ তৈরি হওয়ায় দেশটি বিপাকে পড়ে যায়। দেখা যাক, শ্রীলঙ্কার মোট ঋণের কত শতাংশ কার কাছ থেকে নেওয়া—এডিবি ১৩ শতাংশ, জাপান ১০ শতাংশ, বিশ্বব্যাংক ৯ শতাংশ, ভারত ২ শতাংশ ও অন্যান্য উৎস ৯ শতাংশ।

তবে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় ঋণদাতা হচ্ছে চীন। সে জন্য দেশটিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলি চ্যাঙ বলেন, চীনের ওপরই এখন বড় দায়। এখন আর দেরি করার উপায় নেই। কারণ, শ্রীলঙ্কার হাতে এখন দেরি করার মতো সময় নেই। এদিকে ভারত ও চীন শ্রীলঙ্কার ঋণ মওকুফ করলেও দেশটির সবচেয়ে বড় ঋণদাতা হচ্ছে বিভিন্ন বহুজাতিক আর্থিক কোম্পানি। দেশটির বিদেশি ঋণের ৪০ শতাংশই বেসরকারি কোম্পানির কাছ থেকে নেওয়া।

এই বেসরকারি ঋণদাতাদের সঙ্গেও শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সৎ বিশ্বাসে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর। তাদের মনোভাব ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে রাজি।’ এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিবিদেরা ৮ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার সব বন্ড বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কার সব ঋণদাতার এটা নিশ্চিত করা উচিত যে ঋণ মওকুফ করে তারা দেশটিকে এই সংকট থেকে বেরোতে সাহায্য করবে।’ শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মনে করেন, দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতাদের সঙ্গে এসব মিটে গেলে আইএমএফের ঋণ পেতে চার থেকে ছয় সপ্তাহ লাগবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: